'অভ্রান্ত এক কাব্যিক সুর'কেই সম্মান জানাল নোবেল কমিটি
গ্লুকের রচনায় শোনা যায় নিপাট সারল্যভরা অভ্রান্ত এক কাব্যিকসুর যা ব্যক্তিকে করে তোলে বৈশ্বিক।

নিজস্ব প্রতিবেদন: 'ফার্স্টবর্ন'। একটি কাব্যগ্রন্থের নাম। বছর পঁচিশের কবির প্রথম কাব্যগ্রন্থও এটি। কবি নিশ্চয়ই খুব ভেবেচিন্তে নাম রেখেছিলেন নিজের প্রথম বইয়ের। কেননা প্রথম বইটি দিয়েই যে কোনও কবির 'কবি-জন্ম' শুরু। ১৯৬৮ সালের সেই কবি-জন্ম আজ বিশ্বসাহিত্যের সর্বোচ্চ স্বীকৃতিটি পেল। এ বছরে নোবেল পেলেন 'ফার্স্টবর্ন'-এর কবি আমেরিকান লুই গ্লুক।
নিউ ইয়র্কে জন্ম ১৯৪৩ সালে। ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক লুই গ্লুকের দ্বিতীয় কাব্য 'দ্য হাউস অন মার্শল্যান্ড' প্রকাশিত হয় আরও বছরসাতেক পরে। এর পর আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি গ্লুককে। কিন্তু তিনি সব চেয়ে সাড়া ফেলে দিয়েছিল ১৯৯২ সালে প্রকাশিত তাঁর 'দ্য ওয়াইল্ড আইরিস' কাব্যগ্রন্থটি।
গত কয়েক বছরে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার নিয়ে সুইডিশ অ্যাকাডেমিতে কম বিতর্ক হয়নি। বেশ কয়েক বছরের টালমাটালের পরে এ বছর পুরস্কারটিতে যেন কাব্যের শান্তি ও মাধুর্য ছড়িয়ে গেল। বহুদিন পরে এমন ঘটল। বব ডিলানকে গানের জগতের মানুষ বলেই চেনেন-জানেন সকলে। তিনি অবশ্য সঙ্গীতের মধ্যে কাব্যিক উপাদান মিশিয়ে দেওয়ার স্বীকৃতিস্বরূপ ২০১৬ সালে জিতে নিয়েছিলেন সে বছরের সাহিত্যের নোবেল। তবে কবি হিসেবেই মানুষ চেনেন এমন একজন শেষবারের মতো সাহিত্যে নোবেল জিতেছেন ২০১১ সালে। থমাস ট্রান্সট্রোমেয়ার। ফলে দেখতে গেলে কবিতা নোবেল পেল প্রায় একদশক পরে। তা-ও আবার এক মহিলাকবির হাত ধরে। যিনি ঘটনাচক্রে এ বারের নোবেল-ইতিহাসের চতুর্থ মহিলা।
কেন পেলেন তিনি এ বারের পুরস্কার? কী বলছে নোবেল কমিটি?
খুব তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে কমিটি জানাচ্ছে, গ্লুককে এই স্বীকৃতিতে ভূষিত করা হল 'ফর আনমিস্টেকেবল পোয়েটিক ভয়েস দ্যাট উইথ অস্টিয়ার বিউটি মেকস্ ইনডিভিডুয়াল এগজিস্টেন্স ইউনিভার্সাল'! গ্লুকের রচনায় শোনা যায় এমন এক নিপাট সারল্যভরা অভ্রান্ত কাব্যিকসুর যা ব্যক্তিকে করে তোলে বৈশ্বিক।
যুদ্ধ, অতিমারী, মন্দা-- সব মিলিয়ে যে-বিশ্ব প্রতিদিন একটু-একটু করে আত্মকেন্দ্রিক খাঁচায় ঢুকে ক্রমশ জটিল এক জীবনচর্যায় অভ্যস্ত হয়ে উঠছে, সেখানে ব্যষ্টিকে অতিক্রম-করা সমষ্টির সরল সুষমাই তো বাঁচার মন্ত্র হতে পারে! আর এমন মন্ত্রসুরের মন্দ্র যিনি শোনাতে পারেন, তিনিই তো সম্মানিত হওয়ার অধিকারী! নোবেল কমিটি তাই সম্ভবত দ্রুত মনস্থির করে নেয়। আর সৃষ্টি হয় নতুন ইতিহাস।
এর পর কবি ও প্রাবন্ধিক সাতাত্তরের গ্লুক যদি করোনা-উত্তর সাহিত্যবিশ্বে নতুন এক অবতার হিসেবে প্রকাশিত হন, আশ্চর্য হওয়ার সম্ভবত কিছু থাকবে না!
আরও পড়ুন: বিশ্বজুড়ে মাছি-চর্চা, সৌজন্য মাইক পেন্স