IND vs PAK, ICC T20 World Cup 2022: ৩৬৪ দিনের মাথায় অপমানের বদলা নিয়ে পাক বধ করলেন বিরাট কোহলি
IND vs PAK, ICC T20 World Cup 2022: অর্শদীপের হিরো হয়ে ওঠার দিন আরও একবার ক্যাপ্টেন তথা গোটা দেশের মন জয় করলেন হার্দিক পান্ডিয়া। ভারতীয় অলরাউন্ডারও তুলে নেন তিনটি মূল্যবান উইকেট।
জি ২৪ ঘন্টা ডিজিটাল ব্যুরো: ৩৬৪ দিন পর ১০ উইকেটে হারের বদলা নিল টিম ইন্ডিয়া। লেখা ভালো অপমানের বদলা নিলেন বিরাট কোহলি। কারণ গত বছর ২৪ অক্টোবর এই পাকিস্তানের বিরুদ্ধেই যে ১০ উইকেটে লজ্জাজনক ভাবে হেরে গিয়েছিল। ঠিক ৩৬৪ দিনের মাথায় বদলা নিল ভারত। ব্যাটে লড়াই করে জবাব দিলেন বিরাট কোহলি। কারণ নেতৃত্বেই যে লজ্জার হার হজম করেছিল বিরাটবাহিনী। ৬.১ ওভারে ৩১ রানে চার উইকেট। পাক পেসারদের দাপটে প্যাভিলিয়নে ফিরে গিয়েছেন কেএল রাহুল, রোহিত শর্মা, সূর্যকুমার যাদব এবং অক্ষর প্যাটেল। সামনে তখন কার্যত রানের পাহাড়। অথচ ধুঁকছে ভারতের টপ অর্ডার। এহেন পরিস্থিতিতে যে কোনও দলেরই মাথা ঠান্ডা রেখে খেলা ভীষণ চ্যালেঞ্জের। কিন্তু বিষয় যখন বদলা নেওয়া আর সম্মানরক্ষার, তখন তাগিদটাও যে অনেকখানি বেড়ে যায়। শিরদাঁড়া সোজা করে তাই কঠিন লড়াইটা এগিয়ে নিয়ে গেলেন বিরাট কোহলি ও হার্দিক পান্ডিয়া। আর তাতেই মেলবোর্নে লেখা হল প্রতিশোধের ইতিহাস।
অধিনায়কের দায়িত্বে না থাকলেও ব্যাট হাতে দলকে মধুর জয় উপহার দিলেন কোহলি। ৫৩ বলে ৮২ রানের চোখ ধাঁধানো ইনিংস খেলে বিশ্বকাপ ও এশিয়া কাপে পাকিস্তানের কাছে হারের বদলা নিলেন। ৬টি চার ও চারটি ছক্কা দিয়ে সাজানো ছিল তাঁর ইনিংস। তাঁকে যোগ্য সঙ্গ দেন হার্দিক। ৪০ রান করে দলকে জয়ের কাছাকাছি পৌঁছে দেন। আর ফ্রি হিট, ওয়াইড, আউট, ওভার বাউন্ডারির মতো ঘটনাবহুল রুদ্ধশ্বাস শেষ ওভারে আসে তৃপ্তির ৪ উইকেটে জয়। ৯০ হাজার ২৯৩ জন দর্শকের সামনে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ অভিযানের শুরুটা দুর্দান্ত হল ভারতের। মেলবোর্নের ২২ গজে ব্যাটিং বিপর্যয় সামলেও বিরাট জয় রোহিত শর্মাদের।
পড়ুন, বাঙালির প্রাণের উৎসবে আমার 'e' উৎসব। Zee ২৪ ঘণ্টা ডিজিটাল শারদসংখ্যা
আরও পড়ুন: IND vs PAK, ICC T20 World Cup 2022: বিরাটের ব্যাটে পাক বধ করে রুদ্ধশ্বাস জয় পেল টিম ইন্ডিয়া
আরও পড়ুন: Arshdeep Singh | IND vs PAK: তাঁকে শুনতে হয়েছিল 'খালিস্তানি'! মেলবোর্নে আগুন জ্বালিয়ে কী বললেন অর্শদীপ
রোহিত শর্মা-কেএল রাহুলদের জন্য মঞ্চ তৈরি করে দিয়েছিলেন অর্শদীপ সিং। পরে আবার পাকিস্তানের মিডল অর্ডারকে বুঝে নেন হার্দিক পান্ডিয়া ও মহম্মদ শামি। কিন্তু বোলারদের পারফরম্যান্সের মর্যাদা দিতে ব্যর্থ দুই তারকা ওপেনার। এবং ইদানীং ক্রিকেট দুনিয়ায় 'নতুন মিস্টার 360 ডিগ্রি' তকমা পেয়েছেন সূর্য কুমার যাদব। কিন্তু চাপের মুখে পাক বোলারদের সামনে তিনিও দাঁড়াতে পারলেন না। ফলে ৩১ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে তখন ব্যাকফুটে ভারত। ১৬০ রানের লক্ষ্য যেন তখন ২৫০ মনে হচ্ছে! ঠিক এমন সময় পালটা প্রত্যাঘাত করলেন বিরাট কোহলি ও হার্দিক পান্ডিয়া। গত বছর তাঁর নেতৃত্বে আইসিসি ইভেন্টেই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীর বিরুদ্ধে ১০ উইকেটে হেরেছিল 'মেন ইন ব্লু' ব্রিগেড। গতবার একইরকম ব্যাটিং ব্যর্থতার জন্য তাঁর ৫৭ রানের ইনিংস কাজে লাগেনি।
মেলবোর্নের আকাশে মেঘ থাকলেও, ক্রিকেট পন্ডিতারা কিন্তু দুই অধিনায়ককেই টসে জিতে ব্যাট করার পরামর্শ দিয়েছিলেন। তবে ক্রিকেট দুনিয়াকে চমকে দিলেন রোহিত। আকাশে মেঘ ও বৃষ্টির সম্বাবনা থাকার জন্য টসে জিতে বল করার সিদ্ধান্ত নিলেন রোহিত। তাঁর জোরে বোলাররা যে পাক দলের টপ অর্ডার থেকে মিডল অর্ডারকে জোর ধাক্কা দিতে পেরেছে, সে নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। মেলবোর্নের মেঘলা আকাশে সুবিধা পাবেন পেসাররা। আর সে কথা মাথায় রেখেই টস জিতে প্রথমে বোলিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন রোহিত। তাঁকে নিরাশ হতে হয়নি। প্রথম থেকেই দারুণভাবে সুইং করছিল ভুবনেশ্বর, অর্শদীপদের বল। তাঁদের সুইং অ্যাটাকেই মুখ থুবড়ে পড়তে হল পাক টপ অর্ডারকে। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে বিশ্বের এক নম্বর ব্যাটার তথা বাবর খাতাই খুলতে পারলেন না। তাঁকে এলবিডব্লিউ করে প্যাভিলিয়নে ফেরান অর্শদীপ। এশিয়া কাপে ক্যাচ মিস করায় তীব্র কটাক্ষের শিকার হতে হয়েছিল ভারতীয় পেসারকে। এদিন তারই যোগ্য জবাব দেন তিনি। শুধু তাই নয়, তুলে নেন আরেক ভয়ংকর ব্যাটার রিজওয়ানের (৪) উইকেটটিও। আসিফ আলিকেও (২) আউট করেন তিনি।
তবে এরপরেই পাকিস্তানের হয়ে ইনিংসের হাল ধরেন শান মাসুদ ও ইফতিকার। তৃতীয় উইকেটে দুইজনে মিলে ৭৬ রান যোগ করেন। ১২তম ওভারে অক্ষরের বলে তিন ছক্কা হাঁকিয়ে নিজের অর্ধশতরান পূরণ করেন ইফতিকার। তবে অর্ধশতরান করার পর বেশিদূর এগোতে পারেননি। তাঁকে ৫১ রানে ফেরান মহম্মদ শামি।
অর্শদীপের হিরো হয়ে ওঠার দিন আরও একবার ক্যাপ্টেন তথা গোটা দেশের মন জয় করলেন হার্দিক। ভারতীয় অলরাউন্ডারও তুলে নেন তিনটি মূল্যবান উইকেট। শাহদাব খান, হায়দার আলি ও মহম্মদ নওয়াজকে ফেরান প্যাভিলিয়নে। আইপিএল, এশিয়া কাপের পর বিশ্বকাপেও যে তিনি একই ছন্দে, সেটাই যেন এদিন মনে করিয়ে দেন তিনি।
চোটের জন্য চলতি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে নেই জশপ্রীত বুমরা ও দীপক চাহার। তবে তাঁদের অনুস্থিতিতে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কাজে লাগল ভুবনেশ্বর এবং শামির অভিজ্ঞতা। ৫১ রান করা ইফতিকর আহমেদের গুরুত্বপূর্ণ উইকেটটি তুলে নেন শামি। ভুবির ঝুলিতে একটি উইকেট। তবে মিডল অর্ডার তারকা শান মাসুদ (৫২*) ও শেষে শাহিন আফ্রিদির লড়াইয়ের সৌজন্যে ৮ উইকেটে ১৫৯ রান তুলে নেয় পাকিস্তান।
অস্ট্রেলিয়ার উইকেট, আবহাওয়ার সঙ্গে মানিয়ে নিতে ৬ অক্টোবর সে দেশে চলে গিয়েছিল ভারতীয় ক্রিকেট দল। পার্থ, ব্রিসবেন, মেলবোর্নে তিন দফায় চলেছে প্রস্তুতি। তিনটি প্রস্তুতি ম্যাচও খেলেছে ভারতীয় দল। তবু টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচেই শাহিন শাহ আফ্রিদি, নাসিম শাহদের সামনে বিধ্বস্ত ভারতীয় ইনিংস। তবে বিরাট ছিলেন। তাই চলতি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে 'কিং কোহলি' বুঝিয়ে দিলেন তিনি ফের রাজত্ব করতে এসেছেন।