নিয়মকে বুড়োআঙুল দেখিয়ে লাগামছাড়া দাম জীবনদায়ী ওষুধের
লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে জীবনদায়ী ওষুধের দাম। কার্যত কোনও নিয়ন্ত্রণই নেই সরকারের। কেন্দ্রের বেধে দেওয়া জীবনদায়ী ওষুধের দামের তালিকাকে বুড়়ো আঙ্গুল দেখিয়ে চলছে ওষুধের দামের ফাটকাবাজি। চব্বিশ ঘণ্টার বিশেষ রিপোর্ট। ফার্মাসিউটিক্যাল রিসার্চ এন্ড ডেভেলপমেন্ট জার্নালের সমীক্ষা বলছে, ভারতে মাথাপিছু চিকিত্সা খরচের ৬৩ শতাংশই খরচ হয় ওষুধের জন্য।
লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে জীবনদায়ী ওষুধের দাম। কার্যত কোনও নিয়ন্ত্রণই নেই সরকারের। কেন্দ্রের বেধে দেওয়া জীবনদায়ী ওষুধের দামের তালিকাকে বুড়়ো আঙ্গুল দেখিয়ে চলছে ওষুধের দামের ফাটকাবাজি। চব্বিশ ঘণ্টার বিশেষ রিপোর্ট। ফার্মাসিউটিক্যাল রিসার্চ এন্ড ডেভেলপমেন্ট জার্নালের সমীক্ষা বলছে, ভারতে মাথাপিছু চিকিত্সা খরচের ৬৩ শতাংশই খরচ হয় ওষুধের জন্য।
ড্রাগ প্রাইস কন্ট্রোল অর্ডার অনুসারে ১৯৭০ সালে সমস্ত জীবনদায়ী ওষুধের দামের ওপরই সরকারি নিয়ন্ত্রণ ছিল। কিন্তু ১৯৭৯ তে সেই সংখ্যা কমে হয় ৩৭৮। ১৯৯৫-এ সেই সংখ্যাটা আরও কমে হয় ৭৪।
অতি সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে সরকার ৩৪৮টি জীবনদায়ী ওষুধের দাম ঠিক করে দেয়। সব কোম্পানির ওই ৩৪৮টি ওষুধ সরকার নির্ধারিত দামে বিক্রি করার কথা। কিন্তু একটি নির্দেশ ব্যাতীত এক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় সরকারের নির্দিষ্ট কোন আইন না থাকায় বাস্তবে কিন্তু দেখা যাচ্ছে অন্য ছবি। শাস্তির সম্ভাবনা না থাকায় বিভিন্ন কোম্পানি গুলি নির্ধারিত দামের ৫০, ৬০ গুণ বেশি দামে বিক্রি করছে এই জীবনদায়ি ওষুধগুলি।
১.অ্যাসপিরিন ফিফটি। সরকার নির্ধারিত দাম এক টাকা দশ পয়সা। কিন্তু এসএ ব্র্যান্ড-নেমে ওই ওষুধই বিক্রি হচ্ছে আট টাকা বিয়াল্লিশ পয়সায়।
২.অ্যাসপিরিন থ্রিফিফটি। এক টাকা বাইশ পয়সায় বিক্রি হওয়ার কথা এই ওষুধের দশটি ট্যাবলেটের একটি পাতা। কিন্তু ইকোস্পিরিন ব্র্যান্ড-নেমে তা বিক্রি হচ্ছে দশ টাকা পঞ্চাশে।
৩.প্রেডনিসোলন টেন। সরকার নির্ধারিত দাম ছ-টাকা চব্বিশ পয়সা। কিন্তু ওয়াইসোলন ব্র্যান্ড-নেমে ওই ওষুধ বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১৪ টাকা ৭২ পয়সায়।
৪.ডেক্সামেথাসন ফোর। ছ-টাকা আটচল্লিশ পয়সার এই ওষুধ ডেকড্যান ব্র্যান্ড-নেমে বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১০ টাকা ৩৬ পয়সায়।
৫.প্রেডনিসোলন ফাইভ। তিন টাকা আটচল্লিশ পয়সার এই ট্যাবলেট ডেল্টাক্রটিল ব্র্যান্ড-নেমে বাজারে বিক্রি হচ্ছে ন টাকারও বেশি দামে।
এভাবেই সরকারি নির্দেশকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে কারবার চালাচ্ছে বেসরকারি ওষুধ প্রস্তুতকারী বিভিন্ন সংস্থা।
এখানেই শেষ নয়। দেখা যাচ্ছে একই নামের ওষুধ বিভিন্ন সংস্থা বিক্রি করছে বিভিন্ন দামে। দুয়ের মধ্যে আকাশ-পাতাল ফারাক।
১-রেসিপেরিডন। এই ওষুধটি টোরেন্ট সংস্থা বিক্রি করছে এক টাকা ঊনসত্তর পয়সায়, আবার এথনরের রেসিপেরিডনের দাম ২৭ টাকা।
২-সিপলার তৈরি লেভোফ্লক্সাসিন দাম ছ-টাকা বিরাশি পয়সা। আর স্যানোফি অ্যাভেন্টিসের লেভোফ্লক্সাসিনের দাম ৯৫ টাকা।
৩-একই ভাবে ইউনিসার্চের তৈরি ক্লপিডোগ্রেলের দাম যেখানে ২৭ টাকা ৫০ পয়সা, স্যানোফি অ্যাভেন্টিস তা বিক্রি করছে ১০৯ টাকা।
৪-ম্যানকাইন্ডের তৈরি অ্যামলোডিপিনের দাম চার টাকা। কিন্তু ফাইজার সংস্থার অ্যামলোডিপিন বিক্রি হচ্ছে ৬৬ টাকা ৯৬ পয়সায়।
কিন্তু কেন এই অবস্থা? একের পর এক দেশীয় সংস্থাকে সংযুক্তিকরণ বা অধিগ্রহণ করে ভারতে ওষুধ ব্যবসার প্রায় অর্ধেকটা নিয়ন্ত্রণ করছে বিদেশি ওষুধ প্রস্তুতকারী সংস্থাগুলি।
ইতিমধ্যেই ম্যাট্রিক্স, র্যানব্যাক্সি ল্যাবরেটরি, ডাবর ফার্মা, ভেটনেক্স, ওকহার্ড, সান্থা বায়োটেক, অর্কিড কেমিক্যালস, পরশ ফার্মাসিউটিক্যালস, পিরামল হেল্থ কেয়ারের মতো একাধিক ভারতীয় ওষুধ প্রস্তুতকারী সংস্থা কিনে নিয়েছে আমেরিকা, জার্মানি, ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, জাপানের বিভিন্ন সংস্থা।
বর্তমানে ওষুধ প্রস্তুতকারী সংস্থাগুলিই নিজেদের তৈরি ওষুধের দাম ঠিক করে নেয়। যাতে কার্যত কোনও ভূমিকাই পালন করে না কেন্দ্র।