অনুষ্ঠান নয়, বাংলা চায় `বাস্তব` রেল বাজেটে
অর্থ সঙ্কটে ধুঁকছে ভারতীয় রেল। তার সঙ্গে যোগ হয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আমলে রেলের বিভিন্ন অনুষ্ঠানের বিপুল খরচের বোঝা। জাকজমকপূর্ণ সেই সব অনুষ্ঠানে খরচের বহর দেখে বর্তমান মন্ত্রী থেকে রেল বোর্ডের কর্তাদের চক্ষু চড়কগাছ।
অর্থ সঙ্কটে ধুঁকছে ভারতীয় রেল। তার সঙ্গে যোগ হয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আমলে রেলের বিভিন্ন অনুষ্ঠানের বিপুল খরচের বোঝা। জাকজমকপূর্ণ সেই সব অনুষ্ঠানে খরচের বহর দেখে বর্তমান মন্ত্রী থেকে রেল বোর্ডের কর্তাদের চক্ষু চড়কগাছ।
শিল্যান্যাস কিংবা নিত্যনতুন ট্রেন বা অন্য কোনও প্রকল্পের উদ্বোধন। রেলমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সময়ে এ ছিল নিত্যদিনের ঘটনা। তা নিয়ে বাড়তি খরচের অভিযোগও উঠেছে বিস্তর। পূর্ব রেলের হিসেবে চোখ রাখলে দেখা যাচ্ছে আমি ও ওরার ফারাক। যেমন ২০০৯-১০ আর্থিক বছরে রেলের ১৬টি শিলান্যাস বা উদ্বোধন অনুষ্ঠানে খরচ হয় মাত্র ৮ লক্ষ ২৯ হাজার ২০৯ টাকা। কিন্তু অন্য ২৪টি অনুষ্ঠানে খরচ হয়েছে ৯৫ লক্ষ ৮৬ হাজার ৪৬৭ টাকা। ষোলটি অনুষ্ঠানে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হাজির ছিলেন না। তিনি ছিলেন অন্য ২৪টি অনুষ্ঠানে।
পরের বছর অর্থাত ১০-১১ রেলমন্ত্রীর উপস্থিতিতে ২৮টি অনুষ্ঠানে খরচ হয় ১ কোটি ৫৫ লক্ষ ৫২ হাজার ৬৫৭ টাকা। আর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনুপস্থিতিতে হওয়া ২৭টি অনুষ্ঠানে মোট খরচ হয় ৪২ লক্ষ ৩৪ হাজার ৯৫৯ টাকা। ২০১০-এর ৯ মে হাওড়ায় রবীন্দ্র জন্ম সার্ধ শতবর্ষের অনুষ্ঠানেই খরচ হয়েছে ১৫ লক্ষ ২০ হাজার টাকা। ওই টাকার বেশির ভাগটাই খরচ হয়েছে পরিবর্তনপন্থী বিভিন্ন শিল্পীদের পারিশ্রমিক বাবদ।
দীনেশ ত্রিবেদী রেলমন্ত্রী হওয়ার পরেও বাড়তি খরচের হাত থেকে রেহাই পায়নি রেল। সে সময় রেলমন্ত্রীর উপস্থিতিতে হওয়া ৮টি অনুষ্ঠানে খরচ হয় ৪৫ লক্ষ ৯ হাজার ১৯৬ টাকা। পরবর্তীতে মুকুল রায়ের জমানায় অনুষ্ঠানের খরচ একধাক্কায় আরও অনেকটা বেড়ে যায়। ১১-১২ আর্থিক বছরে ৯টি অনুষ্ঠানে মোট খরচ হয় ৫৮ লাখ ১৬০ টাকা। তারমধ্যে চারটি অনুষ্ঠানেই হাজির ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
রেলের অনুষ্ঠানের খরচ যে চাইলেই নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়, তার নিদর্শনও আছে। হিসেব বলছে, অধীর চৌধুরী রেল প্রতিমন্ত্রী হওয়ার পরে এরাজ্যে রেলের আটটি অনুষ্ঠানে মোট খরচ হয়েছে মাত্র ২লক্ষ টাকা। প্রতিটি অনুষ্ঠানে খরচ হয়েছে মাত্র ২৫ হাজার টাকা করে।
গত কয়েক বছর ধরে বারবারই রেলের আর্থিক ভাড়ারে টানের প্রসঙ্গ এসেছে আলোচনায়। সতর্ক করেছে রেলবোর্ডও। তবু পরিকাঠামো উন্নয়ন বা যাত্রী সুরক্ষাকে শিকেয় তুলে নতুন নতুন ট্রেন ও প্রকল্পের ঘোষণা করে গিয়েছেন রেলমন্ত্রীরা। নিঃসন্দেহে যার শীর্ষে থাকছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম। তাঁর আমলেই অনুষ্ঠান বাবদ বাড়তি খরচের বোঝা চেপেছে রেলের কাঁধে। নিয়ম অনুযায়ী পূর্ব রেলে সারা বছরে অনুষ্ঠান বাবদ খরচ হওয়ার কথা সর্বোচ্চ ২০ লক্ষ টাকা। কিন্তু সে খরচ এক কোটি ছাড়িয়ে দেড় কোটির কাছাকাছিও পৌঁছে গিয়েছে। তার অনেকগুলি এখনও রেল বোর্ডের অনুমোদনের অপেক্ষায়। বিরোধীদের অভিযোগ, রেলের অনুষ্ঠানকে জাঁকজমকপূর্ণ করে রাজনৈতিক ফায়দা তুলতে চেয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রেলের কাছে যা পরিণত হয়েছে মরার উপর খাঁড়ার ঘায়ে।