সবার প্রিয় ‘হিরো’ ভোম্বলের প্রয়াণে শোকস্তব্ধ ময়দান
সুভাষ স্মৃতিতে রোমন্থন।

নিজস্ব প্রতিবেদন: ময়দানের সঙ্গে জুড়ে থাকা মানুষগুলোর কাছে তিনি ‘ভোম্বল’। অনেকের কাছে তিনি ছিলেন ‘মস্তান’! প্রবাদপ্রতিম প্রদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় ওঁকে ভালবেসে ডাকতেন ‘বুলডোজার’। সেই ‘টাইগার’ সুভাষ ভৌমিক শনিবার চিরঘুমে পাড়ি দিলেন। স্বভাবতই তাঁকে ঘিরে আবেগতাড়িত। সুব্রত ভট্টাচার্য, গৌতম সরকার থেকে শুরু করে অ্যালভিটো ডি কুনহা, সন্দীপ নন্দী, হোসে র্যামিরেজ ব্যারেটো সবাই সদ্য প্রয়াতকে নিয়ে বক্তব্য রাখলেন।
সুব্রত ভট্টাচার্য, প্রাক্তন ফুটবলার – সুভাষ ভৌমিক না থাকলে আমরা প্রতিষ্ঠাই পেতাম না। ১৯৭৬ সালে ধীরেনদাকে বলে আমরা ওকে মোহনবাগানে সই করিয়েছিলাম। আমি বলেছিলাম সুভাষদাকে নিয়ে নিন। আমরা তারপর যে সাফল্য পেয়েছি, প্রতিষ্ঠা পেয়েছি, সেটার জন্য সুভাষ ভৌমিকের প্রচুর অবদান রয়েছে। এই তো কয়েক দিন আগেই কথা বললাম। তখনও কিছু বুঝতে পারিনি। আমার কাছে এটা খুবই মর্মান্তিক। ভোম্বলদা চলে যাবে এটা আমি ভাবতেই পারছি না। আমি আজকে যাব ভেবেছিলাম, কিন্তু এটা শুনে আমি ভীষণ মর্মাহত হয়ে পড়েছি।
মানস ভট্টাচার্য, প্রাক্তন ফুটবলার – ভাল কোচ ও একজন ভাল মনের মানুষকে হারালাম। ফুটবলটা তিনি খুব ভাল বুঝতেন। নিজে খেলেছেন ও খুব দাপটের সঙ্গে। এবং বলতে কোনও দ্বিধা নেই তিনি আমাকে ও বিদেশকে হাতে ধরে শিখিয়েছিলেন। কীভাবে আউটসাইড ডজ করতে হয়। আউটসাইড ডজ হচ্ছে সব থেকে মারাত্মক একটা অস্ত্র। সেটা রপ্ত করার জন্য আমাকে, বিদেশকে বিশেষ ভাবে সাহায্য করেছিলেন সুভাষ দা। তিনি এমন একজন খেলোয়াড় ছিলেন, যিনি মাঠে নামার আগেই ঠিক করে নিতেন, আজ মাঠে নামব, গোল করব, দলকে ম্যাচ জেতাব এবং তারপর মাথা উঁচু করে বেরিয়ে আসব।
আরও পড়ুন: Subhash Bhowmick Died: পাঁচ গোলের গর্ব ও লজ্জা নিয়েও ‘টাইগার আজীবন জিন্দা হ্যায়’
আরও পড়ুন: Subhash Bhowmick Died: ‘ইউ চাইম্যান, আই অ্যাম ষষ্ঠী দুলে’, সুভাষ স্মৃতিতে বিভোর লড়াকু ছাত্র
হোসে র্যামিরেজ ব্যারেটো, প্রাক্তন ফুটবলার - সুভাষ ভৌমিকের প্রয়াণে আমি ব্যথিত। ভারতীয় ফুটবল সবসময় ফুটবলার এবং কোচ হিসাবে আপনার অবদান মনে রাখবে। আপনার পরিবার এবং প্রিয়জনের প্রতি আমার আন্তরিক সমবেদনা। শান্তিতে থাকুন ভোম্বল দা।
সমরেশ চৌধুরি, প্রাক্তন ফুটবলার – ওর সঙ্গে আমার একটা বিরাট বন্ধুত্ব ছিল। এটা কী যে হল, মেনে নিতে পারছি না। এত ভাল ফুটবলার হয় না। আমার দেখা ফুটবলারদের মধ্যে ও অত্যন্ত ভাল ছিল। খবরটা শুনেই সকালবেলা মনটা খুব খারাপ হয়ে গেল।
অ্যালভিটো, প্রাক্তন ফুটবলার — সুভাষ ভৌমিক আমার কাছে শুধু কোচ ছিলেন না। আমার বাবার মতো ছিলেন তিনি। কারণ একটা সময় আমার যখন ফর্মটা খারাপ ছিল, তখন আমাকে নিজের বাড়িতে নিয়ে গিয়ে রেখেছিলেন। আমার খাওয়া দাওয়া, ট্রেনিং সব কিছুতেই তিনি নজর দিয়েছিলেন। আমার জীবনের একটা টার্নিং পয়েন্ট যদি বলি বা এতদিন খেলতে পারার ব্যাপারে বলি, সেই কারণটা ছিলেন সুভাষ ভৌমিক। তিনি আমাদের প্রচুর সাফল্য দিয়েছেন। শুধু আমাকে নয়, ইস্টবেঙ্গল ক্লাবকে তিনি অনেক দিয়েছেন। জাতীয় লিগ, আশিয়ান কাপ সব কিছুই আমরা ওঁর সময় পেয়েছিলাম। তিনি শুধু ভাল কোচই ছিলেন না। ম্যান ম্যানেজমেন্টের দিকেও তিনি দারুণ ছিলেন। ভারতীয় ফুটবলে আধুনিকতার ছোঁয়া ওঁর জামানায় এসেছিল।
গৌতম সরকার, প্রাক্তন ফুটবলার — এই পৃথিবী ছেড়ে সকলকেই যেতে হয়। সবাই যাবে। কিন্তু এই অকালপ্রয়াণ, অসময়ে যাওয়া যতই কিডনির অসুখ হোক, যতই করোনা হয়ে থাকুক কিন্তু ওর যাওয়াটা মেনে নেওয়া যায় না। বলার কোনও ভাষা নেই। শুধু এটুকুই বলব, ওর পরিবার সন্তান, স্ত্রীকে কীভাবে শান্তনা দেব তার ভাষাও আমি পাচ্ছি না। কষ্ট পাচ্ছি এটাই ভেবে যে, ভৌমিককে আর ফিজিক্যালি দেখতে পাবো না আমরা।
দীপেন্দু বিশ্বাস, প্রাক্তন ফুটবলার – সুভাষ স্যার সব সময় আমাদের খুব কনফিডেন্স দিতেন। আমি ইস্টবেঙ্গলে যখন ছিলাম, ভৌমিক স্যার কোচ ছিলেন। একটা ম্যাচ আমার মনে আছে, সেটা ছিল এএফসি কোচির সঙ্গে, তিনি আমাকে খেলার একটু আগে বলেন, ‘তুই প্রথম থেকে খেলছিস’। সে দিন আমি প্রথম থেকেই খেলেছিলাম, ভাল একটা গোলও করেছিলাম। ইস্টবেঙ্গল এক গোলে জিতে যায়। তিনি আমাদের সময়ের সব ফুটবলারদের সঙ্গে বন্ধুর মতো মিশে যেতেন। এটাই ওঁর সবচেয়ে বড় গুন।
সন্দীপ নন্দী, প্রাক্তন ফুটবলার- ভৌমিকদা আমার জীবনে অনেকখানি। আজকে আমি সন্দীপ নন্দীই হতে পারতাম না, যদি না ভৌমিকদা থাকত। আমার কেরিয়ারে দু'টোর টার্নিং পয়েন্ট এসেছে ভৌমিকদার হাত ধরেই। না হলে হয়তো আমি অনেক আগেই আর সাধারণ পাঁচজন গোলকিপারের মতো হারিয়ে যেতাম।