লড়াইয়ে প্রাণ দিয়ে দিলাম, কিন্তু লড়াইটা কীসের যেন ছিল?
ক-জাত আগে বুঝে নেয় কেন লড়বে, তারপর লড়াইয়ে নামে, খ-জাত ঝাঁপিয়ে পড়ে লড়াই করে, তারপর বোঝে কেন লড়ল, আর গ-জাত লড়াইয়ে প্রাণ দিয়ে দেয়, তারপরও বোঝে না কেন লড়ল...
বিহারের রাজনীতিতে প্রবল জাত-বৈষম্যমূলক একটা প্রবাদের কথা দমদমের ক্রাইস্ট চার্চ স্কুলের ঘটনায় মনে পড়ে. জাতের নাম উল্লেখ না করে প্রবাদটি স্মরণ করাই যায়:
ক-জাত আগে বুঝে নেয় কেন লড়বে, তারপর লড়াইয়ে নামে,
খ-জাত ঝাঁপিয়ে পড়ে লড়াই করে, তারপর বোঝে কেন লড়ল, আর
গ-জাত লড়াইয়ে প্রাণ দিয়ে দেয়, তারপরও বোঝে না কেন লড়ল
ক্রাইস্ট চার্চ স্কুলের ঘটনায় দেখা যাচ্ছে বাংলার সমাজের সর্ব অংশেই এখন খ-জাতের এবং গ-জাতের প্রবল আধিপত্য। ঐন্দ্রিলার মৃত্যু অত্যন্ত বেদনাদায়ক। প্রায় একই রকম বেদনাদায়ক তার জের টেনে পরবর্তী ঘটনায় স্কুলের ছাত্রীদের, তাঁদের অভিভাবকদের, পুলিশের আচরণ।
গ-জাতের ধর্মই হল প্রশ্ন না করা। যুক্তিসঙ্গত উত্তর খোঁজার বদলে অ্যাকশনে ঝাঁপিয়ে পড়া। ঐন্দ্রিলার মৃত্যুর জন্য স্কুলের সিনিয়র ছাত্রীরা কতটা দায়ী? (যদি বাথরুমে আটকে রাখার অভিযোগটা সত্যি হয়ে থাকে। কতটা সত্যি, তা এখনও প্রমাণ হয়নি।) যে ডাক্তার তাকে দেখলেন এবং অনেক ক্ষণ ঘুমোবে বলে ইঞ্জেকশন দিলেন, তিনি কতটা দায়ী? ওই ঘুমই তো ঐন্দ্রিলার আর ভাঙল না! সাধারণত তো এ ক্ষেত্রে চিকিত্সার গাফিলতির তদন্ত হওয়ার কথা, সেই তদন্তে পুলিশের সঙ্গে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদেরও প্রধান ভূমিকা থাকার কথা। ড্রাগ ওভারডোজের ফলে প্রাণহানির ঘটনার কি কোনও নজিরের কথা আমাদের জানা নেই? ঐন্দ্রিলার পরিবারের পক্ষ থেকে প্রথম দিনই নির্দিষ্ট অভিযোগ করা সত্ত্বেও পুলিশ তা নিয়ে মাথা ঘামাল না কেন?
স্কুলে ভাঙচুরের দিন পুলিশ কেন আইনরক্ষকের বদলে প্রমত্ত জনতার বার্তাবাহকের ভূমিকা নিল? সানগ্লাস পরা পুলিশ অফিসারদের বেশ সিনেমার হিরোর মতো স্মার্ট দেখাচ্ছিল। সেই আনন্দে ভেসে গিয়েই সম্ভবত তাঁরা বুঝতে পারেননি যে আসলে তাঁরা জোকারের ভূমিকায় নেমেছেন! জনতার দাবি মেনে স্কুলের অধ্যক্ষকে দিয়ে পদত্যাগপত্র লেখানোর কথাটা যে পুলিশ অফিসারের মাথায় এসেছিল, তিনি আদালতে গিয়ে নিজের কাজের ব্যাখ্যা দিতে পারবেন তো? অবশ্য এত কিছু ভাবার দরকার হয় না যদি আপনি গ-জাতভুক্ত হন। সে ক্ষেত্রে আপনার ভাবনাটা আপনার হয়ে অন্য কেউ ভেবে দেন। অবিমৃষ্যকারিতায় পুলিশের সঙ্গে সমানে সমানে পাল্লা দিয়েছেন অভিভাবকরা। টেলিভিশনে ছবি দেখানোর তুরীয় উত্তেজনায় তাঁরা ভুলে গিয়েছিলেন কী করছিলেন।
নিজের সন্তানের লেখাপড়া সংক্রান্ত নথি যাঁরা নষ্ট করতে পারেন, তাঁরা কেমন অভিভাবক? সেদিনের অমন প্রবল আসুরিক বিদ্বেষ প্রদর্শনের পর আজ তাঁরা অনুতপ্তই বা কেন? তাঁদের কোন দিনের অনুভূতিটা ঠিক? অবশ্য এ সব প্রশ্ন তাঁদের জন্য অবান্তর যাঁরা খ অথবা গ-জাতভুক্ত। যাঁরা আগে লড়াইয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েন, তারপর হয় বোঝেন অথবা বোঝেন না লড়াইটা কী নিয়ে ছিল।
ছাত্রীরাও একই দোষে দুষ্ট। তাঁরা নাবালক। আশা করা যায় নিজেদের এবং আগের প্রজন্মের ভুল থেকে তাঁরা শিক্ষা নেবেন। আগামী দিনের সমাজে অন্তত কিছু ক-জাতভুক্ত মানুষ না থাকলে বিপদ তো সকলেরই!