নীতির রাজ্যে" পর্নগেট '!

বিধানসভার অধিবেশন চলাকালীন মোবাইলে অশ্লীল ভিডিও ক্লিপ দেখতে গিয়ে লেন্সের ফাঁদে ধরা পড়লেন কর্নাটকের দুইমন্ত্রী। জড়িয়ে গেল আরও এক মন্ত্রীর নাম। মুখরক্ষা করতে তিনমন্ত্রীকে পত্রপাঠ ইস্তফার নির্দেশ বিজেপির। অন্যদিকে বিরোধী শিবিরের আক্রমণ- সব মিলিয়ে "পর্নগেট' জমজমাট। আর এই ঘটনাই উস্কে দিল বেশ কিছু প্রশ্ন।

Updated By: Feb 9, 2012, 09:53 PM IST

বিধানসভার অধিবেশন চলাকালীন মোবাইলে অশ্লীল ভিডিও ক্লিপ দেখতে গিয়ে লেন্সের ফাঁদে ধরা পড়লেন কর্নাটকের দুইমন্ত্রী। জড়িয়ে গেল আরও এক মন্ত্রীর নাম। মুখরক্ষা করতে তিনমন্ত্রীকে পত্রপাঠ ইস্তফার নির্দেশ বিজেপির। অন্যদিকে বিরোধী শিবিরের আক্রমণ- সব মিলিয়ে "পর্নগেট' জমজমাট। আর এই ঘটনাই উস্কে দিল বেশ কিছু প্রশ্ন।

না, রাজনৈতিক নেতা হওয়া মানেই লিবিডো বঙ্গোপসাগরে বিসর্জন দিয়ে পট্টবস্ত্রে ব্রহ্মচর্য পালন করতে হবে এমন কোনও দায় নেই। একজন রাজনীতিক তাঁর যাবতীয় জাগতিক কামনা বাসনাসমেত রক্তমাংসের এক মানুষ। নিজস্ব রুচি অনুযায়ী ব্যক্তিগত পরিসরে নীলছবি দেখা না দেখার অধিকার তাঁর ষোলো আনা রয়েছে।

প্রশ্নটা অন্যত্র। যেখানে তাঁরা আদিম মনোরঞ্জনে মত্ত ছিলেন সেটা বিধানসভা ভবন। গণতান্ত্রিক সমাজে যার পবিত্রতা রামমন্দিরের চেয়ে খুব একটা কম নয়। আর তাঁদের কেন্দ্রের লাখো ভোটার গণতন্ত্রের ঐ পীঠস্থানে তাঁদের পাঠিয়েছেন এলাকার মানুষের চাওয়া পাওয়া, দাবি দাওয়া আইনসভার সামনে তুলে ধরতে। কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ বিতর্ক চলাকালীন অদম্য আগ্রহে মোবাইলে মনোরঞ্জন সেই ভোটারদের প্রতি সুবিচার হল কি? বরং দৃশ্যটি ক্লাসরুমে বয়ঃসন্ধির কৌতুহলে ভূগোল বইয়ের ভাঁজে বটতলার কাহিনী গোগ্রাসে গেলার সঙ্গে তুলনীয়।

এখানেই শেষ নয়। ঘটনাস্থল, কর্নাটক বিধানসভা। দক্ষিণের এই রাজ্য গত কয়েক বছর প্রত্যক্ষ করছে নীতিপুলিসের রমরমা। সৌজন্যে শ্রীরাম সেনার মতো উগ্র বিশুদ্ধবাদী কিছু সংগঠন। নিন্দুকদের মতে যাদের বাড়বাড়ন্তের নেপথ্যে রয়েছে শাসকদলের প্রচ্ছন্ন মদত। ভ্যালেন্টাইনস ডে'র গোলাপেও যাঁরা যৌনতার কাঁটা দেখেন। আরও মজার কথা তিন মন্ত্রীর অন্যতম, নারী ও শিশুকল্যাণ মন্ত্রী সি সি পাটিল মাস দেড়েক আগেই মন্তব্য করেছিলেন শ্লীলতাহানি রুখতে মহিলাদের গা ঢাকা পোশাক পরা উচিত। ঠিকই তো। ভিডিও ক্লিপের চরিত্রেরা গা ঢেকেঢুকে রাখেনি বলেই না এই বিপত্তি!

প্রশ্নটা ঠিক এখানেই। সমাজকে কলুষমুক্ত করতে বিশুদ্ধাচারের ধুয়ো তোলেন যাঁরা তাঁদের এই পদস্খলনকে কী বলা যায়? ঐ মন্ত্রীরা যে রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি তার ছত্রছায়ায় নাকি স্বচ্ছন্দ বোধ করে নীতিপুলিসরা। শিল্পা শেঠির আগমার্কা ভারতীয় কপোলে রিচার্ড গ্যেরের চুম্বনে ছিছিক্কার তোলেন যাঁরা। যুবতীদের গর্ভনিরোধক সম্পর্কে সচেতন থাকা জরুরি, সময়োপযোগী ও বিজ্ঞানসম্মত এই মন্তব্য করে যাঁদের রোষনজরে পড়েন দক্ষিণের এক অভিনেত্রী।

নৈতিকতার ধ্বজাধারীদের এমত মতিভ্রম তাই আশঙ্কা জাগায়, বিশুদ্ধাচারের জগদ্দলের নিচে অজ্ঞাতসারে লালিত হচ্ছে না তো বিকৃতির কৃমিকীট?

একি....একি, ডাঁই হয়ে পড়ে থাকা পুরনো ম্যাগাজিনের স্তূপে ফিদা হুসেনের ছবিতে যেন হালকা হাসির আভাস! কি জানি, চোখের ভুল হয়তো বা!

মৌপিয়া নন্দী

Tags:
.