Tribal Festival: ভেজা বিন্দা উৎসব, গ্রামের বীর নির্বাচিত হবে তীরন্দাজ পরীক্ষায়
গহন অরণ্যের স্বাপদের হাত থেকে প্রাণ বাঁচানোর জন্য অরণ্যচারী আদিবাসী মানুষের হাতে অন্যতম অস্ত্র ছিল তীর ধনুক। এই তীর ধনুকে যে যত পারদর্শী সে তত বড় বীর হিসাবে গণ্য হত। স্থানীয় ভাষায় যে উৎসবের নাম ভেজা বিন্দা উৎসব।
![Tribal Festival: ভেজা বিন্দা উৎসব, গ্রামের বীর নির্বাচিত হবে তীরন্দাজ পরীক্ষায় Tribal Festival: ভেজা বিন্দা উৎসব, গ্রামের বীর নির্বাচিত হবে তীরন্দাজ পরীক্ষায়](https://bengali.cdn.zeenews.com/bengali/sites/default/files/2024/01/16/456044-veja-binda.jpg)
মৃত্যুঞ্জয় দাস: আদিবাসী ক্যালেন্ডার অনুযায়ী বছরের শেষ ও শুরুতেই ভেজা বিন্দা ( তীরন্দাজের পরীক্ষা) উৎসবের মাধ্যমে নির্বাচন করা হয় গ্রামের বীরকে। আদিবাসী ক্যালেন্ডার অনুযায়ী মকর সংক্রান্তির দিন শেষ হয় বছর। আজ থেকে শুরু নতুন বছর। তীরন্দাজী পরীক্ষার মাধ্যমে বছরের শেষ ও শুরুতে গ্রামের শ্রেষ্ঠ বীরকে নির্বাচনের পদ্ধতি শত শত বছর ধরে চলে আসছে আদিবাসী সমাজে। সময়ের বিবর্তনে সেই পদ্ধতি এখন পরিণত হয়েছে আদিবাসী সমাজের বিশেষ একটি উৎসবে। স্থানীয় ভাষায় যে উৎসবের নাম ভেজা বিন্দা উৎসব।
একসময় আদিবাসী মানুষেরা ছিলেন অরণ্যচারী। চাষাবাদের কৌশল সেভাবে রপ্ত করতে না পারায় জঙ্গলের পশু শিকারই ছিল তাঁদের মূল জীবিকা। জঙ্গলের মাঝে মাঝে থাকা ছোট ছোট গ্রামে বসবাসকারী আদিবাসী মানুষের জীবনের প্রতি মূহুর্তে ছিল স্বাপদের হাতে প্রাণ হারানোর আশঙ্কা। গহন অরণ্যের স্বাপদের হাত থেকে প্রাণ বাঁচানোর জন্য অরণ্যচারী আদিবাসী মানুষের হাতে অন্যতম অস্ত্র ছিল তীর ধনুক। এই তীর ধনুকে যে যত পারদর্শী সে তত বড় বীর হিসাবে গণ্য হত।
বছরের শুরুতেই গ্রামের সেই শ্রেষ্ঠ বীর নির্বাচনের প্রক্রিয়া সেরে ফেলতেন গ্রামের মানুষ। না! কোনও নির্বাচন বা মনোনয়ন নয়, তীরন্দাজীর কঠিন পরীক্ষা দিয়ে এই বীরত্বের প্রমাণ দিতে হত ওই বীরকে। আদিবাসীদের তীরন্দাজীতে বীরত্বের এই প্রমাণ দেওয়ার পদ্ধতির নাম ভেজা বিন্দা। মকর সংক্রান্তির বিকালে অথবা পরের দিন সকালে গ্রামের সমস্ত মানুষ জড়ো হতেন গ্রাম লাগোয়া একটি ফাঁকা মাঠে। সেখানে পুজো আর্চা করে আগে থেকেই একটি কলা গাছ বা ভ্যারেন্ডা গাছের ডাল পুঁতে রাখা হয়। নির্দিষ্ট দূরত্ব থেকে সেই কলা গাছ বা ভ্যারেন্ডা গাছের ডালকে তীরের সাহায্যে লক্ষ্যভেদ করাই লক্ষ্য হয় গ্রামের মানুষের।
সার দিয়ে সকলেই চেষ্টা করেন লক্ষ্যভেদের। কেউ লক্ষ্যভেদ করতে পারলেই তাঁর মাথায় চড়ে বীরের পালক। বীরের মাথায় আদিবাসীদের বিশেষ সম্মানের নতুন পাগড়ি পরিয়ে দেন গ্রামের মাঝি বাবা। তারপর সেই বীরকে কাঁধে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় গ্রামের জগ মাঝির ঘরে। সেখানে সেই বীরের পা ধুইয়ে তাঁকে বাড়িতে স্বাগত জানান জগ মাঝির পরিবারের মহিলারা। তারপর তাঁকে খাইয়ে দাইয়ে বিশেষ সম্মান জানানো হয়। তীরন্দাজীর মাধ্যমে নির্বাচিত ওই বীর নতুন বছর ভর বিশেষ সম্মান পান গ্রামে।
অতীতের স্বাপদ সঙ্কুল জীবনযাত্রায় গোটা বছর গ্রাম রক্ষায় নেতৃত্বের ভূমিকা নিতে হত এই বীরকে। শিকারেও নেতৃত্ব দিতে হত বীরকে। সময়ের সাথে সাথে আদিবাসীদের জীবনযাত্রায় বদল হয়েছে। বীরের সেই ভূমিকাও এখন গৌন। কিন্তু তারপরও সংস্কৃতির পরম্পরায় আজও ভেজা বিন্দা রয়েছে আদিবাসী গ্রামগুলিতে। ভেজা বিন্দা রয়ে গেছে নিছকই একটি আদিবাসী উৎসব হিসাবে। আদিবাসীদের দাবী শুধু বীর নির্বাচন করাই এই ভেজা বিন্দার মূল উদ্যেশ্য তাই নয়। শাস্ত্র মতে, বছরভর গ্রামকে নিরাপদ রাখতে ভেজা বিন্দার মধ্য দিয়ে বিনাশ করা হয় অশূভ শক্তির।
(দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির টাটকা খবর, আপডেট এবং ভিডিয়ো পেতে ডাউনলোড-লাইক-ফলো-সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের App, Facebook, Whatsapp Channel, X (Twitter), Youtube, Instagram পেজ-চ্যানেল)