Father's Day: যমজ ছেলের দুষ্টুমি দেখতে দ্রুত 'নীড়ে ফেরেন' সিঙ্গল ফাদার অভিষেক
যমজ অধ্যয়ন-আবাহনের সৌজন্যে অভিষেক একই সঙ্গে একই অঙ্গে বাচ্চার মা এবং বাবাও। দ্বৈত সত্তা। আর সেই অনন্য দ্বৈততাই ঘুচিয়ে দিচ্ছে তাঁর সমস্ত শূন্যতা।

মৌমিতা চক্রবর্তী: 'পিতৃদিবসে' পিতার দিকে ফিরে দেখা, পিতার অন্তরের দিকে ফিরে তাকানো-- এ তো স্বাভাবিকই। ঘটেই থাকে। ঘটছেও আজ, রবিবার পিতৃদিবসে সারাদিন ধরে দিকে দিকে। কিন্তু সংশ্লিষ্ট বাবা-মানুষটি যদি হন অপূর্ব একা? সিঙ্গল ফাদার? সারোগেসির কঠিন নির্জন পথ ধরে ধীরে ধীরে নিজের সঙ্গরহিত জীবনের একাকিত্ব-কাটানো একজন 'একক পিতা'? তা হলে অবশ্যই সেই ফিরে দেখার মাত্রাটা বদলে যায়। চেনা মাত্রার সঙ্গে সেই দেখাটায় নানা অচেনা মাত্রা যোগ হয়। একটা বহুমাত্রিক পিতৃত্ব তখন উঁকি দেয় পিতৃত্বের চেনা ধাঁচের ভিতর থেকেই।
সেই অন্যরকম পিতৃত্বই যেন ধরা দিল অভিষেক পালের মধ্যে। বিপত্নীক অভিষেক আর বিয়ে করবেন না ঠিক করেছিলেন, কিন্তু 'বাবা' ডাকটা শোনার জন্যও ব্য়াকুল ছিল তাঁর অন্তর। চেয়েছিলেন একাকিত্ব কাটাতেও। শেষমেশ সারোগেসির শরণাপন্ন হন সল্টলেকের প্রকাশনা ব্যবসায়ী অভিষেক। নিয়ে নেন একটা কঠিন সিদ্ধান্ত, একটা চ্যালেঞ্জ।
২০১৩ সালে অভিষেকের স্ত্রী দেবস্মিতা মারা যান। তারপর থেকে একাই কাটছিল অভিষেকের। তবে মনে মনে ঠিক করেন বাবা হবেন। অবশ্য বিয়ে করবেন না। তা হলে? ২০১৯ সালে সিদ্ধান্ত নেন সারোগেসির শরণ নেবেন। সিনেমা দেখে বিষয়টা নিয়ে একটা ধারণা ছিলই। তবে খুব স্বচ্ছ তো নয়। তাই পরামর্শ নেন এক চিকিৎসক বন্ধুর। ইন্টারনেটে পড়াশোনাও করেন এ নিয়ে। এমনকী, আরও বিশদে জানতে দিল্লিতে গিয়ে বিষয়টি নিয়ে খোঁজ নেন। অবশেষে ২০২০ সালের এপ্রিলে 'বাবা' হন তিনি। ২ এপ্রিল জন্ম হয় যমজ অধ্য়য়ন আর আবাহনের।
এখন ওদের বয়স দু'বছর। অক্ষর চেনানো থেকে শুরু করে খাওয়ানো, ওদের সঙ্গে খেলা থেকে শুরু করে খুনসুটি-- সবকিছুতেই যেন নিজেকে নতুন করে খুঁজে পান, নিত্যই খুঁজে পাচ্ছেন অভিষেক। তিনি তো একই সঙ্গে ও একই অঙ্গে বাচ্চার মা এবং বাবাও। দ্বৈত সত্তা। সেই অনন্য দ্বৈততাই ঘুচিয়ে দিচ্ছে তাঁর সমস্ত শূন্যতা। আগে যে নিঃসঙ্গতা তাঁকে নিত্য কুরে কুরে খেত, তা ধীরে ধীরে কাটে। স্ত্রীর মৃত্যুর পরে কাজ শেষে আর বাড়ি ফিরতে মন লাগত না। কিন্তু বাবা হওয়ার পরে সেটা বদলায়। বাচ্চাদের দুষ্টুমি দেখতে কাজ শেষে আর একটুও সময় নষ্ট করেন না, দ্রুত বাড়ি ফেরেন তিনি।
অভিষেকের নিজের ভাষায় এটা তাঁর 'নীড়ে ফেরা'। সমাজের বাঁকা চোখ কিংবা মধুর প্রশংসা-- কিছুই আর ছুঁতে পারে না তাঁকে সেই নীড়ের নিভৃতে। কেননা নিজের হাতে রচনা করা তাঁর সেই একান্ত আপন নীড়ে তখন আলোকোজ্জ্বল বাৎসল্যের নিত্যদিনের উৎসব-স্পন্দন। তখন তাঁর কাছে তো বছরের প্রত্যেকটি দিনই 'পিতৃদিবস'।
আরও পড়ুন: Cattle Smuggling Case: সিবিআইয়ের নজরে সায়গলের 'স্পেশাল টিম ১৪', ১৫০ কোটি টাকার সম্পত্তি