GautamaBuddha: অমিতাভ! হিম-নির্ঝরিণীর শীকর-নিষিক্ত মৈত্রেয় আজ কোথায়?
GautamaBuddha: আনুমানিক ৫৬৭ খ্রিস্টপূর্বাব্দে কপিলাবস্তুর শাসক শাক্যবংশীয় শুদ্ধোদনের পুত্ররূপে মায়াদেবীর গর্ভে জন্মেছিলেন। ভাগ্যগণনা ছিল-- এই ছেলে সংসারে থাকলে রাজচক্রবর্তী হবে, গৃহত্যাগী হলে হবে মানুষের পরিত্রাতা। দ্বিতীয়টিই সত্য হয়ে উঠল তাঁর জীবনে।
Updated By: May 5, 2023, 12:31 AM IST
সৌমিত্র সেন
শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়ের 'অমিতাভ' গল্পে আছে বৌদ্ধদের সম্বন্ধে মহামন্ত্রী বর্ষকারের কাছ থেকে সতর্কতামূলক বার্তা পেয়েছিলেন দুর্গ বানাতে চলা রাজভাস্কর শ্রেণিনায়ক পুণ্ডরীক। কিন্তু যেদিন সহসা বুদ্ধকে দেখলেন তিনি, সেদিন, মৈত্রেয়র পরিচয় বিন্দুমাত্র না জেনেও তাঁর প্রতি গভীর ভাবে আকৃষ্ট হচ্ছিলেন। দিব্যজ্যোতিললিত অপূর্ব কান্তিময় সেই বৃদ্ধ সন্ন্যাসীকে দেখে তাঁর মনে হয়েছিল-- ''দেবতার মুখে যে জ্যোতির্মণ্ডল কল্পনা করিয়াছি, আজ এই বৃদ্ধের মুখে তাহা প্রথম প্রত্যক্ষ করিলাম। .... চক্ষুর মধ্যে দৃষ্টিপাত করিলেই মনে হয়, ভিতরে অমিতদ্যুতি স্থির-সৌদামিনী জ্বলিতেছে, কিন্তু সে সৌদামিনীতে জ্বালা নাই, তাহা অতি স্নিগ্ধ, অতি শীতল, যেন হিম-নির্ঝরিণীর শীকর-নিষিক্ত।''
এহেন গৌতম আনুমানিক ৫৬৭ খ্রিস্টপূর্বাব্দে কপিলাবস্তুর শাসক শাক্যবংশীয় শুদ্ধোদনের পুত্ররূপে মায়াদেবীর গর্ভে জন্মেছিলেন। সুদীর্ঘ অপেক্ষার পরে রাজার পুত্রলাভের আকাঙ্ক্ষা সিদ্ধ হওয়ায় সদ্যোজাতের নাম রাখা হয়েছিল-- সিদ্ধার্থ। জন্মের সাত দিনের মধ্যে মাতৃহারা হয়ে বিমাতা গৌতমীর কাছে পালিত হওয়ায় তিনি গৌতম। ভাগ্যগণনা ছিল-- এই ছেলে সংসারে থাকলে রাজচক্রবর্তী হবে, গৃহত্যাগী হলে হবে মানুষের পরিত্রাতা। এদিকে পুত্রের গৃহত্যাগের আশঙ্কায় সদাত্রস্ত পিতা শাক্যবংশেরই এক কন্যা গোপা বা যশোধরার সঙ্গে সিদ্ধার্থের বিয়ে দিয়ে দিলেন। কিন্তু যেন নিয়তির নির্দেশেই রাজকুমার একদিন তাঁর ভ্রমণপথে জরা, ব্যাধি ও মৃত্যুদৃশ্য দেখলেন। এ সংসারে দুঃখের অস্তিত্ব বিষয়ে গভীর ভাবে সচেতন হলেন তিনি। এদিকে গৃহত্যাগী এক সন্ন্যাসীর প্রশান্ত মুখাবয়বে তিনি যেন দুঃখ-বিনাশের উপায়ও জানলেন। ব্যস! তাঁর জীবনের গতিপথ যেন নির্দিষ্ট হয়ে গেল। এক রাতে স্ত্রী যশোধরা ও পুত্র রাহুলকে ঘুমন্ত অবস্থায় রেখে রাজপ্রাসাদ ত্যাগ করলেন সিদ্ধার্থ। ঘটল মহানিষ্ক্রমণ। তখন সিদ্ধার্থের বয়স ঊনত্রিশ। পঁয়ত্রিশ বছর বয়সে বোধিপ্রাপ্ত হয়ে বুদ্ধ হলেন। বোধিজ্ঞান লাভের পরে সারনাথে দাঁড়িয়ে পাঁচ শিষ্যকে বলেছিলেন-- 'যাও, মানুষের দুঃখ দূর করতে তোমরা চারদিকে ছড়িয়ে পড়ো।'
তারপর ৪৫টি বছরের বিপুল কর্মবহুল জীবন। একটিই জীবন, কিন্তু যেন বহু মহাকাব্যের জীবন্ত মূর্তি। একেবারে অন্তিম দিনে পাবা গ্রামে চুন্দ কর্মকারের বাড়িতে তৃপ্তি সহকারে শুয়োরের মাংস খেয়েছিলেন। তার পর থেকেই শরীরটা খারাপ লাগছিল। রাতের দিকে পেটে অসহ্য যন্ত্রণা, গায়ে জ্বর। কুশীনগর পর্যন্তও আসতে পারছিলেন না সেদিন। শেষে হিরণাবতী নদীর তীরে গাছের নীচে বুদ্ধ বসে পড়েছিলেন আশি বছরের অশক্ত শরীর নিয়ে। শিষ্য আনন্দ জল নিয়ে এলেন। তাঁকে বললেন-- রাতে সুগত মহাপরিনির্বাণে যাবেন! আনন্দ স্তম্ভিত! সে কি! আজই, এখনই, এবং এখানে? কুশীনগরের এই সামান্য শালবনে ভগবান বুদ্ধের অন্তিমযাত্রা! সে কি হতে পারে? কিন্তু তাই তো হল! সামান্যের মধ্যে অসামান্যের উদযাপন। বৌদ্ধশাস্ত্র বলে, বুদ্ধ ফিরে আসবেন মৈত্রেয় হয়ে!
ফিরবেন অমিতাভ? তাঁর সেই অমিতদ্যুতি স্থির-সৌদামিনী নিয়ে ফিরবেন মৈত্রেয় এই হিংসাজর্জর, যুদ্ধগর্বিত, রক্তপিচ্ছিল পৃথিবীতে? আধুনিক সভ্যতার এই প্রগাঢ় অন্ধকারে ফিরবেন তথাগত তাঁর সেই হিম-নির্ঝরিণীর শীকর-নিষিক্ত দিব্য জ্যোতি নিয়ে?