Laxmir Bhander: ধসে যাচ্ছে ভোটব্যাংক! মমতার লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের প্রচারে এবার জেলা সিপিএম!
Laxmir Bhander: মেদিনীপুর শহরের মীর বাজারে কৃষক ভবনে একটি কর্মশালার আয়োজন করা হয়েছিল জেলার সিপিএমের পক্ষ থেকে। সেখানে লক্ষ্মীর ভাণ্ডার, কন্যাশ্রী, রূপশ্রী, যুবশ্রী, স্বাস্থ্যসাথী প্রভৃতি প্রকল্প নিয়ে চর্চা হয়েছে

চম্পক দত্ত: কটাক্ষ করে তো লাভ হয়নি বরং ক্ষতি হয়েছে অনেক বেশি। এবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের লক্ষ্মীর ভাণ্ডার, কন্যাশ্রী, যুবশ্রীর মত বিভিন্ন জনমুখী প্রকল্পগুলিকে মানুষের কাছে নিয়ে গিয়ে প্রচার করার সিদ্ধান্ত নিল সিপিএম। ইতিমধ্যেই পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সিপিএম কর্মশালাও সেরে ফেলেছে। প্রকল্পগুলির নাম ধরে ধরে তৈরি করা হয়েছে একটি পুস্তিকাও। যদিও সিপিএম নেতৃত্বের দাবি এই প্রকল্পগুলো কোনও দলের নয় এটা সরকারি প্রকল্প।
আরও পড়ুন-'২-৩ সপ্তাহ কথাও বন্ধ', অবসাদে বিপন্ন আমির!
লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের মত প্রকল্পগুলিকে আক্রমণ করে বিশেষত গ্রামে ক্রমশই গণভিত্তি দুর্বল হচ্ছিল সিপিএমের। গত বিধানসভা নির্বাচনের পর থেকেই এই নিয়ে সিপিএমের দলের মধ্যে আলোচনা শুরু হয়েছিল। অবশেষে তারা প্রকাশ্যে স্বীকার করা শুধু নয় তারা এই ধরনের জনমুখী প্রকল্পের প্রচারের সিদ্ধান্ত পর্যন্ত নিয়েছে।
সম্প্রতি মেদিনীপুর শহরের মীর বাজারে কৃষক ভবনে একটি কর্মশালার আয়োজন করা হয়েছিল জেলার সিপিএমের পক্ষ থেকে। সেখানে লক্ষ্মীর ভাণ্ডার, কন্যাশ্রী, রূপশ্রী, যুবশ্রী, স্বাস্থ্যসাথী প্রভৃতি প্রকল্প নিয়ে চর্চা হয়েছে এবং প্রত্যেকটি নেতাকর্মীদের একটি করে পুস্তিকা দেওয়া হয়েছে। এই পুস্তিকায় প্রকল্প ধরে ধরে প্রয়োজনীয় তথ্য জানানো রয়েছে। লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের ক্ষেত্রে যেমন জানানো রয়েছে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরিচালিত প্রকল্পের নাম হল লক্ষ্মীর ভাণ্ডার। যে পুস্তিকা সিপিএমের তরফ থেকে ছাপানো হয়েছে তাতে রাজ্য সরকারের সমস্ত প্রকল্প কিভাবে আবেদন করলে এবং কোথায় আবেদন করলে পাওয়া যাবে তার ব্যাখ্যা দেওয়া রয়েছে।
পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সিপিএমের সম্পাদক বিজয় পাল মানছেন রাজ্য সরকারের প্রকল্পগুলি নিয়ে তারা একটি কর্মশালা ইতিমধ্যেই করেছেন এবং একটি পুস্তিকাও বের করেছেন। দলের নেতাকর্মীরা গ্রাম পঞ্চায়েত স্তরে গিয়ে মানুষকে বোঝাবেন সরকারের প্রকল্পগুলি থেকে কী সুযোগ-সুবিধা পাওয়া যায়। তৃণমূল তো সেভাবে প্রচার করে না। সাধারণ মানুষ জানেই না তাদের কী প্রাপ্য। তাদের রয়েছে দিদিকে বল। সরকারি প্রকল্প জানবে সেটা মানুষের অধিকারের মধ্যে পড়ে। মানুষের সেই অধিকার রক্ষার দায়িত্ব আমরা পালন করছি। ২০ এপ্রিল বামফ্রন্টের যে চারটি গণসংগঠন ব্রিগেড সমাবেশের ডাক দিয়েছে তার আগে গ্রামে গ্রামে, এলাকায় এলাকায় গিয়ে যাতে মানুষের কাছে প্রকল্পগুলির কথা বলা যায়, কারা এই প্রকল্পগুলি পাওয়ার দাবিদার, তাহলে তারা বুঝবে যে আমরা বঞ্চিত।
বিজয় পাল আরও বলেন, লক্ষ্মীর ভাণ্ডার যাদের পাওয়ার কথা নয় তারা যেভাবে পাচ্ছে এবং দ্বিতীয় দুয়ারে সরকারের পরে আর যারা নাম তুলেছে তাদের নাম এখনো পাওয়া যায়নি। প্রায় সাড়ে ৪ কোটি আমাদের মহিলা ভোটার লক্ষ্মীর ভাণ্ডার পাচ্ছে। এখনও ২ কোটি ২০ লক্ষের মতন বাকি, যারা পায়নি। তাদের মধ্যে অনেক গরিব মানুষ রয়েছেন। সরকারের টাকা তো কারো ব্যক্তির টাকা নয়, আমাদের ট্যাক্সের টাকা। এত স্থায়ী নিয়োগ বন্ধ করে দিয়ে এইসব টাকা দিয়ে ভোট নেওয়ার মেশিনারি তৈরি হয়েছে। আসলে মহিলাদেরকে ক্ষমতায়ন করার কোন লক্ষ্য নেই। সেখানে দাঁড়িয়ে তাও যেটা হচ্ছে সেখান থেকে কেন একটা গরিব মানুষ বঞ্চিত হবে। গরিব মানুষের যেখানে যা সুবিধা আছে তার পক্ষে আমরা সবসময় আছি, ছিলাম, থাকব।
এনিয়ে কটাক্ষ করতে ছাড়েনি বিজেপি। দলের জেলা সহ-সভাপতি শঙ্কর গুচ্ছাইত বলেন, এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রকল্পের প্রচার করছে সিপিএম কর্মশালা করে। আমরা জানি যে সিপিএম আর তৃণমূল হচ্ছে মুদ্রার এপিঠ আর ওপিঠ সেটা আজকে প্রমাণিত হল। আমরা আহ্বান করব যে আদি দুই বা তিন শতাংশ সিপিএম বলে যারা পরিচিত রয়েছেন যারা লড়াই করছেন তৃণমূলের বিরুদ্ধে, তাদেরকে বলব তাদের যদি তৃণমূলের বিরুদ্ধে লড়াই করতে হয় তাহলে আপনারা বিজেপির ছত্রছায়ায় আসুন। বিজেপি একমাত্র বিকল্প পশ্চিমবঙ্গে।
এ বিষয়ে তৃণমূলের রাজ্য সম্পাদক প্রদ্যুৎ ঘোষ বলেন, সিপিএমের বিলম্বিত বোধোদয় হয়েছে। 'গরিবে গরিবে বিরোধ নাই। বড়লোককে ছাড়ব নাই।' এই স্লোগান দিয়েই পশ্চিমবঙ্গে বামফ্রন্ট ক্ষমতায় এসেছিল। পরবর্তীকালে ক্ষমতায় থাকাকালীন গরিব মানুষদের জন্য কিছুই করেনি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ক্ষমতায় আসার পর অনুধাবন করেছিলেন গরিব মানুষদের সঠিকভাবে জীবন যাপনকে রক্ষা করতে হলে তাদেরকে কিছু সরকারি প্রকল্পের আওতার মধ্যে নিয়ে আসতে হবে। তাই তিনি প্রথমে করেছিলেন বিনা পয়সায় রেশনে চাল, তারপর থেকে একের পর এক জনমুখী প্রকল্প করে গিয়েছেন। এতদিন সিপিএম বলে গেল এইসব দান খয়রাতি করে কী লাভ! শুধু শুধু টাকা নষ্ট হচ্ছে আর তৃণমূল কংগ্রেস তার ভোট ব্যাংক তৈরি করছে। আজকে সিপিএম বলছে, যে প্রকল্প মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় করেছে তা বাস্তবায়ন করা দরকার তা না হলে গরিব মানুষ বঞ্চিত হবে। তখন যখন সিপিএম সরকার ছিল তখন মনে পড়েনি! গরিব মানুষদেরকে বঞ্চনা করছিলেন। আর এতদিন পর আপনাদের মনে হল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রকল্পগুলো ভালো। আর এই প্রকল্প গুলোকে নিয়ে মানুষের কাছে যেতে হবে। মানুষের কাছে যান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রকল্প গুলো মানুষের কাছে বলুন কিন্তু মনে রাখবেন বাংলার মানুষ আপনাদের ২০১১ সালের আগে অত্যাচারের কাহিনীটা ভালো করেই জানে।
বিজেপির কটাক্ষ করা নিয়ে প্রদ্যুৎ ঘোষ বলেন, বিজেপির বাজে কথা বলার কোন মূল্য নেই। সিপিএম তৃণমূলের এপিঠ ওপিঠের কোন গল্প নেই । আমরা সিপিএমের বিরুদ্ধে লড়াই করে ৭২ হাজার তৃণমূল কর্মী সিপিএমের হাতে খুন হওয়ার পর আমরা সরকারে এসেছি সুতরাং ওসব গট আপের কথা বলে লাভ নেই। আমরা বলছি পশ্চিমবঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উন্নয়ন মানুষ চোখে দেখছে। সেই উন্নয়নের লক্ষ্যে মানুষ ভোট দিচ্ছে আগামী দিন ২০২৬ সালে আবার ২৫০ টি বিধায়ক জিতে চতুর্থবারের জন্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মুখ্যমন্ত্রী হবে এটা আমরা আজ থেকে দায়িত্ব নিয়ে ঘোষণা করলাম।
(দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির টাটকা খবর, আপডেট এবং ভিডিয়ো পেতে ডাউনলোড-লাইক-ফলো-সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের App, Facebook, Whatsapp Channel, X (Twitter), Youtube, Instagram পেজ-চ্যানেল)