দিদির কঙ্কালের সঙ্গেই ভাইয়ের দিন গুজরান, বাবার আত্মহত্যার পর সামনে এল হাড়হিম করা সত্য
আলফ্রেড হিচককের হাড় হিম করা সেই সিনেমা, সাইকোর কথা মনে করিয়ে দিল খাস কলকাতার ঘটনা। দিদি আর পোষা কুকুরের মৃতদেহ সঙ্গে নিয়ে মাসের পর মাস কাটিয়ে গেলেন ভাই। একমাত্র সাক্ষী বৃদ্ধ বাবা। শেক্সপিয়র সরণী থানা এলাকার বাড়িতে, কাল রাতে বাবার মৃত্যু হয় আগুনে পুড়ে। তারপরেই প্রকাশ্যে আসে রোমহর্ষক সব কাণ্ডকারখানা।
ব্যুরো: আলফ্রেড হিচককের হাড় হিম করা সেই সিনেমা, সাইকোর কথা মনে করিয়ে দিল খাস কলকাতার ঘটনা। দিদি আর পোষা কুকুরের মৃতদেহ সঙ্গে নিয়ে মাসের পর মাস কাটিয়ে গেলেন ভাই। একমাত্র সাক্ষী বৃদ্ধ বাবা। শেক্সপিয়র সরণী থানা এলাকার বাড়িতে, কাল রাতে বাবার মৃত্যু হয় আগুনে পুড়ে। তারপরেই প্রকাশ্যে আসে রোমহর্ষক সব কাণ্ডকারখানা।
তিন নম্বর রবিনসন স্ট্রিট। চার তলা বাংলোর তিন তলায় থাকত দে পরিবার। গৃহকর্ত্রী মারা গিয়েছেন আট বছর আগে। মেয়ে দেবযানীকে আর ছেলে পার্থকে নিয়ে থাকতেন অরবিন্দ দে। ছিল পোষ্য একটি কুকুরও। গত বছর অগস্টে কুকুরটি মারা যায়। আর তার পর থেকেই এপরিবারে যা যা ঘটতে থাকে তা অস্বাভাবিক তো বটেই, রীতিমতো শিউরে ওঠার মতো।
পোষ্য কুকুর মরে যাওয়ায় ভেঙে পড়েন দেবযানী। কুকুরটির সত্কার না করে মৃতদেহ রেখে দেওয়া হয় ঘরেই । আর সেই সঙ্গে, কুকুরের শোকে খাওয়া দাওয়া বন্ধ করে দেন দেবযানী।
অনাহারে থাকতে থাকতে ডিসেম্বরে মারা গেলেন দেবযানীও।
রোমহর্ষক ঘটনা প্রবাহের নতুন পর্ব শুরু হয় এবার। কেন্দ্রীয় চরিত্র- দেবযানীর ভাই পার্থ। একমাত্র সাক্ষী বাবা অরবিন্দ দে।
এক সময় বহুজাতিক সংস্থায় চাকরির সুবাদে আমেরিকায় থাকতেন পার্থ। চাকরি ছেড়ে কলকাতায় চলে আসেন মা-র মৃত্যুর পর। দিদির মৃত্যুর পর, দিদি আর প্রিয় পোষ্যের দেহ ঘরেই শুইয়ে রেখে দেন পার্থ। কেটে যায় প্রায় সাত মাস। দেহ দুটি পরিণত হয়েছে কঙ্কালে। পুলিসকে পার্থ জানিয়েছেন, তিনি বাড়ি থেকে বেরোতেন না। প্রতি রাতে প্ল্যানচেট করতেন। বিশ্বাস করতেন, দিদির আত্মা এসেছে। আর এরপরই কঙ্কালের সামনে বসেই খাবার খেতেন তিনি। খাবার দিতেন কঙ্কালকেও।
কেউ ঘুণাক্ষরেও টের পাননি বাড়ির ভিতর কী চলছে! দেবযানী আর কুকুর সম্পর্কে প্রশ্ন এলেই এড়িয়ে যেতেন বাবা-ছেলে।
পার্থ পুলিসকে জানিয়েছে, বিষয়টা ক্রমশ অসহ্য হয়ে উঠেছিল তার বাবার। বুধবার রাতে তাই গায়ে আগুন দেন তিনি। দাবি পার্থর। বাবাকে দাউ দাউ করে জ্বলতে দেখেও পার্থ বিচলিত হননি এতটুকু। বিভিন্ন ঘরের মিউজিক সিস্টেম চালিয়ে পায়চারি করছিলেন বাড়ির ভিতরেই। প্রতিবেশীদের থেকে আগুনের খবর পেয়ে এক সময় পৌছয় দমকল। তখনই সামনে আসে হাড় হিম করা এই ঘটনা।
প্রাথমিক তদন্তে পুলিসের হাতে এসেছে অরবিন্দ দের সুইসাইড নোট। শেষ চিঠিতে তিনি লিখেছেন, স্বেচ্ছায় এ পৃথিবী ছেড়ে চলে যাচ্ছেন। তার মৃত্যুর জন্য কেউ দায়ী নয়। ছেলে পার্থর উদ্দেশে তিনি বলেছেন ,''আমি চললাম। ভগবান সকলের ভাল করুন। তোমাকে ভালবাসি। ভালবাসি...ভালবাসি...ভালবাসি.''
তদন্তকারীদের সন্দেহ, মানসিক ভারসাম্যহীন পার্থ দে। এ ঘটনায় রীতিমতো তাজ্জব দে পরিবারের প্রতিবেশী থেকে আত্মীয়রা। এও কী আবার হয়?