বিপদ সঙ্কেত

জয়পুরের সাহিত্য সম্মেলনে আসতে পারেননি সলমন রুশদি। তসলিমা নাসরিনের আত্মজীবনী প্রকাশ করেনি কলকাতা বইমেলা কর্তৃপক্ষ। দেশের দুই প্রান্তের এই দুই ঘটনাই আমাদের লজ্জিত করে।

Updated By: Feb 17, 2012, 09:34 PM IST

জয়পুরের সাহিত্য সম্মেলনে আসতে পারেননি সলমন রুশদি। তসলিমা নাসরিনের আত্মজীবনী প্রকাশ করেনি কলকাতা বইমেলা কর্তৃপক্ষ। দেশের দুই প্রান্তের এই দুই ঘটনাই আমাদের লজ্জিত করে।

কিন্তু কোনও লজ্জা থেকেই আমরা শিক্ষা নিই না। তাই একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি চলতেই থাকে। এই তো কয়েক বছর আগেই তসলিমা নাসরিনকে কেন্দ্র করে রণক্ষেত্র হয়ে উঠেছিল এই শহর। আর প্রাণ ভয়ে জীবনের শেষ কয়েকটা বছর তো দেশেই ফিরতে পারেননি মকবুল ফিদা হুসেন। আর তখনই আশঙ্কা জাগে,তবে কি বিশ্বের বৃহত্তম গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে গণতন্ত্রই বিপন্ন?

ভয়টা আরও গভীরে।

একশ দশ কোটির দেশে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ঠিক করবে মুষ্টিমেয় কিছু উন্মত্ত মানুষ! সেখানেই আশঙ্কা জাগে, তাহলে কি দেশের অভ্যন্তরের কোনও বিচ্ছিন্ন শক্তিকেই ভয় পাচ্ছে রাষ্ট্র? আর তাদের ভয়ে সিঁটিয়ে আমরা বারবার সলমন রুশদি, মকুবল ফিদা হুসেন, তসলিমা নাসরিনদের তাড়িয়ে যাবো! ধর্মের ধ্বজাধারী বলে পরিচয় দিয়ে যারা একের পর এক ফতোয়া দিয়ে যাচ্ছে, তারা কি সত্যিই সংশ্লিষ্ট ধর্মের প্রতনিধি? মকবুল ফিদা হুসেনকে তাড়িয়ে যে উল্লাস দেখেছিলাম সেটা কি হিন্দু ধর্মের জয়ের ছবি? নাকি রুশদি, তসলিমাকে তাড়াতে উদ্যত ওই মিছিল ইসলামের গৌরব!

না।

দুটোই ধর্মের নামে বহু মানুষের আবেগকে নিয়ে কিছু মানুষের নক্ক্যারজনক কাণ্ড। আশঙ্কার বিষয়, এই বিচ্ছিন্ন শক্তিকে বারবার ভয় পাচ্ছে রাষ্ট্র। তাই কখনও স্যাটানিক ভর্সেস, কখনও বা দ্বিখণ্ডিতকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করতে হয়। তসলিমা নাসরিনের বই প্রকাশ বন্ধ করে দিতে হয়। মকবুল ফিদা হুসেনদের দেশছাড়া করতে হয়। যে অশুভ শক্তিকে সমূলে উত্পাটিত করার কথা, তা না করে, ভয়ে তাদের কাছে বশ্যতা স্বীকার করে চলেছে রাষ্ট্র। এই প্রবণতা এখনই কঠিন হাতে বন্ধ না করতে পারলে আগামী দিনে পরিস্থিতি আরও বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে।

কত ঘটা করে রবীন্দ্রনাথ, বিবেকানন্দের জন্মসার্ধ্ব শতবর্ষ পালন করছি আমরা। শুধু পাড়ায় পাড়ায় রবীন্দ্রসঙ্গীত বাজিয়ে রবীন্দ্রজয়ন্তী করা যেতে পারে, তাতে রবীন্দ্রনাথকে সম্মান জানানো হয় না। তাঁর লিখিত শব্দ যতদিন না আত্মস্থ করব আমরা, যতদিন না জীবন দিয়ে গ্রহণ করব, ততদিন রবীন্দ্রপাঠ ব্যর্থই থেকে যাবে। এই অস্থির সময়ে তাঁকে আজ খুব প্রয়োজন।

যা কিছু অশুভ, যা কিছু অমঙ্গল তার বিনাশ না ঘটাতে পারলে রাষ্ট্র স্বনির্ভর হয় না।

সেজন্যেই কবি বলে গিয়েছিলেন, ক্ষমা যেথা ক্ষীণ দুর্বলতা/ হে রুদ্র, নিষ্ঠুর যেন হতে পারি তথা/ তোমার আদেশে।

আদেশ তো দেওয়াই আছ, সেটা মানলেই তো হয়! কিছু মানুষের ভয়ে নয়, বৃহত্‍ জনগোষ্ঠীর স্বার্থেই তা প্রয়োজন। রাষ্ট্র যত তাড়াতাড়ি তা বুঝবে, ততই মঙ্গল। নচেত্‍ বড় ধরনের বিপদ আসা প্রায় অনিবার্য।

সোমশুভ্র মুখোপাধ্যায়

Tags:
.