সচিনের শ্বশুরের হাত ধরেই জাতীয় স্তরে প্রথম সাফল্য এশিয়াডে সোনাজয়ী 'রয়্যাল বেঙ্গল' শিবনাথের
সালকিয়ার ৫৫ বছর বয়সী শিবনাথ সরকার তাস খেলা শুরু করেন ৩০ বছর বয়সে। তার আগে কলেজ জীবনে একটু আধটু খেলেছিলেন।

সুখেন্দু সরকার
এশিয়ান গেমসে এ বছরই প্রথম অন্তর্ভুক্ত হয়েছে ব্রিজ। আর প্রথমবারেই বাজিমাত দুই বাঙালির, বরং বলা ভাল দুই প্রৌঢ়ের। এশিয়ার তাবড় ব্রিজ খেলোয়াড়দের টেক্কা দিয়ে গেলেন দুই বাঙালি- শিবনাথ সরকার ও প্রণব বর্ধন। সোনা জিতে রবিবার রাতেই কলকাতায় ফিরেছেন দুই বাঙালি 'বুড়ো'।
অফিস-টাইমে যে কোনও লোকাল ট্রেনে, ক্লাব ঘরে, তাসের আসর বহুকালের চেনা ছবি। এমনিতে 'তাস-পাশা-সর্বনাশা' এই প্রবাদটা বাঙালি সমাজে কম বেশি প্রচলিত। কিন্তু এ সবের পরেও বাঙালি তাস খেলে চলেছে প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে। বস্তাপচা এই 'সর্বনাশা' ধারণাটা বদলে দিয়েই হাওড়া সালকিয়ার শিবনাথ সরকার বলছিলেন, "আগে বলা হত তাস-পাশা-কর্মনাশা, এখন বলা হচ্ছে তাস-পাশা- কর্মের আশা..."। গলায় ঝোলানো এশিয়ান গেমসের সোনার পদক হাতে নিয়ে তিনি বলছিলেন, "এই মেডেলটাই অবজ্ঞার জবাব দিচ্ছে। যাঁরা তাস খেলা নিয়ে কটাক্ষ করতেন, তাঁদের এই সোনার মেডেলটা বলে দিচ্ছে এটা একটা ভবিষ্যত্।"
সালকিয়ার ৫৫ বছর বয়সী শিবনাথ সরকার তাস খেলা শুরু করেন ৩০ বছর বয়সে। তার আগে কলেজ জীবনে একটু আধটু খেলেছিলেন। তবে মায়ের কাছেই তাসে হাতেখড়ি শিবনাথ বাবুর। তাই জাকার্তায় সোনা জিতে প্রথম মায়ের কথাই মনে পড়েছিল তাঁর। কথাগুলো বলতে বলতে গলা ধরে আসছিল প্রৌঢ়র। শিবনাথবাবু জানাচ্ছেন, ডাঃ প্রবীর বেরাই প্রথম শেখান কীভাবে ব্রিজে জিততে হয়। কেমন করে টেম্পারমেন্ট ধরে রাখতে হয় সেটাও শিখিয়েছিলেন তিনিই। তাই প্রয়াত ডাক্তারবাবুই পেশাদার জগতে তাঁর প্রথম গুরু। এখন অবশ্য পৃথ্বিশ কুশারীই এই স্বর্ণপদক বিজয়ীর মেন্টরের ভূমিকায় বহাল রয়েছেন। শিবনাথবাবু যে সংস্থায় চাকরি করতেন, সেখানে তাঁর উপরওয়ালাই ২০০২ সালে ব্রিজ খেলার জন্য চাকরি থেকে অব্যহতি দিয়েছিলেন। এই সব স্মৃতি চারনা করতে করতেই হঠাত্ শিবনাথ বাবুর কথায় উঠে এল সচিন পরিবারের কথা!
শিবনাথ বাবু প্রথমবার ন্যাশনাল মাস্টার্সে সোনা জিতেছিলেন আনন্দ মেহেতার অধিনায়কত্বে। সেই আনন্দ মেহেতা হচ্ছেন সম্পর্কে মাস্টার ব্লাস্টার সচিন তেন্ডুলকরের শ্বশুরমশাই। ১৯৯৮ সালে পার্টনার বাদল দাসকে নিয়ে প্রথমবার জাতীয় স্তরে ব্রিজে সোনা জিতেছিলেন শিবনাথ সরকার। সেদিন সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে আনন্দ মেহেতা বলেছিলেন, "এই জয় ওদের ক্রেডিট। দুটো রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার জিতেছে, ওদের জিজ্ঞেস করো।"
তাসের শুরুটা হয়েছিল নেহাত ভালোলাগা থেকেই। ধীরে ধীরে সেই ভালোলাগা নেশায় পর্যবসিত হয়। এরপর সেই নেশাই এখন পেশা। প্রণব বর্ধনের সঙ্গে জুটি গড়ে এশিয়ান গেমসে ব্রিজে সোনা জিতেছেন সালকিয়ার শিবনাথ সরকার। শারীরিক কসরত নয় মস্তিষ্কের খেলায় বাজিমাত্ করেছেন বাঙালি, তাও আবার তাস খেলায়। রাতে কখনও স্বপ্ন দেখেন না শিবনাথ বাবু। তবে কী ২০২০ সালে টোকিও অলিম্পিকে সোনার স্বপ্ন দেখছেন? উত্তরে প্রৌঢ় বলেন, "আগে নিজেকে ভাঙি। তারপর আবার নতুন করে গড়তে চাই অলিম্পিকের জন্য। এশিয়ান গেমস আর অলিম্পিক গেমস আলাদা। অলিম্পিক অনেক বড় পরিসর"। প্রৌঢ়ের চোখে মুখে ফুটে উঠছে প্রত্যয়ের আভা...