অরুণা শানবাগ: কেন ধর্ষণের অভিযোগ থেকে মুক্তি পেয়েছিল ওয়ার্ড বয় বাল্মীকি?
অরুণা শানবাগ। ৪২ বছরের যুদ্ধ শেষে গতকালই মারা গেছেন তিনি। ১৯৭৩ সালে মুম্বইয়ের সরকারি হাসপাতালে এক কর্মচারীর হাতে ধর্ষিত হয়ে ছিলেন পেশায় নার্স অরুণা। অকথ্য যৌন অত্যাচারের জেরে কোমায় চলে যান তিনি। টানা ৪২ বছর চলৎশক্তিহীন হয়ে ছিলেন। যে হাসপাতালে চাকরি করতেন অরুণা, সেই কেইএম হাসপাতালেই এতদিন চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি। গত সপ্তাহে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হন ৬৬ বছরের অরুণা। এত দিন ভেন্টিলেশনে ছিলেন তিনি। কাল সকাল সাড়ে ৮টা নাগাদ তাঁকে মৃত ঘোষণা করা হয়।

ওয়েব ডেস্ক: অরুণা শানবাগ। ৪২ বছরের যুদ্ধ শেষে গতকালই মারা গেছেন তিনি। ১৯৭৩ সালে মুম্বইয়ের সরকারি হাসপাতালে এক কর্মচারীর হাতে ধর্ষিত হয়ে ছিলেন পেশায় নার্স অরুণা। অকথ্য যৌন অত্যাচারের জেরে কোমায় চলে যান তিনি। টানা ৪২ বছর চলৎশক্তিহীন হয়ে ছিলেন। যে হাসপাতালে চাকরি করতেন অরুণা, সেই কেইএম হাসপাতালেই এতদিন চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি। গত সপ্তাহে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হন ৬৬ বছরের অরুণা। এত দিন ভেন্টিলেশনে ছিলেন তিনি। কাল সকাল সাড়ে ৮টা নাগাদ তাঁকে মৃত ঘোষণা করা হয়।
ছটফটে প্রাণশক্তিতে ভরপুর অরুণার ৪২ বছরের এই না-মৃত-না-জীবিত অবস্থার জন্য দায়ী কেইএম হাসপাতালের ওয়ার্ড বয় সোহনলাল ভার্থা বাল্মিকী কিন্তু উপযুক্ত শাস্তি পায়নি। অরুণার গলায় কুকুরের চেন জড়িয়ে তাঁর উপর অকথ্য যৌন অত্যাচারের পরেও স্রেফ আইনি মারপ্যাঁচের বদান্যতায় ছাড় পেয়ে যায় সে। কিন্তু কেন?
১৯৭৩ সালের সেই অভিশপ্ত রাতে অরুণাকে ধর্ষণ করলেও যোনী সঙ্গম করেনি সে। বদলে তাঁর গলায় কুকুরের চেন পেঁচিয়ে জোর করে পায়ু সঙ্গম করে। সেই এক রাতের অত্যাচারের জেরে বছর ২৫ এর অরুণার জীবনের ৪২টা বছর স্থবির হয়ে যায়। নিশ্বাসপ্রশ্বাস চললেও এই দীর্ঘ চার দশকেরও বেশি সময় তিনি কোমায় কাটান। হাসপাতালের ছোট্ট একটা বেডেই তারুণ্য, যৌবন কেটে গিয়ে কখন যে বার্ধক্য তাঁর জীবনকে গ্রাস করে সেই টুকু বোঝার ক্ষমতাও অরুণার থেকে কেড়ে নেয় ওই একটা রাত।
কিন্তু ১৯৭৩ সালের আইন অনুযায়ী জোর করে পায়ু সঙ্গমকে ধর্ষণের আওতায় ফেলা হত না। অতএব ধর্ষিত হয়েও, 'না-ধর্ষিত' হওয়ার তকমা জোটে তাঁর কপালে। আর ছুট পেয়ে যায় ধর্ষক বাল্মীকি।
১৯৭৩ সালের ২৭ নভেম্বর অচৈতন্য অবস্থায় অরুণাকে উদ্ধার করার পর তাঁকে মেডিক্যাল পরীক্ষার জন্য নিয়ে যাওয়া হয়। ওয়ান ফিঙ্গার টেস্টে তাঁর অক্ষত যোনী সঙ্গমের প্রমাণ মেলে। (বর্তমানে ধর্ষণের পরীক্ষার জন্য ওয়ান ফিঙ্গার টেস্টটি বেআইনি)। অতএব সেই সময়ের আইনি পরিভাষায় এই এক পরীক্ষার ভিত্তিতে অরুণার উপর যৌন অত্যাচার 'না-ধর্ষণের' তকমা পায়।
অরুণা যে হাসপাতালে কাজ করতেন সেই হাসপাতালেরই এক জুনিয়র ডাক্তারের সঙ্গে বাগদান সারা হয়ে গিয়েছিল তাঁর। কিন্তু জনসমক্ষে সম্মানহানির ভয়ে তাঁকে বোঝানো হয় তিনি যেন পুলিসের কাছে অরুণার 'অ্যানাল রেপ'-এর অভিযোগ না জানান।
পুলিসের এক সাব ইন্সপেক্টর স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে বাল্মীকির বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন।
আদালত বিচারে জানায় ''যৌন অত্যাচারের সময় রজঃস্বলা ছিলেন নিগৃহীতা। অভিযুক্ত ধর্ষণের অভিসন্ধি নিয়েই সেখানে গিয়েছিল।'' কিন্তু বাল্মীকির বিরুদ্ধে কোনও ধর্ষণের অভিযোগ প্রমাণ করা যায়নি।