মাথায় ১৫-১৬টা সেলাই, হাতে প্লাস্টার, কেমন আছেন ঐশী ঘোষ?
রবিবার দুপুর আড়েইটা নাগাদ ‘অশনি সঙ্কেত’ মিলেছিল। এবং তত্ক্ষণাত্ দিল্লি পুলিসকে মেসেজ করে অনাহুত বিপদ কথা জানান জেএনইউ-র ছাত্র সংসদের সভানেত্রী ঐশী ঘোষ। কিন্তু বিপদ এড়ানো যায়নি। পুলিস যখন আসে, জেএনইউ-র ক্যাম্পাসে তখন যেন ‘আয়লা’ বয়ে গিয়েছে।
নিজস্ব প্রতিবেদন: রবিবার দুপুর আড়েইটা নাগাদ ‘অশনি সঙ্কেত’ মিলেছিল। এবং তত্ক্ষণাত্ দিল্লি পুলিসকে মেসেজ করে অনাহুত বিপদের কথা জানান জেএনইউ-র ছাত্র সংসদের সভানেত্রী ঐশী ঘোষ। কিন্তু বিপদ এড়ানো যায়নি। পুলিস যখন আসে, জেএনইউ-র ক্যাম্পাসে তখন যেন ‘আয়লা’ বয়ে গিয়েছে।
মুখোশধারী দুষ্কৃতীদের হামলায় ঐশী-সহ একাধিক পড়ুয়া গুরুতর জখম। বাদ পড়েননি বিশ্ববিদ্যালয়য়ের শিক্ষক-শিক্ষিকারাও। এখন কেমন আছেন ঐশী? সংবাদ মাধ্যমকে তিনি জানিয়েছেন, মাথায় এবং হাতে ব্যাথ্যা রয়েছে। ১৫-১৬টা সেলাই পড়েছে মাথায়। ঐশীর দাবি, লোহার রড দিয়ে যেভাবে আঘাত করা হয়েছে, গভীর ক্ষত তৈরি হয় মাথায়। রক্ত ঝরে প্রচুর। হাতেও গুরুতর চোট লেগেছে। তবে, ঐশী এখন বিপন্মুক্ত বলেই জানা গিয়েছে।
ঐশী জানিয়েছেন, কিছু মুখোশধারী দুষ্কৃতী অতর্কিতে হামলা চালায়। কিছু বোঝার আগে এ সব ঘটনা ঘটে গিয়েছে। কিন্তু তার আগে বিপদের আশঙ্কা করা গিয়েছিল। তাঁর দাবি, পুলিসকে সে খবর জানানো হয়েছিল। কিন্তু পুলিস কোনও পদক্ষেপ করেনি। এবিভিপি-র বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে ঐশী বলেন, জেএনইউ-র এ ধরনের সংস্কৃতি নয়। আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করা যেতে পারতো। কিন্তু ক্যাম্পাসের ভিতর বাইরের লোক কীভাবে ঢোকে? কীভাবে রড-সহ অন্যান্য অস্ত্র নিয়ে প্রবেশ করে দুষ্কৃতীরা, প্রশ্ন তোলেন ঐশী।
আরও পড়ুন- JNU হামলায় তীব্র নিন্দায় সরব শাসক থেকে বিরোধী, জেনে নিন কে কী বললেন?
এ ঘটনায় উপাচার্য এম জগদেশ কুমারের ভূমিকার তীব্র নিন্দা করেন ঐশী। বলেন, হোয়াটসঅ্যাপে ঘুরে বেড়াচ্ছে উপাচার্য দুষ্ক়তীদের মদত দিচ্ছেন। এটা স্পষ্ট এই পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে ব্যর্থ উপাচার্য। নিজের দায় স্বীকার করে তাঁর ইস্তফা দেওয়া উচিত। জেএনইউ-র হামলার তীব্র নিন্দা করেন উপাচার্য এম জগদেশ কুমার। পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মনে করিয়ে দেন, এই ঘটনা বিক্ষোভকারী পড়ুয়াদের কৃতকর্মেরই ফল। গতকালের ঘটনার নিন্দা করে একের পর এক টুইট করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এম জগদেশ কুমার। তিনি জানান, জেএনইউ ক্যাম্পাসে এ ধরনে ঘটনা নিন্দাজনক। আহত ছাত্র-ছাত্রীদের প্রতি তাঁর সমবেদনা রয়েছে। পড়ুয়াদের নিরাপত্তার জন্য যাবতীয় পদক্ষেপ করা হবে বলে আশ্বাস দেন তিনি। কিন্তু যাঁরা বিশ্ববিদ্যালয়ে কাজকর্মের সহযোগিতা করছেন, তাদের পাশেই কর্তৃপক্ষ থাকবেন বলে স্পষ্ট জানিয়ে দেন উপাচার্য।
জগদেশ কুমারের দাবি, কিছু বিক্ষোভকারী পড়ুয়া হিংসা ছড়িয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজে বাধা সৃষ্টি করছে। পরীক্ষার জন্য নাম নথিভুক্তকরণে ইচ্ছুক পড়ুয়াদেরও বাধা দেওয়া হচ্ছে। এ সব কারণেই এই বর্তমান পরিস্থিতি। জেএনইউ-র ঐতিহ্য বিরোধী এবং গুন্ডাগিরি চলছে। উপাচার্য জানিয়েছেন, এ ধরনের আচরণ বরদাস্ত করা হবে না। দোষীরা শাস্তি পাবেই।
আরও পড়ুন- বাম, কংগ্রেস-আপের ‘ইন্ধনেই’ বিশ্ববিদ্যালয়ে হিংসা হচ্ছে, পাল্টা তোপ জাভড়েকরের
জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয় ‘গুন্ডাদের আখড়া’ হয়ে দাঁড়িয়েছে, জেএনইউ হামলাকে বিজেপিও এভাবেই ব্যাখ্যা করছে। কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী প্রকাশ জাভড়েকর এ ঘটনার তীব্র নিন্দা করেন। তবে, কংগ্রেস, বাম এবং আপকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে জাভড়েকরের দাবি, দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে হিংসার পরিবেশ তৈরি করেছে বিরোধী দলগুলিই। বিরোধীদের অভিযোগ দিল্লির নির্বাচনকে মাথায় রেখে ‘অপপ্রচার’ চালাচ্ছে শাসক দল।
গতকাল রাতের অন্ধকারে JNU ক্যাম্পাসে হামলা চালায় মুখোশধারী কিছু দুষ্কৃতী। হস্টেলে ঢুকে ভাঙচুর চালানো হয়। মাথা ফাটে স্টুডেন্টস্ ইউনিয়নের সভানেত্রী ঐশী ঘোষের। হামলায় জখম অধ্যাপক সুচরিতা সেন। ABVP-র বিরুদ্ধে বহিরাগতদের নিয়ে হামলার অভিযোগ। অভিযোগ অস্বীকার করেছে ABVP।
সবরমতী হস্টেল, মাহি মান্ডভি হস্টেল ও পেরিয়ার হস্টেলে হামলা চালানো হয় বলে অভিযোগ। লাঠি, রড দিয়ে আন্দোলনকারী পড়ুয়াদের পেটানো হয়। হস্টেল ফি বৃদ্ধির প্রতিবাদে বিক্ষোভ কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছিলেন বাম ছাত্র যুবরা। SFI শিবিরের অভিযোগ, মাফলার, আর মুখোশে মুখ ঢেকে ABVP-র গুন্ডারা হস্টেলে ঢুকে পড়ে। তাদের কারো হাতে ছিল লাঠি, কারো হাতে রড, কারো হাতে আবার হাতুড়ি। আতঙ্কে হুড়োহুড়ি শুরু হয়ে যায়। তার মধ্যেই চলতে থাকে মার।
SFI স্টুডেন্টস্ ইউনিয়নের তরফে টুইট করে দাবি করা হয়েছে, সবরমতী হস্টেল লক্ষ করে প্রথমে পাথর ছোড়া শুরু হয়। তারপর হস্টেলে তাণ্ডব চালানো হয়। হামলাকারীরা পাইপ বেয়ে পেরিয়ার হস্টেলের ভিতরে ঢোকার চেষ্টা করে বলেও অভিযোগ। যদিও RSS এর ছাত্র সংগঠনের দাবি, বামপন্থীদের নাগরিক আন্দোলন গতি হারানোতেই শিরোনামে আসতে এমন কাণ্ড ঘটানো হয়েছে।