বিশ্বে প্রতি চারদিনে নিহত এক সাংবাদিক, ভারতে খতরনাক যোগীরাজ্য
পাকিস্তানে ৯০ জন সাংবাদিক নিহত হয়েছেন যা দ্বন্দ্ব এবং সংঘাতে দীর্ণ আফগানিস্তানের তুলনায় বেশি। আফগানিস্তান ৮১ জন সাংবাদিকের হত্যার সাক্ষী হয়েছে। যদিও আফগানিস্তানে ২০১৬ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে মাত্র তিন বছরে এর অর্ধেক মৃত্যু রিপোর্ট করা হয়েছে। ১৯৯৩ সাল থেকে ইরাক সাংবাদিকদের জন্য একটি কবরস্থানে পরিণত হয়েছে। সেখানে ২০১ জন সাংবাদিক নিহত হয়েছেন। এর পরেই রয়েছে মেক্সিকো।
জি ২৪ ঘণ্টা ডিজিটাল ব্যুরো: কেনিয়ায় পাকিস্তানি ইনভেস্টিগেটিভ সাংবাদিক আরশাদ শরীফের মৃত্যুতে উত্তেজনা বেড়েছে পাকিস্তানে। শরীফকে কেনিয়ার পুলিশ গুলি করে হত্যা করেছে বলে জানা গিয়েছে। তারা জানিয়েছে ভুল পরিচয়ের কারণে তাঁর মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়ছে তাঁরা। যদিও এক পিটিআই নেতার সঙ্গে একটি বিতর্কিত সাক্ষাৎকারের পরে তিনি পাকিস্তান থেকে পালিয়ে যাওয়ায় এই ঘটনায় সন্দেহের নজরে রয়েছে আইএসআই। শরীফের মৃত্যু বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে বছরের পর বছর ধরে কর্তব্যরত অবস্থায় নিহত সাংবাদিকদের ক্রমবর্ধমান তালিকায় যুক্ত হয়েছে আরও একটি নাম। উদাহরণ হিসেবে ধরা যায় মেক্সিকোর নাম। সেখানে এক ডজনেরও বেশি সাংবাদিক এই বছরেই নিহত হয়েছেন। কিছু সাংবাদিক নিহত হয়েছে কার্টেলের হাতে এবং কিছু হত্যার পিছনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাত থাকার সন্দেহ করা হয়।
মধ্যপ্রাচ্য, আফ্রিকা অথবা চলমান রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে বিবাদপূর্ণ অঞ্চলে সাংবাদিকরাও বিভিন্ন সময়ে তাদের জীবন দিয়ে কাজ করেছেন।
জাতিসংঘ ২ নভেম্বরকে ‘ইন্টারন্যাশনাল ডে টু এন্ড ইম্পিউনিটি অফ ক্রাইম এগেন্সট জারনালিস্ট’ হিসেবে ঘোষণা করেছে।
ইউনেস্কোর তথ্য অনুযায়ী, ১৯৯৩ সাল থেকে সারা বিশ্বে ১,৫৬৪ জন সাংবাদিক নিহত হয়েছেন। ২০১১ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে বিশ্বের কোনও না কোনও অংশে মোট ৯৫৬ জন সাংবাদিক নিহত হয়েছেন। একই সময়ে আরও ২,৬৫৩ সাংবাদিককে কারারুদ্ধ করা হয়েছে। এর অর্থ হচ্ছে প্রতি চার দিনে একজন সাংবাদিক নিহত হয়েছেন এবং প্রতি তিন দিনে দুইজন সাংবাদিককে বন্দী করা হয়েছে।
যুদ্ধহীন দেশেও সুরক্ষিত নন সাংবাদিকরা
রিপোর্টে দেখা গিয়েছে বহুদিন ধরে চলতে থাকা একটি ট্রেন্ড এখনও বৃদ্ধি পাচ্ছে। ২০১৬ সাল থেকে দেখা গিয়েছে যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশের তুলনায় যুদ্ধহীন দেশে কম সুরক্ষিত সাংবাদিকরা।
সাংবাদিকদের কোনও সুরক্ষিত স্থান নেই
তথ্য দেখায় যে সাংবাদিকদের জন্য কোনও নিরাপদ স্থান নেই। ২০২০-২০২১ সালে নিহত ১১৭ সাংবাদিকের মধ্যে ৭৮ শতাংশ অথবা ৯১ জন সাংবাদিক তাদের অফিস থেকে দূরে থাকাকালীন নিহত হয়েছেন।
বেশিরভাগ হত্যাকাণ্ড তাদের নিউজরুমের বাইরে ঘটেছে। কিছু সাংবাদিককে রাস্তায় অথবা তাদের যানবাহনে খুন করা হয়। অন্যদিকে কিছু সাংবাদিককে অপহরণ করা হয়েছিল এবং তারপরে তাদের মৃত অবস্থায় পাওয়া গিয়েছিল। পাশাপাশি তাদের পরিবারের সদস্যদের এমনকি তাদের সন্তানদের সামনেও বেশ কয়েকজনকে হত্যা করা হয়।
সাংবাদিকদের কবরে পরিণত হয়েছে ইরাক
১৯৯৩ সাল থেকে ইরাক সাংবাদিকদের জন্য একটি কবরস্থানে পরিণত হয়েছে। সেখানে ২০১ জন সাংবাদিক নিহত হয়েছেন। এর পরেই রয়েছে মেক্সিকো। সেখানে ১৫০ জন নিহত হয়েছেন। ফিলিপাইনে মৃত্যু হয়েছে ১১৫ জনের এবং সিরিয়ায় ১১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। একই সময়ে ভারতে ৫৪ জন নিহত হয়েছেম বলে জানা গিয়েছে।
পাকিস্তানে ৯০ জন সাংবাদিক নিহত হয়েছেন যা দ্বন্দ্ব এবং সংঘাতে দীর্ণ আফগানিস্তানের তুলনায় বেশি। আফগানিস্তান ৮১ জন সাংবাদিকের হত্যার সাক্ষী হয়েছে। যদিও আফগানিস্তানে ২০১৬ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে মাত্র তিন বছরে এর অর্ধেক মৃত্যু রিপোর্ট করা হয়েছে।
অন্যদিকে রাশিয়া এবং ইউক্রেনের মধ্যে যুদ্ধে এখনও পর্যন্ত এক ডজনের বেশি সাংবাদিক নিহত হয়েছেন।
আরও পড়ুন: Canada: ২০২৫ পর্যন্ত প্রতি বছর ৫ লক্ষ মানুষকে অভিবাসন দেবে কানাডা! কেন জানলে আশ্চর্য হবেন...
ভারতে উত্তরপ্রদেশ এবং বিহারে নিহত হন সবথেকে বেশি সাংবাদিক
ভারতে, উত্তর প্রদেশ ১২জন এবং বিহার নয় জন সাংবাদিকের মৃত্যু হয়েছে। অন্যান্য রাজ্যের তুলনায় এই দুই রাজ্যে সবথেকে বেশি সাংবাদিক হত্যার খবর পাওয়া গিয়েছে।
সর্বশেষ হত্যাকাণ্ড ঘটেছে বিহারের বেগুসরাই জেলার সাখো গ্রামে। সেখানে নিহত হন স্থানীয় সাংবাদিক সুভাষ কুমার মাহতো। এই বছরের ২০ মে মাহতোকে তার বাড়ির বাইরে দুষ্কৃতীরা গুলি করে হত্যা করে।
ইউনেস্কো জানিয়েছে ২০০৬ সাল থেকে মাত্র ১৩ শতাংশ সাংবাদিকের মৃত্যুর কিনারা হয়েছে। অন্যদিকে মহিলা সাংবাদিকদের মৃত্যুর হারেও বৃদ্ধি দেখা গিয়েছে। ২০২১-২০২২ সালে (৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত) নিহত সাংবাদিকদের ১১ শতাংশ মহিলা। ২০২০ সালে এই মৃত্যুর হার ছিল ছয় শতাংশ।
নতুন চ্যালেঞ্জ কভিড ১৯
পাশাপাশি সাংবাদিকদের সামনে নতুন চ্যালেঞ্জ নিয়ে এসেছে কোভিড ১৯।
অত্যাবশ্যকীয় পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত কর্মী হিসাবে ব্যাপকভাবে স্বীকৃত সাংবাদিকদের গ্রাউন্ড জিরো থেকে জনগণের দুর্ভোগ, স্বাস্থ্য পরিষেবা, অর্থনৈতিক মন্দা এবং সরকারী পদক্ষেপ (অথবা নিষ্ক্রিয়তা) সম্পর্কে রিপোর্ট করার দরকার ছিল কোভিডের সময়ে। এর ফলে তাদের ভাইরাস সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি বৃদ্ধি পায় বহুগুণ। প্রেস প্রতীক প্রচার অনুসারে, ২০২০ সালের মার্চ থেকে ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারির মধ্যে প্রায় ২,০০০ জন সাংবাদিকের মৃত্যু হয় করোনাভাইরাসে।