Exclusive, Jhulan Goswami : মাথায় ঘুরছে মায়ের আত্মত্যাগ, দীপ্তির পাশে দাঁড়িয়েই ঘরে ফিরছেন 'চাকদহ এক্সপ্রেস'
Exclusive, Jhulan Goswami : খেলা শেষ। এখন তিনি 'প্রাক্তন'। এখন তাঁর বাড়ি ফেরার ব্যস্ততা। পুজোর আগে বড় মেয়ে ঘরে ফিরছেন। এমন ভাবে রাজার মতো ফেরার মজাই আলাদা।
সব্যসাচী বাগচী
দেবীপক্ষের শুরু কয়েক ঘন্টা আগেই হয়ে গিয়েছে। হাতে আর কয়েকটা দিন। তারপর দুর্গাপুজোতে মাতবে বঙ্গ সমাজ। তবে এ বারের শারদীয়া অনেকটা আলাদা চাকদহের গোস্বামী পরিবারের কাছে। কারণ সবার প্রিয় 'ঝুলু' সোমবার সকালে কলকাতায় পা রাখছেন। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ঝুলন গোস্বামীর (Jhulan Goswami) সাফল্য সবাই জানে। শেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচে 'চাকদহ এক্সপ্রেস' (Chakdah Express)ও তাঁর প্রমীলাবাহিনীর (Indian Womens Cricket Team) কীর্তিও সবার দেখা হয়ে গিয়েছে। তবুও ওঁকে দেখার সাধ মিটছে না। কারণ ঝুলন যে বিদায়বেলাতেও রাঙিয়ে দিয়ে চলে গিয়েছেন।
খেলা শেষ। এখন তিনি 'প্রাক্তন'। এখন তাঁর বাড়ি ফেরার ব্যস্ততা। পুজোর আগে বড় মেয়ে ঘরে ফিরছেন। এমন ভাবে রাজার মতো ফেরার মজাই আলাদা। ঝুলন, তাঁর পরিবার এবং কাছের মানুষরা প্রতি মুহূর্তে সেই মাহেন্দ্রক্ষণের জন্য তৈরি। ঝুলন তখন হিথরো বিমানবন্দরে। প্লেনে বসবেন। হ্যান্ড ব্যাগ নিয়ে চেক-ইন করার তাড়া। ঠিক এমন সময় তাঁকে ফোনে ধরল জি ২৪ ঘন্টা। একান্ত সাক্ষাৎকারে লর্ডসের (Lords) ভাল-মন্দ স্মৃতি ও বিদায়বেলার অভিজ্ঞতা নিয়ে অকপট জবাব দিলেন কিংবদন্তি বঙ্গতনয়া।
প্রশ্ন: ২০১৭ সালে এই লর্ডস থেকেই কাপ যুদ্ধের ফাইনালে হেরেছিলেন। কেঁদেছিলেন গোটারাত। সেই লর্ডসে স্বপ্নের বিদায়! কেমন অনুভূতি হচ্ছে?
ঝুলন : বিশ্বকাপ ফাইনালের সঙ্গে কোনও ম্যাচের তুলনা হয় না। কারণ আবার বলছি ওটা বিশ্বকাপ ফাইনাল। আর এটা দ্বিপাক্ষিক সিরিজ। তবে এটা ভেবে ভাল লাগছে যে আন্তর্জাতিক কেরিয়ারের শেষ ম্যাচে জয়ী দলের সদস্য হয়ে থাকতে পারলাম। এবং এমন একটা দলকে হারালাম যার নাম ইংল্যান্ড। ব্রিটিশদের ঘরের মাঠে ওদের চুনকাম করার মজা আলাদা। এটা অবশ্যই বড় প্রাপ্তি। সেই জয় লর্ডসে হলে তো প্রাপ্তি অনেকটা বেড়ে যায়। তবে সুখ বলে কিছু হয় না। কারণ বিশ্বকাপ ফাইনালের সঙ্গে আর কোনও প্রতিযোগিতার তুলনা চলে না।
প্রশ্ন: আপনার শেষ সিরিজে সবার মধ্যে একটা মরিয়া ভাব দেখা গেল। তাই না?
ঝুলন : আমরা সব সময় জিততেই চাই। কিন্তু সব সময় ফলাফল তো আমাদের হাতে থাকে না। এ বারের একদিনের সিরিজটা আমরা দারুণ ভাবে শুরু করেছিলাম। এবং তিনটি ম্যাচেই কেউ না কেউ পারফর্ম করেছে। সবার মধ্যে ভাল ফল করে দেখানোর মরিয়া চেষ্টা ছিল। সেই জন্য আমরা সিরিজ জিতে দেশে ফিরছি।
প্রশ্ন : আপনার 'আইডল' সচিন তেন্ডুলকর। ২০১১ সালের বিশ্বকাপ জয়ের পর মাস্টার ব্লাস্টারকে কাঁধে তুলে গোটা ওয়াংখেড়ে ঘুরেছিল টিম ইন্ডিয়া। শনিবার আমরা লর্ডসে তেমন মুহূর্তই দেখলাম। ভেবেছিলেন এতটা সমাদর পাবেন?
ঝুলন : আমি সত্যি ভাগ্যবান। ২০ বছর ধরে দেশকে সেবা করার পর এমন সম্মান পেয়ে আমি আপ্লুত। হরমন, স্মৃতিরা আমাকে কাঁধে তুলে গোটা লর্ডস ঘোরার সময় মনের অবস্থা কেমন ছিল ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না। আমি স্বপ্নেও কল্পনা করতে পারিনি যে আমার ক্রিকেটীয় বিদায় এত সুখের হবে। কেউ এত ভেবে তো বছরের পর বছর ধরে ছুটে যেতে পারে না। হ্যাঁ একটা স্বপ্ন মানুষ দেখতেই পারে। সেই স্বপ্ন পূরণের জন্য পরিশ্রম করতে হবে। কিন্তু পরিশ্রম করলেই যে কাঙ্খিত ফল পাওয়া যে এমন গ্যারান্টি তো কেউ দেয়নি। তাই ভবিষ্যৎ নিয়ে না ভেবে নিজের প্যাশন বজায় রেখে নিষ্ঠার সঙ্গে কাজের কাজ করে যাওয়া। গত ২০-২৫ বছর ধরে আমি এই নীতি নিয়েই ক্রিকেট খেলে গিয়েছি।
প্রশ্ন : আপনি এত বিনয়ী কীভাবে থাকেন?
ঝুলন : পারিবারিক শিক্ষা ও ছোটবেলা থেকে লড়াই আমাকে বিনয়ী করে তুলেছে। তাছাড়া ক্রিকেটের জন্য সমাজের সবস্তরের মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে। বিভিন্ন মানুষের কাছ থেকে অনেক কিছু শিখেছি। শিখেছি মাটিতে পা রেখে কীভাবে এগিয়ে যেতে হয়।
আরও পড়ুন: Jhulan Goswami : বিদায়ের ম্যাচে ভারতের কোন তারকা পেসারের রেকর্ড ভাঙলেন 'চাকদহ এক্সপ্রেস'?
প্রশ্ন : ম্যাচের শেষে আপনি কেঁদেছিলেন?
ঝুলন : কেন কাঁদব না! আমি ক্যামেরার সামনে কাঁদতে পারি না। তাই আমার কান্নার ভিডিয়ো কারও কাছে নেই। তবে খেলা শেষ হওয়ার পর সাজঘরে গিয়ে কেঁদে ফেলেছিলাম। সতীর্থদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখতে গিয়ে বেশ কয়েকবার চোখে জল চলে এসেছিল। আর কেঁদে ফেলা তো খুবই স্বাভাবিক। কারণ গত ২০ বছরে আমি চাকদহ কিংবা কলকাতার বাড়ির পরিবর্তে দলের বোনদের সঙ্গে বেশি সময় কাটিয়েছি।
প্রশ্ন: আপনার শেষ ম্যাচ তো রেণুকা সিং মাতিয়ে দিয়ে চলে গেলেন। কতটা উচ্ছ্বসিত রেণুকাকে নিয়ে?
ঝুলন : গত দুই-আড়াই বছর ধরে রেণুকা ধারাবাহিক ভাবে পারফর্ম করে আসছে। ও কিন্তু সারাদিন একাধিক স্পেলে একই লাইন লেন্থ বজায় রেখে বল করে যেতে পারে। আউট সুইং তো ওর হাতে আগে থেকেই ছিল। গত কয়েক মাস ধরে ইন সুইং দারুণ ভাবে রপ্ত করেছে। কমনওয়েলথ গেমসেও কিন্তু রেণুকার পারফরম্যান্স বেশ ভাল ছিল। এই সিরিজেও ভাল বল করল। আসলে হিমাচলের মেয়ে বলে ওর ফিটনেস এবং লড়াই করার মানসিকতা রয়েছে। এবং সেটা শিক্ষণীয়। মিলিয়ে নেবেন রেণুকা ভারতের হয়ে সব ফরম্যাটে অনেক ম্যাচ খেলবে।
প্রশ্ন: মাত্র ১৬৯ রানের পুঁজি নিয়ে ম্যাচ জয়ের রহস্য কী?
ঝুলন : এই উইকেটে রান তোলা কিন্তু সহজ নয়। পিচে একটা আলাদা স্পাঞ্জি বাউন্স ছিল। টেনিস বলে খেলা হলে যেমন উইকেট হয়ে থাকে আর কি। এই পিচে বাইরের দিকে বল করে লাভ ছিল না। এতে ব্যাটার অনেকটা সময় পেত। সেইজন্য আমরা স্টাম্প টু স্টাম্প বল করে যাচ্ছিলাম। সবাই সেই লাইন-লেন্থ বজায় রেখেছি বলেই মাত্র ১৬৯ রান হাতে নিয়েও ম্যাচ জিতলাম।
Thank you everyone @BCCI @BCCIWomen pic.twitter.com/8TWq8SfxDj
— Jhulan Goswami (@JhulanG10) September 25, 2022
প্রশ্ন : প্রথম স্লিপে দাঁড়িয়ে সোফি একলেস্টোনের ক্যাচ নেওয়ার ধরন দেখে অনেকে মার্ক ওয়া, ম্যাথুই হেডেনের কথা বলছিলেন। ৪০ বছরেও এমন ফিটনেসের রহস্য কী? ভারতীয় ক্রিকেটে তো এই ক্যাচটা ট্রেডমার্ক হয়ে যাওয়া উচিত।
ঝুলন : সে আমি জানি না। আমার কাজ আমি করেছি। বাকিটা গোটা ক্রিকেট দুনিয়া দেখেছে। আসলে আমি স্লিপে ফিল্ডিং করতে খুব ভালবাসি। ছোটবেলা থেকে স্লিপেই সবচেয়ে বেশি সময় কাটিয়েছি। রোজ ঘণ্টার পর ঘণ্টা স্লিপে ক্যাচিং প্রাকটিস করে গিয়েছি। এই ম্যাচে নামার আগেও সেই অনুশীলন করেছি। কেরিয়ারের শেষ ম্যাচে এমন একটা কঠিন ক্যাচ ধরতে পারলাম। সেটা ভেবে ভালই লাগছে। দীপ্তি বলে আরও একটা ধরার সুযোগ এসে গিয়েছিল। ওটা ধরতে পারলে আনন্দ দ্বিগুণ হত।
প্রশ্ন : আপনার মতোই লর্ডস মাতিয়ে দিলেন দীপ্তি শর্মা। হরমনপ্রীত কৌর ওঁর পাশে দাঁড়িয়েছেন। আপনার বক্তব্য?
ঝুলন : দলের অধিনায়কের বক্তব্যকে পূর্ণ সমর্থন করছি। তাছাড়া সেই রান আউট নিয়ে কেন এত কথা হচ্ছে? মাথায় আসছে না। দীপ্তি তো ক্রিকেটের নিয়মের বাইরে কিছু করেনি। তাহলে এত বিতর্ক কিসের!
প্রশ্ন: শনিবার লর্ডসে কাটানো প্রায় ১০-১২ ঘন্টা জীবনের সেরা মুহূর্ত হয়ে থাকবে?
ঝুলন : বিসিসিআই-এর থেকে বিশেষ স্মারক পেলাম। নিজের দল ও বিপক্ষের কাছ থেকে 'গার্ড অফ অনার' পেলাম। ইংল্যান্ড দল তাদের সই করা জার্সি উপহার দিল। গ্যালারি ভর্তি মানুষ দলের জন্য গলা ফাটালো। একজন পারফর্মারের কাছে আর কি চাই। এই স্মৃতিগুলো আজীবন নিজের কাছেই থেকে যাবে। ২০০২ সালে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে টেস্ট অভিষেক থেকে একই বিপক্ষের বিরুদ্ধে কেরিয়ারের শেষ ম্যাচ খেলা, অবশ্যই সেরা তৃপ্তি।
প্রশ্ন: বিদায়ী ম্যাচে ৩০ রানে ২ উইকেট। শেষ বলটা পিচ করার সময় কেমন অনুভূতি হচ্ছিল?
ঝুলন : শুধু ভাবছিলাম এরপর আর বোলিং করতে পারব না। সেটা ভেবে সত্যি খুব খারাপ লাগছিল। তবে বল করার পর আর ভাবিনি। একটু হেসে সবার দিকে এগিয়ে গেলাম। ব্যস আর কি!
প্রশ্ন : আপনার মা ঝর্না গোস্বামী আপনার অপেক্ষায় বসে আছেন। এ বার থেকে তো মা-কে অনেকটা সময় দিতে পারবেন।
ঝুলন : আমার কেরিয়ারে জন্য মায়ের প্রচুর স্যাক্রিফাইস রয়েছে। এখন থেকে অনেকটা সময় হাতে পাওয়া যাবে। মা-কে অনেকটা সময় দিতে পারব। আর কয়েক ঘণ্টা পরেই কলকাতা ফিরছি। বাড়ি ফিরেই কাতলা মাছের ঝোল ও ভাত খাব।