অনিরুদ্ধ চক্রবর্তী
অনিরুদ্ধ চক্রবর্তী ''আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো ২১-এ ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলতে পারি!''
তা গত ২০/২২ বছর তো হবেই। আমি নিয়মিত লক্ষ্য করে চলেছি উত্পলকুমার বসুকে। উত্পলকুমার বসুর লেখালেখিকে। আমাদের চারপাশে, আমাদের চারিপাশে পড়ার মতো বাংলা সাহিত্য প্রতিদিন কতই না রচিত হয়ে চলেছে।
তখনই মনে হয়, ভাষা-আন্দোলন শুধুই কি বাংলা ভাষার জন্য কতগুলি মানুষের আত্মবলিদান? নিজেরও মাতৃভাষা বাংলা বলেই কি আবেগমথিত হয়ে প্রতিবারের মতো ভাষা-পুজোয় ভেসে যাব? আরও একবার? ভুলে যাব, এই ভাষা-আন্দোলন থেকেই একটা দেশ তার প্রতিবাদের ভাষা খুঁজে পেয়েছিল, পেয়েছিল স্বাধীনতার সন্ধান? উনিশশো বাহান্নর একুশে ফেব্রুয়ারি কি সেই ক্ষমতার ভাষা, ডেঞ্জারাস ডিসকোর্সের বিরুদ্ধেও আন্দোলনও নয়? নিছক বর্ণমালার স্বাধীনতা পেরিয়ে মুক্তচিন্তা আর অবাধ গতিবিধির জন্যেও আন্দোলন নয়?
জয়পুরের সাহিত্য সম্মেলনে আসতে পারেননি সলমন রুশদি। তসলিমা নাসরিনের আত্মজীবনী প্রকাশ করেনি কলকাতা বইমেলা কর্তৃপক্ষ। দেশের দুই প্রান্তের এই দুই ঘটনাই আমাদের লজ্জিত করে।
তখনই প্রশ্ন জাগে, রেনেসাঁগর্বিত বাঙালি, আমরা আধুনিক হলাম না এখনও? মেরুকৃত আমরা, ইদানিংকালে রাজনৈতিক ক্ষেত্রে (সঙ্গে সঙ্গে আট মাস বনাম চৌত্রিশ বছরের ব্যালান্সশিট খুলে বসে শতাংশের হিসেবে একে অপরের মুখোমুখি আমরা), অথবা সার্বিকভাবে নারী পুরুষ বিভাজনের ঊর্ধে উঠে সত্যকে বিচার করার মতো প্রতিস্পর্ধী অবস্থানে আসতে পারব না আমরা?
আদালত অন্যায়ের প্রতিকার যদি করে তবে সে তো খুবই ভাল কথা। তার জন্যই তো বিচারব্যবস্থা রয়েছে। কিন্তু আরও ভাল হত যদি অন্যায়টা আদৌ সংঘটিতই না হত। সেটাই কি একটি জনপ্রিয় সরকারের কাজ নয়?
য়াংখেরে স্টেডিয়ামের ভীড়ে ঠাসা কনফারেন্স রুমে একের পর এক প্রশ্ন ছুটে যাচ্ছিল যাঁর দিকে, তিনিও হাসছিলেন। তাঁর পাশে বসা দলনেতাও হাসছিলেন। হাসারই কথা, তাঁরাই তো আরবসাগরের পাড়ে সদ্য হাসির সুনামি এনে দিয়েছেন বিশ্বকাপ জিতে, যে সুনামি আছড়ে পড়ছিল গোটা দেশের ঘরে ঘরে। ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছিল। মাঠের মধ্যের বেপরোয়া মেজাজ সাংবাদিক সম্মেলনে তুলে আনা যুবরাজ সিং ছিলেন সদ্য লড়াই শেষ করা আমেজে।
আমি লিখতে চেয়েছিলাম বেশ কয়েকটি মৃত্যুর কথা। মৃতেরা প্রত্যেকেই আমাদের দেশের সন্তান। ধূপকাঠি বিক্রেতা, স্টেশনের অন্ধ ভিখারি, দৌড়বাজ পার্টনার, রেডিওর জিঙ্গল গায়ক, উড়ালপুলের নীচে ফাই ফরমাশ খাটিয়ে আট বছরের টগর, তাকে লক্ষ্য রাখা মালিক, প্রত্যেকেই যেমন আমাদের দেশের সন্তান।
বিধানসভার অধিবেশন চলাকালীন মোবাইলে অশ্লীল ভিডিও ক্লিপ দেখতে গিয়ে লেন্সের ফাঁদে ধরা পড়লেন কর্নাটকের দুইমন্ত্রী। জড়িয়ে গেল আরও এক মন্ত্রীর নাম। মুখরক্ষা করতে তিনমন্ত্রীকে পত্রপাঠ ইস্তফার নির্দেশ বিজেপির। অন্যদিকে বিরোধী শিবিরের আক্রমণ- সব মিলিয়ে "পর্নগেট' জমজমাট। আর এই ঘটনাই উস্কে দিল বেশ কিছু প্রশ্ন।
কথাটা ছিল 'আশায় বাঁচে চাষা।' কৃষকের আর কিছুই নেই, শুধু আশাই সম্বল। পশ্চিমবঙ্গ সহ সারা দেশে কৃষক এখন সামনে আশারও কিছু দেখতে পাচ্ছেন না, দেনার দায়ে, হতাশায় আত্মঘাতী হচ্ছেন কৃষক।
অফিস ফেরতা মাঝে মাঝে ওর দোকানে চলে যাই। ও চেনে আমায়। গরম চপের সঙ্গে বেশি করে বিটনুন যে আমার চাই, সেই খবরও রাখে। একটু না ভাজা আলুর পুরও রেখে দেয় আমার জন্য। আর সেই শেষ সন্ধেবেলা ওকে ঘিরে ধরে হাটুরে মানুষ। দোকানদার, কম মাইনের কেরানি, রোজের মিস্ত্রি, গ্রামে ফেরার আগে রাতের খাবার খাওয়ার জন্য আসা কাজের মাসি, অটোওয়ালা, চোর, বারবণিতা, আরো কত! কেউ খায় শুধু চপ, কেউ আবার মুড়ি দিয়ে পেঁয়াজ-লঙ্কা মেখে। সঙ্গে চপটাকে ভেঙে মিশিয়ে ফেলে। একটু একটু করে খায়, যাতে তাড়াতাড়ি শেষ না হয়ে যায়। মুখে নিয়ে চিবোয় পরম তৃপ্তিতে।
তার অপেক্ষাতেই ছিল সবাই। অবশেষে সে এল, একেবারে নিঃশ্বব্দেই। কাল কিছুটা অন্যমনস্ক হয়েই আলমারি থেকে বের করে চাপিয়ে নিলাম ফুলহাতা সোয়েটারটা। তারপরেই একটা উষ্ণতার অনুভূতি পেলাম। চমকও ভাঙল তখনই। বুঝলাম শীত এল।
বাংলা নাটক এখনও বড়ই বেহাল। কিছুটা স্বাধীনতা নিয়েই বলা যায়, মধুসূদনে যে বাংলা নাটকের গোড়াপত্তন, রবীন্দ্রনাথের মাধ্যমে যার অগ্রগমন, বাদল সরকারে তার পরিসমাপ্তি। মাঝখানে অল্প কিছু সময় আইপিটিএ এক উজ্জ্বল ব্যতিক্রমী ধারার জন্ম দিয়েছিল বটে, কিন্তু তার পর আবার সেই পুরনো ধারাই ফিরে এল অন্য মোড়কে।
পুলিশের হাতে মাওবাদী নেতা কিষেণজির মৃত্যুর পর ভাবনার জগতে দু ধরনের একদেশদর্শিতা চোখে পড়ছে। তার কারণ কতটা নিছক চিন্তার দৈন্য আর কতটা ইচ্ছাকৃত দ্বিচারিতা, বলা শক্ত।
নিমের ডালপালা ছুঁয়ে তেরচা রোদ এসে পড়েছে ঘরের মেঝেতে। কিছুটা বিছানাতেও মাখামাখি হয়ে কুকুরকুণ্ডলীর মতো পা গুটিয়ে পড়ে আছে। দুপুরবেলা কী একটা অজানা পাখি ডাকছে। সেই ডাক শুনে মা এসে দাঁড়াল জানলায়। জানলার ঠিক বাইরেই অতিকায় ঝাঁকড়া নিমগাছ।
'সব বেটাকে ছেড়ে দিযে বেঁড়ে ব্যাটাকে ধর' হাঁক ছেড়ে উদারপন্থী বাজারকেন্দ্রিক অর্থনীতি প্রয়োগ করার একমাত্র ল্যাবরেটরি হিসাবে সরকারি পরিবহনকে বেছে নিযেছে রাজ্য সরকার। পাঁচটি সরকারি পরিবহন সংস্থাকে বলা হয়েছে তাদের নিজেদের খরচের টাকা রোজগার করতে হবে।