প্রাণজুড়নো মেলডি, "এক্সট্রা ফ্রি" আদিত্য-শ্রদ্ধা

নব্বই সালের আশিকি-র নস্ট্যালজিয়া নিয়েই এ ছবি দেখতে এসেছেন দর্শক। বলিউড ছবির ইকনমি বদলে গিয়েছে। প্রথম শুক্র, শনি, রবিবারে দর্শকসংখ্যাই ঠিক করে দিয়েছে ছবি হিট না ফ্লপ। একটু সময় নিয়ে সোমবার ম্যাটিনি শো দেখতে গিয়ে যা দৃশ্য দেখলাম, ইদানীং প্রায় কোনও ছবিতেই এমনটা দেখিনি। হল কানায় কানায় পূর্ণ।

Updated By: Apr 29, 2013, 09:49 PM IST

শর্মিলা মাইতি
ছবির নাম- আশিকি টু
রেটিং- ***1/2
নব্বই সালের আশিকি-র নস্ট্যালজিয়া নিয়েই এ ছবি দেখতে এসেছেন দর্শক। বলিউড ছবির ইকনমি বদলে গিয়েছে। প্রথম শুক্র, শনি, রবিবারে দর্শকসংখ্যাই ঠিক করে দিয়েছে ছবি হিট না ফ্লপ। একটু সময় নিয়ে সোমবার ম্যাটিনি শো দেখতে গিয়ে যা দৃশ্য দেখলাম, ইদানীং প্রায় কোনও ছবিতেই এমনটা দেখিনি। হল কানায় কানায় পূর্ণ। নব্বই ভাগ দর্শককে দেখে যা মনে হল, কুড়ি বছর আগের প্রথম আশিকি রিলিজের সময়ে এঁরা নেহাতই দুধের শিশু ছিলেন।

কাজেই প্রথম ধাক্কায় চৌকাঠ পেরিয়ে লাফ দিয়েছে আশিকি টু। ওপেনিং উইকেন্ড কালেকশন ১৪ কোটি। আরও চার দিন বাকি। শুধুই নস্ট্যালজিয়ায় আক্রান্ত মানুষই দেখতে আসেননি বলিউডে যে ফর্মুলায় ছবি হিট হয়, সেই টার্গেট অডিয়েন্সকে টানতে পেরেছে মহেশ ভাট প্রযোজিত আশিকি টু। প্রোমোশনে এসে যিনি নিজের মুখেই বলেছিলেন যে, প্রথম আশিকির জুটিকে কেউ মনে রাখেনি গানগুলোই মনে রেখেছে সবাই, কারণ গানগুলোই ভাল ছিল। নায়ক-নায়িকা নয়!
যিনি নিজের সৃষ্টিকেই এমন ক্রিটিক করতে পারেন, তিনি যে পরিবর্তমান সময়কে চোখ-কান দিয়ে বুঝে নিতে পারেন, তাতে আর বিচিত্র কী! তবে এ ছবিও যত না পরিচালকের, তার চেয়েও বেশি সঙ্গীত পরিচালকের টিমের। যে টিম লিড করছেন জিত্‍ গঙ্গোপাধ্যায়। সঙ্গে সঙ্গত করেছেন মিঠুন ও অঙ্কিত। আশিকি টু যে বাজারে পড়তে-না-পড়তেই প্রযোজক সুদসমেত পয়সা ফেরতের বাস্তব স্বপ্ন দেখে ফেলেছেন চিট ফান্ডের এই ধ্বসের বাজারেও, তার পেছনে আশি শতাংশ এ ছবির প্রাণজুড়নো মিউজিক। বহুদিন বাদে প্লেব্যাক মিউজিকে পাওয়া গেল সেই বিরল মেলডির ছোঁয়া। অতিরিক্ত যন্ত্রানুসঙ্গের চাপে যা প্রায় ডোডো পাখি হয়ে গিয়েছিল এতকাল। গুঁতো মারবে এমন কোনও গান নেই। প্রতিটি গানে আলাদা আলাদা সুরমূর্ছনা একঘেয়েমি কাটায়। অরিজিত্‍ সিং ও পালকের ডুয়েট চাহু ম্যায় ইয়া না.. পুরো ছবিতেই ধ্রুপদ হয়ে থাকে। শ্রেয়া ঘোযালের কণ্ঠও গায়ে শিরশিরানি তোলে। আরও ভালভাবে বললে, গানগুলোই যেন গল্প বলে চলে। অন্যদিকে যে গল্পটা আসলে বলে চলা হয়, সেটা গান দিয়ে লেখা গল্পের চেয়ে দুর্বল।

আশিকি টু মাইনাস নম্বর পাবে এখানেই। আঁট-না-বাঁধা গল্প। ছবিটাকে প্রায় গিলে ফেলতে ফেলতেও ফেলেনি। আদিত্য রায় কাপুরের চরিত্র রাহুল জয়কার অবসাদগ্রস্ত, মাদকাসক্ত প্রতিভাবান গায়ক। অল্প বয়সেই খ্যাতির শীর্ষে পৌঁছে যাওয়ার পর এক নিম্নমুখী কেরিয়ারের সম্মুখীন সে। এই সময়েই সে এক সুরের সরস্বতীর সন্ধান পায় বার সিংগার আরোহীর কাছে। নিজের হাতে তার স্বপ্ন সফল করে দেয়। শুরু হয় সম্পর্কের টানাপোড়েন। চেনা ছক। অনেকটা অমিতাভ-জয়া জুটির ক্লাসিক ছবি অভিমানের গন্ধ পাওয়া যায়। এমনকী একটি দৃশ্যে তো ট্রিবিউট-ও জানানো হল দেখলাম। হোম ডেলিভারি দিতে আসা ছেলেটি অটোগ্রাফ চাইলে রাহুল অটোগ্রাফ দিতে যায়। ছেলেটি বলে ওঠে আপকি নেহী, ম্যাডামকি অটোগ্রাফ চাহিয়ে... যে সাদৃশ্যের কথা বলতে চাইছি, তা নিশ্চয়ই বুঝিয়ে বলতে লাগবে না।
চমকে দিলেন শ্রদ্ধা কাপুর। এমন একটা কোমল বাতাসের ছোঁয়া পেলেন দর্শক, যা সহজে ভোলার নয়। আদিত্য এর আগেই গুজারিশ ছবিতে নজর কেড়েছেন। যথেষ্ট পরিণত অভিনয় বলেই দুর্বল স্ক্রিপ্টেও নিজেকে মেলে ধরেছেন। মোটের ওপর, আশিকি টু-এর সঙ্গে আশিকি ওয়ানের তফাত একটাই। রাহুল-অনু আগরওয়াল জুটিকে আর কেউ মনে রাখেনি। এই জুটিকে কিন্তু দর্শক মনে রেখে দেবেন। বার বার দেখতে চাইবেন। প্রাণ-জুড়নো মিউজিকের পাশাপাশি এইটা "এক্সট্রা ফ্রি"!

.