Dasharathi Roy: পাঁচালিগানের সম্রাট তিনি, বর্ধমানের মহারাজও দিয়েছিলেন সম্মান! কিন্তু আজও তাঁর জন্মভিটেয় আগাছার অন্ধকার...
Dasharathi Roy: কৃষ্ণনগরের রাজবাড়ির দুর্গা তাঁর পাঁচালিগান না শুনে বিদায় নিতেন না। র্ধমানের মহারাজা কবিকৃতির স্মারক হিসেবে তাঁকে বিশেষ সম্মান জানিয়েছিলেন। জীবদ্দশায় রাজন্য পৃষ্ঠপোষকতা পেয়েছিলেন। কিন্তু মৃত্যুর পরে? কেমন আছে দাশরথি রায়ের স্মৃতিপট, তাঁর জন্মভিটে, তাঁর ইতিহাস-ঐতিহ্য?
সন্দীপ ঘোষচৌধুরী: 'দোষ কারো নয় গো মা'-- জনপ্রিয় এই শ্যামাসংগীত শুনেছেন সকলেই। কিন্তু এর লেখককে চেনেন? বাঙালি মনে রেখেছে তাঁকে? তিনি দাশরথি রায়। পাঁচালিকার দাশরথি রায়। কী আশ্চর্য, আজও তাঁর বাড়ি পড়ে আছে অবহেলায়। তবে বাংলার শ্রেষ্ঠ পাঁচালিকার দাশরথি রায়ের বসত ভিটেয় সম্প্রতি পালিত হল তাঁর জন্মতিথি। এই উদযাপনে পাঁচালিকার দাশরথি রায়ের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ছিল স্থানীয় সংগীত চর্চাকেন্দ্রের শিল্পীদের একটি দলই।
কাটোয়া মহকুমার বাঁধমুড়া গ্রামে পাঁচালিকারের জন্মভিটের বড় করুণ দশা। প্রখ্যাত এই পাঁচালিকারের পাঁচালিগানকে বাঁচিয়ে রাখতে গ্রামে ঘুরে ঘুরে তাঁর গান গেয়ে বেড়ান স্থানীয় শিল্পীদের দলটি। এদিন তাঁরা দাশরথি রায়ের ভিটেতে পাঁচালি গাইলেনও। শিল্পীর দলের গাওয়া গানের মাধ্যমে দাশরথি রায়ের অনন্য সব সৃষ্টি মানুষ জানতে ও শুনতে পারছেন।
গত আড়াই দশক ধরে এইভাবে চলে আসছে এখানে। দাশরথির জন্মতিথিতে দাশরথির বসত ভিটেয় জনকবির রচিত পাঁচালি গান গেয়ে দাশরথি-তর্পন করে আসছেন তাঁরা গত ২৫ বছর ধরে। শিল্পীর দলটি দাশরথির বংশধরদের সঙ্গে নিয়ে কবির স্মৃতিস্তম্ভের পাদদেশে জনকবিকে শ্রদ্ধা নিবেদনে গানের আসর বসিয়েছিলেন এবার। চরম অবহেলায় পড়ে থাকা জনকবির বসত ভিটেকে অবিলম্বে সরকার সংরক্ষণ করুক-- এই দাবি উঠছে।
১২১২ বঙ্গাব্দের মাঘ মাসে বাঁধমুড়া গ্রামের রায় পরিবারে কবির জন্ম। পাঠশালার সময় থেকেই তাঁর কাব্যপ্রতিভা দেখা গিয়েছিল। শৈশব থেকে দাশরথির কবিগানের প্রতি টান ছিল বলে শোনা যায়। কবিগানের জন্যই পাঠশালার শেষে পড়াশোনাকে ইতি জানিয়ে দাশরথি কবিদলে নাম লেখান। দাশরথির ছড়া, টপ্পা,পয়ার ও ত্রিপদী ছন্দে রচিত কবিতা বাংলা সাহিত্য জগতে সুনাম অর্জন করে। অবিভক্ত বাংলার শ্রেষ্ঠ পাঁচালিকার হিসেবে প্রতিষ্ঠা পান তিনি। ১২৬৩ বঙ্গাব্দে কার্তিক মাসে কবির মৃত্যু।
বাংলা সাহিত্যে অমূল্য সম্পদ দাশরথি রায়ের পাঁচালি। আজও স্নাতক বা স্নাতকোত্তরের পাঠক্রমে দাশরথি রায়ের পাঁচালিকে অবশ্যপাঠ্য হিসেবে পড়তে হয়। কিন্তু পরিতাপের বিষয়, গুণী এই মানুষটির জন্মভিটে আজও চরম অবহেলার শিকার। ভগ্নপ্রায় বসতবাড়ির দেওয়ালের ইটে ক্ষয় ধরেছে। পাকা ঘরের মাথায় অযত্নে বেড়ে উঠেছে আগাছা। জনকবিকে সম্মান জানাতে পঞ্চাশ বছর আগে ১৩৭২ বঙ্গাব্দে বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদের বর্ধমান শাখার পক্ষ থেকে কবির ভিটেয় ২০ ফুটের একটি স্মৃতিতোরণ করা হয়। যদিও এর আগে ১৩২৪ বঙ্গাব্দে বর্ধমানের মহারাজা বিজয়চন্দ মহতাব পাঁচালিকারকে কবিকৃতির স্মারক হিসেবে শ্বেত পাথরের ফলক দিয়ে বিশেষ সম্মান জানিয়েছিলেন। এছাড়া জনকবির ভিটেয় সরকারি দয়া-দাক্ষিণ্যের ছিঁটেফোঁটাও পড়েনি বলে অভিযোগ সংশ্লিষ্ট মহলের।
দাশরথি রায় পুরাণকথা, শাস্ত্রকথা, রামায়ণ, মহাভারতের কাহিনি উপজীব্য করে পাঁচালিগান রচনা করেছিলেন। মঙ্গলসাহিত্যের পর পাঁচালিকে বাংলার মানুষের কাছে জনপ্রিয় করে তুলেছিলেন দাশরথি রায়-ই। কথিত আছে, কৃষ্ণনগরের রাজবাড়ির দেবী দুর্গা দাশরথির পাঁচালি না শুনে বিদায় নিতেন না। জীবদ্দশায় রাজন্য পৃষ্ঠপোষকতা পেলেও মৃত্যুর পর পরিস্থিতি খুবই বিষাদময়। কালের গ্রাসে পড়ে দাশরথির ভিটে ক্রমশ ধ্বংসের প্রহর গুণছে। কবিভিটে ভরে উঠেছে আগাছায়। বাড়ির অবস্থা খুবই সঙ্গিন। এমনকি তাঁর স্মৃতিস্তম্ভেও শ্যাওলা ধরেছে। স্থানীয় মানুষ, স্থানীয় শিল্পীর দল এবং জনকবির উত্তরসূরিদের দাবি, এসব সংরক্ষণ করুক সরকার, নয়তো সব ধংস হয়ে যাবে!
(দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির টাটকা খবর, আপডেট এবং ভিডিয়ো পেতে ডাউনলোড-লাইক-ফলো-সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের App, Facebook, Whatsapp Channel, X (Twitter), Youtube, Instagram পেজ-চ্যানেল)