Birbhum: খাওয়া-ক্যান্সার চিকিৎসার নেই টাকা, দাপুটে 'বিজেপি নেতা' বুলেটের দিন কাটে শ্মশানে ভিক্ষা করে!
দলের জন্য একসময় দিনরাত পরিশ্রম করেছি। পার্টির কর্মী-সমর্থকদের যে কোনো রোগে হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে দেওয়া থেকে তাঁদের জন্য সুলভে ওষুধের ব্যবস্থা করে দিয়েছি।
প্রসেনজিৎ মালাকার: এক সময় দাপিয়ে করেছেন রাজনীতি। আজ তিনি বাটি হাতে দুটো টাকার ভিক্ষা প্রার্থনা করছেন সাধারণ মানুষের কাছে! শুনতে অবাক লাগলেও এটাই সত্যি।এক সময় বঙ্গ বিজেপির স্বাস্থ্য পরিষেবা সেলের তিনি প্রাক্তন প্রতিষ্ঠাতা আহ্বায়ক ছিলেন। প্রসঙ্গত প্রায় দশবছর আগে কংগ্রেস ছেড়ে সেই ইন্দ্রজিৎ সিনহা যাকে সবাই বুলেট নামে চিনতেন তিনি গেরুয়া শিবিরে যোগ দেন। বিজেপি এখন পশ্চিমবঙ্গের প্রধান বিরোধী দল, সেইসময় বিপদে-আপদে রাজ্যের প্রায় সমস্ত সরকারি হাসপাতালে বিজেপি কর্মীদের-সমর্থকদের ভর্তি করিয়ে দেওয়ার কাজ শুরু করেন তিনি।
তৎকালীন রাজ্য সভাপতি রাহুল সিনহার কথা শুনে রাজনীতিতে ঢুকে স্বাস্থ্যক্ষেত্রে বিজেপির উপস্থিতি বৃদ্ধির কাজে সেইসময় রাতদিন পরিশ্রম করেন বুলেট। এরপরেই দলের রাজ্য সভাপতি হন দিলীপ ঘোষ। তাঁর আমলে স্বাস্থ্যভবন পর্যন্ত তাঁর নাম-পরিচিতি ছড়িয়ে পড়ে। রাজ্যে স্বাস্থ্যক্ষেত্রেরই একদা সেই দাপুটে নেতা এই মুহূর্তে দুরারোগ্য ক্যান্সারে ভুগছেন প্রায় দুই বছর ধরে। প্রথমে টিউমার ধরা পরে। তারপর জানতে পারেন তিনি ক্যান্সার রোগে আক্রান্ত। তার চিকিৎসার জন্য হাসপাতাল তো দূরের কথা,তাঁর থাকা-খাওয়ারও কোনো সঠিক ঠিকানা নেই। অবস্থা এতটাই শোচনীয় যে দুইমাস যাবৎ তারাপীঠ মহাশ্মশানে ভিক্ষাবৃত্তি করে অন্নের সংস্থান করতে হচ্ছে তাঁকে! গাছতলায় রাত কাটাতে হচ্ছে বিজেপির রাজ্য কমিটির এই প্রাক্তন আমন্ত্রিত সদস্যকে।
আমরা যোগাযোগ করেছিলাম ইন্দ্রজিৎ বাবুর সঙ্গে। তিনি কাঁদো কাঁদো সুরে আক্ষেপের সঙ্গে বলেন,"দলের জন্য একসময় দিনরাত পরিশ্রম করেছি। পার্টির কর্মী-সমর্থকদের যে কোনো রোগে হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে দেওয়া থেকে তাঁদের জন্য সুলভে ওষুধের ব্যবস্থা করে দিয়ে বহু মানুষের আশীর্বাদ পেয়েছি। কিন্তু দলেরই কিছু নেতা আমাকে ইচ্ছকৃতভাবে কলঙ্কিত করার চক্রান্ত করেছিল। পার্টির কর্মসূচি আয়োজন করতে গিয়ে প্রচুর ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েছিলাম। তাই আজ নিজের চিকিৎসা,এমনকী ভরণপোষণের ব্যয়বহনেরও ক্ষমতা নেই আমার। তাই বাটি হাতে মানুষের কাছে ভিক্ষাবৃত্তি করতে হচ্ছে আমাকে। ইন্দ্রজিতের কথায়,পার্টি এখন অনেক বড় হয়েছে,পশ্চিমবঙ্গের মধ্যে প্রধান বিরোধী দল এখন বিজেপি।রয়েছে অনেক এমপি-এমএলএ কিন্তু আমার মতো হারিয়ে যাওয়া সামান্য কর্মীর কথা ওদের কানে পৌঁছয় না। তারাপীঠের কিছু স্থানীয় মানুষের আশ্রয়ে রয়েছি।"
বর্তমানে তার দেখাশোনা করছেন তারাপীঠের বেশ কয়েকজন বাসিন্দা।তার মধ্যে তারাপীঠ মন্দিরের এক সেবায়েত ও হোটেল মালিক পুলক চট্টোপাধ্যায় বলেন ইন্দ্রজিৎকে প্রায় ভিক্ষা করতে দেখেছি। তবে তাঁকে দেখে ভিক্ষার্থী বলে মনে হচ্ছিল না। তাই তাঁকে ডেকে তাঁর কাছে জানতে চাই। বুলেট পুরো বিষয়টা জানায় এবং তারপরই তাঁর দেখাশোনা আমরা করছি।" জানা যায় ইন্দ্রজিৎ বাবুর বাড়ি কলকাতার বেলেঘাটায়। তাঁর মা বাবা অনেক আগেই মারা গেছেন।তিনি তার সারাটা জীবন রাজনীতির পিছনে দিয়েছেন। তাই বিয়ে সংসার কিছু করেননি।বর্তমানে তারাপীঠ মহা শ্মশানের মানুষজন তাঁর সঙ্গী।
(দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির টাটকা খবর, আপডেট এবং ভিডিয়ো পেতে ডাউনলোড-লাইক-ফলো-সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের App, Facebook, Whatsapp Channel, X (Twitter), Youtube, Instagram পেজ-চ্যানেল)