"ছেলের সংসার টানতে মাসোহারা দেবে বৃদ্ধ বাবা, মা-ই!" ক্লাবের সালিশিতে হতভম্ব বিচারপতি
"এমন সন্তানকে তো জেলে পোরা উচিত।" মন্তব্য ক্ষুব্ধ বিচারপতি নাদিরা পাথেরিয়ার।
!["ছেলের সংসার টানতে মাসোহারা দেবে বৃদ্ধ বাবা, মা-ই!" ক্লাবের সালিশিতে হতভম্ব বিচারপতি "ছেলের সংসার টানতে মাসোহারা দেবে বৃদ্ধ বাবা, মা-ই!" ক্লাবের সালিশিতে হতভম্ব বিচারপতি](https://bengali.cdn.zeenews.com/bengali/sites/default/files/2018/08/10/134018-rgrgw.jpg)
নিজস্ব প্রতিবেদন : বৃদ্ধ বাবা-মায়ের একমাত্র অবলম্বন তাঁদের সন্তান। বৃদ্ধ বয়সের একমাত্র আশ্রয়। বয়সকালে সেই বাবা-মাকে মাসোহারা দেওয়াটাও সন্তানের কর্তব্য। কিন্তু বর্ধমানে এঘটনা একেবারে উলটপুরাণ। অসহায় বাবাকে পরিশ্রম করে ছেলে-বৌমাকে ১৬ হাজার টাকা মাসোহারা দিতে হবে! নিদান দিয়েছে স্থানীয় ক্লাব। সেই নিদান শুনে তাজ্জব হয়ে গেলেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি ও আইনজীবীরা। এমন ছেলেকে অবিলম্বে জেলে পোরা উচিত বলেই জানান ক্ষুব্ধ বিচারপতি।
বর্ধমান থানার বি বি ঘোষ রোডের বাসিন্দা বৃদ্ধ দম্পতি ফজলুল হক (৬৮) এবং নাজমা দিনা হক (৬০)। অভিযোগ, বড় ছেলে আর বড় বৌমার অত্যাচারে জীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে তাঁদের। ছেলে বেকার। কোনও কাজ করে না। সেই ছেলের সংসার পুরোটাই টানতে হচ্ছিল পেশায় মুদি ব্যবসায়ী ফজলুলকে। অথচ তারপরেও জুটছিল লাঞ্ছনা, গঞ্জনা।
আরও পড়ুন, স্ত্রীকে বিক্রির ফন্দি! বোবা মেয়ে সেজে অপহরণ স্বামীর, ধরা পড়ার পর চলল গণধোলাই
এই ঘটনায় স্থানীয় ক্লাবের দ্বারস্থ হন বৃদ্ধ দম্পতি। দুপক্ষের বক্তব্য শুনে ছেলে-বৌমার সুরেই কথা বলে ক্লাব। ছেলে, বৌমার আর্জি শুনে স্থানীয় ক্লাব ফজলুলকে প্রতি মাসে ব্যাঙ্ক মারফত ১৬ হাজার টাকা করে দেওয়ার জন্য নির্দেশ দেয় ফজলুলকে। এরপর অত্যাচারের মাত্রা বাড়ে। শেষমেশ টাকার জন্য ছেলে, বৌমার অত্যাচার সইতে না পেরে বৃদ্ধ দম্পতি গত বছর মার্চ মাসে বর্ধমান মহিলা থানায় অভিযোগ জানান। এরপর বর্ধমানের পুলিশ সুপারকেও চিঠি দেন। কিন্তু পুলিশ বিষয়টিতে নিষ্ক্রিয় থাকে বলে অভিযোগ।
এদিকে ছেলে, বৌমার নির্যাতন দিনে দিনে বাড়তে থাকে। শেষে বাধ্য হয়ে সমস্যা সমাধানের জন্য কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন বুড়োবুড়ি। এরপর গত ৫ জানুয়ারি বিচারপতি দেবাংশু বসাক দু'পক্ষকে নিয়ে বসে বিষয়টির মীমাংসা করার জন্য জেলা লিগ্যাল সার্ভিস অথরিটিকে নির্দেশ দেন। আর তারপরই শ্বশুর-শাশুড়ির বিরুদ্ধে ধর্ষণে মদত দেওয়ার মতো গুরুতর অভিযোগও আনে পুত্রবধূ জেসমিনা। অভিযোগ, দুই দেওর আশাদুল এবং রিজওয়ানুর তাঁকে ধর্ষণ করেন। আর তাতে মদত দেন তাঁর শ্বশুর-শাশুড়ি ফজলুল ও নাজমা।
আরও পড়ুন, নিজের তৈরি শববাহী খাটিয়াতেই শেষযাত্রা আত্মঘাতী বৃদ্ধের
এদিন সেই মামলাটি-ই কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি নাদিরা পাথেরিয়ার এজলাসে ওঠে। পুরো বিষয়টি শোনার পর হতবাক হয়ে যান বিচারপতি নাদিরা পাথেরিয়া। স্থানী ক্লাব খাপ পঞ্চায়েতের মতো আচরণ করছে বলে আদালতে আবেদন করেন বাবা-মায়ের তরফে আইনজীবী ইন্দ্রদীপ পাল। বৃদ্ধ বাবা-মাকে সন্তানকে মাসোহারা দেওয়ার কথা শুনে ক্ষুব্ধ হন বিচারপতি নাদিরা পাথেরিয়াও। বলেন, "এমন সন্তানকে তো জেলে পোরা উচিত।"