ভারতে নিষিদ্ধ হওয়ার পর, সবাইকে 'ইন্ডিয়াস ডটার' দেখার আহ্বান জানালেন নির্ভয়ার বাবা

২০১২ সালে দিল্লির প্রকাশ্য রাজপথে চলন্ত বাসে নির্ভয়া গণধর্ষণ ও পরবর্তী ঘটনা প্রবাহের উপর নির্মিত 'ইন্ডিয়াস ডটার' নামের বিবিসি-এর তথ্যচিত্রটির এদেশে সম্প্রচারণের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে নরেন্দ্র মোদী সরকার। আজ, কার্যত সেই নিষেধাজ্ঞার উপরই পরোক্ষ চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিলেন নির্ভয়ার বাবা। বললেন এই তথ্যচিত্র সমাজের প্রকৃত মানসিকতার প্রতিচ্ছবি,প্রতেক্যের অবশ্যই 'ইন্ডিয়াস ডটার' দেখা উচিৎ।

Updated By: Mar 6, 2015, 04:56 PM IST
ভারতে নিষিদ্ধ হওয়ার পর, সবাইকে 'ইন্ডিয়াস ডটার' দেখার আহ্বান জানালেন নির্ভয়ার বাবা

ওয়েব ডেস্ক: ২০১২ সালে দিল্লির প্রকাশ্য রাজপথে চলন্ত বাসে নির্ভয়া গণধর্ষণ ও পরবর্তী ঘটনা প্রবাহের উপর নির্মিত 'ইন্ডিয়াস ডটার' নামের বিবিসি-এর তথ্যচিত্রটির এদেশে সম্প্রচারণের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে নরেন্দ্র মোদী সরকার। আজ, কার্যত সেই নিষেধাজ্ঞার উপরই পরোক্ষ চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিলেন নির্ভয়ার বাবা। বললেন এই তথ্যচিত্র সমাজের প্রকৃত মানসিকতার প্রতিচ্ছবি,প্রতেক্যের অবশ্যই 'ইন্ডিয়াস ডটার' দেখা উচিৎ।

''প্রত্যেকের এই তথ্যচিত্রটি দেখা উচিৎ। একবার ভেবে দেখুন, যে ব্যক্তি জেলের চার দেওয়ালের মধ্যে থেকেও এই ধরণের মন্তব্য করতে পারে, সে একবার ছাড়া পেলে কী কী করতে পারে?'' মন্তব্য করেছেন সেই অভিশপ্ত রাতে নৃশংস যৌন নির্যাতনের শিকার প্যারা মেডিক্যালের ছাত্রীর বাবা।

সেই গণধর্ষণ কাণ্ডের পর সারা দেশ এক সঙ্গে প্রতিবাদে গর্জে উঠেছিল। তার রেশ এতটাই ছিল যে ''নির্ভয়া'' নামটি এখন এ দেশে নারীদের বিরুদ্ধে যে কোনও ধরণের যৌন নির্যাতনের প্রতিবাদের প্রতীক হয়ে উঠেছে।

একটি সর্বভারতীয় সংবাদ মাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি জানিয়েছেন ''এ দেশে কী চলছে তা প্রকাশ হয়েছে এই তথ্যচিত্রটির মাধ্যমে। যদি দেশ কোনও সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে, তাহলে আমরা তা মানতে বাধ্য।''

ব্রিটিশ পরিচালক লেসলি উডউইন এই তথ্যচিত্রটি বানিয়েছেন। এই তথ্যচিত্রে, নির্ভয়ার বাবা-মা, ডাক্তার, পুলিস, উভয়পক্ষের আইনজীবী, এবং অন্যতম ধর্ষক, খুনি মুকেশ সিংয়ের সাক্ষাৎকার রয়েছে। বুধবার রাতেই ব্রিটেনে বিবিসি এই তথ্যচিত্রটি সম্প্রচারিত করে। ইউটিউবে গতকালই আপলোড করা হয়। লেসলি নিজেও ধর্ষণের শিকার।

লেসলি উডউইন, তিহারের জেলে নির্ভয়ার অন্যতম ধর্ষক, খুনি মুকেশ সিংয়ের সাক্ষ্যাৎকার নিয়েছিলেন। মুকেশ সেই সাক্ষাৎকারে বলে '''রাত ৯টার পর যে মেয়েরা বাড়ির বাইরে বেরোয় তাদের উদ্দেশ্যই থাকে পুরুষদের আকর্ষিত করা।'' প্রসঙ্গত, যে বাসটিতে নির্ভয়ার উপর নৃশংস যৌন অত্যাচার হয়েছিল সেই বাসটির চালক ছিল এই মুকেশ।

সে জানিয়েছে ''ধর্ষিত হওয়ার সময় বিন্দুমাত্র প্রতিবাদ করাই উচিৎ হয়নি মেয়েটি। চুপ করে থেকে ধর্ষণ হতে দিলে আমরা ওকে মারতাম না। ধর্ষণের পর আমরা মেয়েটিকে রাস্তায় নামিয়ে দিয়েছিলাম। ওর সঙ্গি ছেলেটিকে খানিক মারধর করি আমরা।''

মুকেশ আরও বলেছে ''কোনও ভদ্র মেয়ে রাত ৯টার পর রাস্তায় বেরয় না। ধর্ষণের জন্য ছেলেদের থেকে মেয়েরা অনেক বেশি দায়ি। ছেলে আর মেয়েরা কখনই সমান হতে পারে না। বাড়িতে থেকে গৃহস্থালীর কাজকর্ম করাটাই মেয়েদের সাজে। রাত ৯টার পর 'অশালীন' পোশাক পরে রাস্তায় বেরনো মেয়েদের কাজ নয়। মাত্র ২০% মেয়েরাই ভাল হয়।''

মুকেশের দাবি তাদের ফাঁসি হলে আখেরে খতিটা মেয়েদেরই হবে। তার মতে এরপর ধর্ষণ করে কেউ আর ধর্ষিতাকে তাদের মত বাঁচিয়ে রাখবে না।

নির্ভয়ার অন্যতম মুকেশ জানিয়েছে তারা আসলে মেয়েটি ও তাঁর সঙ্গিকে 'শিক্ষা' দিতে চাই ছিল, বোঝাতে চাইছিল রাতের বেলা তাদের মোটেও বাড়ির বাইরে বেরনো ঠিক নয়।

এই সাক্ষাৎকারের কথা প্রকাশ্যে চলে আসার পর হইচই পড়ে যায়। রাজ্যসভায় রাজনাথ সিং ভারতে এই তথ্যচিত্রটি সম্প্রচারণের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। কীভাবে তিহাড় জেলে লেসলি উডউইন মুকেশের সাক্ষাৎকার নেওয়ার অনুমতি পান সে বিষয়ে তদন্ত হবে বলেও জানান। বিশ্বে অনান্য দেশেও এই তথ্যচিত্রটির উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করার অনুরোধ জানায় ভারত সরকার।

তবে, এই অনুরোধে কান না দিয়ে নির্ধারিত সময় ৮ মার্চের আগেই বুধবার গভীর রাতে ব্রিটেনে এই তথ্যচিত্রটির সম্প্রচার করে দেয় বিবিসি।

তবে, এই তথ্যচিত্রটির উপর নিষেধাজ্ঞা জারি নিয়ে সারা দেশেই এই মুহূর্তে বিতর্ক চলছে। গতকাল বিবিসি এটিকে ইউটিউবে আপলোড করার পর থেকে বহু মানুষ ইতিমধ্যে এটি দেখে ফেলেছেন। সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে এই তথ্যচিত্রটি দেখার আবেদন জানানোও হচ্ছে।

নির্ভয়ার বাবার বলেছেন ''সংসদে দাঁড়িয়ে বকবক করলে সমস্যার সমাধান হবে না। কীভাবে অপরাধিরা এখনও বেঁচে আছে? কেন এখনও ওদের ফাঁসি হল না? মেয়েদের কী পরা উচিৎ কী নয় সেটা নির্ধারণ করার ওরা কে? যদি আমাদের মেয়েরা বেঁচেই না থাকে তাহলে 'বেটি পাড়াও, বেটি বাঁচাও'-এর মত সরকারি প্রচারের অর্থটা কী?''

অপরাধী পক্ষের আইনজীবীর ঘৃণ্য মন্তব্যও এই তথ্যচিত্রটির মাধ্যমে প্রকাশ্যে আসায় তার শাস্তির দাবি জানিয়েছেন নির্ভয়ার মা। তাঁর মতে এই তথ্যচিত্রে শুধুমাত্র সত্যিটা উঠে এসেছে।

 

 

.