হলদিয়া কাণ্ডে সিঙ্গুরের ছায়া, শিল্পবান্ধব ভাবমূর্তিতে জোর ধাক্কা
হলদিয়ার এবিজির শীর্ষ তিন কর্তার অপহরণের অভিযোগ সামনে আসার পর যেন টাটাদের সিঙ্গুর ছেড়ে যাওয়ার ঘটনারই পুনরাবৃত্তির সিঁদুরে মেঘ দেখছে বাণিজ্যমহল। তাঁদের মতে, এবিজি হলদিয়া ছেড়ে চলে গেলে ধাক্কা খাবে রাজ্যের আমদানি-রফতানি বাণিজ্য। ধাক্কা খাবে রাজ্যের শিল্প-বান্ধব ভাবমূর্তি। টাটা গোষ্ঠীর কর্ণধার রতন টাটার এই ঘোষণার পর সেদিন সিঙ্গুর থেকে প্রকল্প সরিয়ে নেয় টাটা মোটর্স। ন্যানো কারখানা চলে যায় গুজরাটের সানন্দে। হলদিয়া থেকে মেরেই তাড়ানো হল এবিজিকে
হলদিয়ার এবিজির শীর্ষ তিন কর্তার অপহরণের অভিযোগ সামনে আসার পর যেন টাটাদের সিঙ্গুর ছেড়ে যাওয়ার ঘটনারই পুনরাবৃত্তির সিঁদুরে মেঘ দেখছে বাণিজ্যমহল। হলদিয়া থেকে মেরেই তাড়ানো হল এবিজিকে। তাঁদের মতে, এবিজি হলদিয়া ছেড়ে চলে গেলে ধাক্কা খাবে রাজ্যের আমদানি-রফতানি বাণিজ্য। ধাক্কা খাবে রাজ্যের শিল্প-বান্ধব ভাবমূর্তি।
টাটা গোষ্ঠীর কর্ণধার রতন টাটার এই ঘোষণার পর সেদিন সিঙ্গুর থেকে প্রকল্প সরিয়ে নেয় টাটা মোটর্স। ন্যানো কারখানা চলে যায় গুজরাটের সানন্দে। বিরোধীদের টানা আন্দোলন, সংস্থার কর্মী-আধিকারিকদের কাজে যোগ দিতে বাধা, তাঁদের মারধরের পর সিঙ্গুর থেকে প্রকল্প সরিয়ে নেয় টাটা মোটর্স।
এরপর কেটে গেছে অনেকটা সময়। সেদিনের বিরোধী দল তৃণমূল কংগ্রেসই এখন রাজ্য-শাসনের দায়িত্বে। এবার হলদিয়া বন্দরে কর্মরত এবিজি গ্রুপের তিন কর্তাকে অপহরণের অভিযোগ উঠল।
গত কয়েক দিন ধরেই ছাঁটাই হওয়া কর্মীদের কাজে ফেরানোর দাবিতে এবিজি গ্রুপের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে চলেছিল তৃণমূল কংগ্রেসের শ্রমিক সংগঠন আইএনটিটিইউসি। সংস্থার কাজে বাধা দেওয়ারও অভিযোগ উঠছিল। কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হলে হলদিয়ার দু`নম্বর এবং আট নম্বর বার্থে পণ্য খালাসের দায়িত্বে থাকা এবিজি সংস্থা যাতে নির্বিঘ্নে কাজ করতে পারে, তার জন্য গত ১৯ অক্টোবর রাজ্যকে উদ্যোগী হওয়ার নির্দেশ দেয় কলকাতা হাইকোর্ট। কিন্তু তাতেও কাজ হয়নি। আইএনটিটিইউসির দাপট চলছিলই। এমনকী এবিজির কর্মরত শ্রমিকদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে হুমকি দেওয়ার অভিযোগও ওঠে এই শ্রমিক সংগঠনের বিরুদ্ধে। শেষ পর্যন্ত প্রায় ১৭.৫ লক্ষ টাকা খরচ করে পুলিসি নিরাপত্তার ব্যবস্থা করে এবিজি। সেইমতো শনিবার বন্দরের ভিতরে ও বাইরে পুলিস ক্যাম্প বসানো হয়। জুলুমবাজির ছবিটা তাতেও বদলায়নি।
প্রেস বিবৃতি দিয়ে সংস্থা দাবি করেছে---
কাজ চালুর কয়েক ঘণ্টা আগে অপহরণ! কোনও সন্দেহ নেই পরিকল্পনা করেই এই কাজ করা হয়েছে। যেটা সবচেয়ে অস্বস্তির, তা হল কিছু লোকের কায়েমি স্বার্থ পূরণের জন্যই বন্দরের কাজে বাধা দেওয়া হচ্ছে। রবিবারের ঘটনা থেকে পরিষ্কার, রাজ্য প্রশাসন ও পুলিস পণ্য খালাসকারী সংস্থাকে কোনও নিরাপত্তাই দিতে পারেনি।
শুধু তাই নয়। প্রেস বিবৃতিতে সংস্থার দাবি---
আধিকারিকদের আবাসনে যখন দুষ্কৃতীরা জোর করে ঢুকতে যায়, তখন নিরাপত্তার জন্য বারবার পুলিসকে ফোন করেও কোনও লাভ হয়নি। প্রায় দুঘণ্টা পর এবং আবাসন থেকে আধিকারিকরা অপহৃত না হওয়া পর্যন্ত পুলিস ঘটনাস্থলে পৌঁছয়নি।
প্রেস বিবৃতিতে সংস্থা বারবারই পুলিসই নিষ্ক্রিয়তারই অভিযোগ তুলেছে। তাঁদের মতে, পুলিস এবং জেলা প্রশাসন কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশ মানতে ব্যর্থ হয়েছে। সুতরাং এইচবিটি ফের কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হচ্ছে।
ঘটনার পর রাজ্য ছেড়েছেন এবিজির অপহৃত আধিকারিকেরা। অন্য আধিকারিকদের থাকার বিষয়টিও প্রশ্নের মুখে। আর এই ঘটনার পর টাটাদের সিঙ্গুর ছেড়ে যাওযার পুনরাবৃত্তির আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। কারণ, একই ভাবে টাটা মোটর্সদের আধিকারিকদের মারধর, হুমকি, কাজে যোগ দিতে বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল। এখন সিঙ্গুর মামলা বিচারাধীন। সেরকমই এবিজি কর্তাদেরও অপহরণ, হুমকি, কাজে যোগ দিতে বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠল এবং প্রশাসন ও পুলিসের নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ তুলে তাঁরাও আদালতের দ্বারস্থা হচ্ছেন। বিশেষজ্ঞদের মতে, এবিজির হলদিয়া ছেড়ে চলে গেলে তা হবে টাটাদের সিঙ্গুর ছেড়ে চলে যাওয়ার থেকেও বড় ক্ষতি। ধাক্কা খাবে রাজ্যের আমদানি-রফতানির বাণিজ্য।
প্রায় দেড় বছর হতে গেল সরকারে এসেছে তৃণমূল কংগ্রেস। কিন্তু রাজ্য সরকারের জমি নীতির গেরোয় যখন রাজ্যের শিল্পায়ন প্রক্রিয়া প্রায় মুখ থুবড়ে পড়েছে। তখন হলদিয়ায় এবিজি সংস্থার কাজে বাধা দেওয়া এবং অপহরণের অভিযোগ সামনে আসার পর ফের রাজ্যের শিল্পবান্ধব ভাবমূর্তি আরও একবার ধাক্কা খেল। এই ঘটনা রাজ্যের জন্য যে কোনও ইতিবাচক বার্তা বয়ে আনবে না তা পরিস্কার।