মিরাকেল! করোনা আক্রান্ত তরুণীর ‘মৃত’ ফুসফুসকে Ecmo সাপোর্টে বাঁচিয়ে তুললেন কলকাতার চিকিত্সকরা
গত ১৭ মে জ্বর এবং তীব্র শ্বাসকষ্ট নিয়ে ঢাকুরিয়ার বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হন কালিঘাটের ওই তরুণী

তন্ময় প্রামাণিক: করোনা ভাইরাসের সোজা আঘাত ফুসফুসে। অকেজো করে দেওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা। ফুসফুস তার কর্মক্ষমতা হারালেই মৃত্যু অনিবার্য। আর সেই মৃত্যুর গ্রাস থেকে ২৪ বছরের এক মেয়েকে ফিরিয়ে আনলেন কলকাতার এক বেসরকারি হাসপাতালের চিকিত্সকরা। করোনার চিকিত্সায় এই ঘটনা নজিরবিহীন বলে মনে করা হচ্ছে।
ঘটনাটা কী?
গত ১৭ মে জ্বর এবং তীব্র শ্বাসকষ্ট নিয়ে ঢাকুরিয়ার বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হন কালিঘাটের ওই তরুণী। হাসপাতালে যখন তাঁকে ভর্তি করা হয়, শরীরে অক্সিজেনের পরিমাণ মাত্র ৩৪ শতাংশ। ফুসফুস প্রায় তার কর্মক্ষমতা হারিয়েছে। তড়িঘড়ি তাঁকে ভেন্টিলেশনে নিয়ে যাওয়া হয়। যখন তাতেও কাজ হচ্ছে না ১৮ মে তাঁকে একমো সার্পোট দেওয়া হয়।
Ecmo যন্ত্রের সাপোর্ট:
কর্মক্ষমতা হারানো ফুসফুসকে একটানা ৩০০ ঘন্টা ধরে কৃত্রিমভাবে সাপোর্ট দিল এই একমো যন্ত্র। করোনা আক্রান্ত যুবতীর ফুসফুস কার্যত অকেজো হয়ে মৃত্যু সুনিশ্চিত, অক্সিজেনের মাত্রা শরীরে কোন ভাবেই বাড়ানো যাচ্ছিল না, ভেন্টিলেশন সাপোর্ট দিয়েও হচ্ছিল না, তখন বাধ্য হয়ে ক্রিটিক্যাল কেয়ার বিশেষজ্ঞরা একমো যন্ত্রের ব্যবহার করেন এবং তিনশো ঘণ্টা ধরে শরীরে অক্সিজেন সরবরাহ করতে থাকে।
Ecmo সাপোর্ট দেওয়ার পর:
চিকিত্সকরা জানাচ্ছেন, ওই তরুণীকে ১৮ মে একমো সাপোর্ট দেওয়া হয়। ৩০০ ঘণ্টা দেওয়ার পর শারীরিক উন্নতি লক্ষ্য করা যায়। প্রায় ১০ দিন পর সরিয়ে নেওয়া হয় একমো সাপোর্ট।
এরপর ধীরে ধীরে একমো থেকে বের করে ভেন্টিলেশন সাপোর্ট, ভেন্টিলেশন থেকে বের করে আইসিইউ এবং আইসিইউ থেকে এইচডিও। ওই তরুণীকে সুস্থ করে সোমবার বাড়ি ফেরালো ঢাকুরিয়া বেসরকারি হাসপাতালটি। করোনা আক্রান্ত কোনো রোগীকে একমো সাপোর্ট দিয়ে বাঁচানোর এই বিরল কৃতিত্ব এই শহরে এমন ঘটনা প্রথম। এমনটাই দাবি চিকিত্সকদের।
চিকিত্সকদের প্রতিক্রিয়া:
ক্রিটিক্যাল কেয়ার বিশেষজ্ঞ ডক্টর শাশ্বতী সিনহা বলেন, “কোনোভাবেই আমরা এই মেয়েটিকে বাঁচাতে পারবো ভাবতে পারিনি। চেষ্টা করেছি। আমরা দলগতভাবে কাজ করেছি। অবশেষে সাফল্য এসেছে। ১৭ মে যখন ওকে এমার্জেন্সি আনা হয়, করোনা আক্রান্ত হয়ে ফুসফুসের কর্মক্ষমতা প্রায় শেষের দিকে। ভেন্টিলেশন সাপোর্ট তো কোনও ভাবে তার শরীরে প্রয়োজনীয় অক্সিজেন সরবরাহ করা যাচ্ছিল না। তখন আমরা তাকে উপুড় করে শুইয়ে, যে পদ্ধতিতে কোন কোন রোগের ক্ষেত্রে শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা বাড়ানো সম্ভব হয়, সেই চেষ্টা করি। তাতে সফল না হওয়ায় আমরা একমো সাপোর্ট দিই ১২ দিন ধরে।”
উচ্ছ্বসিত চিকিৎসক মহুয়া ভট্টাচার্য যিনি এই রোগীর দেখভালে দায়িত্বে ছিলেন। যন্ত্রটি দিয়ে সাপোর্টের যাবতীয় ব্যবস্থা করেছিলেন চিকিৎসক সোহম মজুমদার।
রোগীর পরিবার কী বলছে?
ওই যুবতীর বাবা বলেন, “আমরা একটা সময় ধরেই নিয়েছিলাম মেয়েকে আর ফিরে পাচ্ছি না। কারণ ভেন্টিলেশন সাপোর্ট দিয়েও তার কাজ হচ্ছিল না। শরীরের প্রয়োজনীয় অক্সিজেন পৌঁছছিল না। ১৭-মে রাত্রি বেলা থেকেই এই সাপোর্ট দিতে হয়েছিল। আজ আমরা বাড়ি ফিরে যাচ্ছি। আনন্দের ভাষা নেই।”
এর আগে AIIMS দিল্লি ও চেন্নাইয়ের একটি বেসরকারি হাসপাতালের Ecmo সাপোর্টে দু’জন রোগীকে রাখা হয়। কিন্তু দুজনেই মারা যান। কলকাতাবাসী এই ২৪ বছর বয়সী মহিলাই দেশে প্রথম কোভিড রোগী যিনি Ecmo সাপোর্ট থেকে বেরিয়ে সুস্থ হয়ে বাড়ি গেলেন।