লজ্জা! ৪০০-৫০০ শ্রমিকের কফিনে দাঁড়িয়ে বিশ্বজয়ের লড়াইয়ে ৩২ দেশ...
কাতারের শীর্ষ কমিটি সর্বদা জানিয়েছে যে ২০১৪ সালে টুর্নামেন্টের জন্য নির্মাণকাজ শুরু হওয়ার পর থেকে বিশ্বকাপ স্টেডিয়ামে অভিবাসী শ্রমিকদের মধ্যে মাত্র তিন জনের কাজের সঙ্গে যুক্ত কারণে মৃত্যু হয়েছে এবং ৩৭ জনের মৃত্যু হয়েছে অন্যান্য কারণে।
জি ২৪ ঘণ্টা ডিজিটাল ব্যুরো: ২০২২ বিশ্বকাপের ডেলিভারির দায়িত্বে থাকা কাতারের আধিকারিক জানিয়েছেন যে বিশ্বকাপ সম্পর্কিত যে নতুন প্রকল্পগুলি তৈরি করা হয়েছে সেইগুলি তৈরির সময় মৃত্যু হওয়া অভিবাসী শ্রমিকের সংখ্যা ‘৪০০ থেকে ৫০০ এর মধ্যে’। ডেলিভারি এবং লিগাসির সুপ্রিম কমিটির সেক্রেটারি জেনারেল হাসান আল-থাওয়াদি একটি সাক্ষাৎকারে স্বীকার করেছেন বলেছেন যে মৃত্যুর সংখ্যার একটি সুনির্দিষ্ট পরিসংখ্যানের বিষয়ে এখনও ‘আলোচনা করা হচ্ছে’। থাওয়াদি টিভি শো পিয়ার্স মরগান আনসেন্সরডকে বলেছেন এই সংখ্যা ‘আনুমানিক ৪০০-র কাছাকাছি’। তিনি বলেন, ‘৪০০ এবং ৫০০-র মধ্যে। আমার কাছে সঠিক সংখ্যা নেই, এটি এমন একটি বিষয় যা নিয়ে আলোচনা করা হচ্ছে’।
তিনি সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন একটি মৃত্যুও অনেক বেশি। কিন্তু পাশাপাশি তিনি আরও জানিয়েছেন যে প্রতি বছর সাইটগুলিতে স্বাস্থ্য এবং নিরাপত্তার মান উন্নত হচ্ছে। তিনি বলেন তাদের বিশ্বকাপের সাইটগুলি যার জন্য তারা দায়িত্বে রয়েছেন সেখানে উন্নতির জন্য ট্রেড ইউনিয়নও রয়েছে।
এই সাক্ষাৎকারের পরে ফেয়ার স্কয়ার অ্যাডভোকেসি গ্রুপের নিকোলাস ম্যাকগিহান বলেন, ‘এটি শ্রমিকদের মৃত্যুর বিষয়ে কাতারের অমার্জনীয় স্বচ্ছতার অভাবের সর্বশেষ উদাহরণ মাত্র। মিডিয়া সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে ঘোষণা করা অস্পষ্ট পরিসংখ্যান নয়, আমাদের সঠিক তথ্য এবং পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত দরকার। ফিফা এবং কাতারকে এখনও অনেক প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে। অন্তত কোথায়, কখন, এবং কীভাবে এই ব্যক্তিরা মারা গিয়েছিল এবং তাদের পরিবার ক্ষতিপূরণ পেয়েছে কিনা।"
কাতারের শীর্ষ কমিটি সর্বদা জানিয়েছে যে ২০১৪ সালে টুর্নামেন্টের জন্য নির্মাণকাজ শুরু হওয়ার পর থেকে বিশ্বকাপ স্টেডিয়ামে অভিবাসী শ্রমিকদের মধ্যে মাত্র তিন জনের কাজের সঙ্গে যুক্ত কারণে মৃত্যু হয়েছে এবং ৩৭ জনের মৃত্যু হয়েছে অন্যান্য কারণে।
মঙ্গলবার একজন সুপ্রিম কমিটির মুখপাত্র বলেছেন, এটি এসসির পাবলিক রিপোর্টিংয়ে বার্ষিক ভিত্তিতে নথিভুক্ত করা হয়। এখানে এসসির অধীনে থাকা আটটি স্টেডিয়াম, ১৭টি অ-প্রতিযোগিতামূলক স্থান এবং অন্যান্য সম্পর্কিত সাইটগুলিকে কভার করে। অন্যদিকে পরিসংখ্যান সম্পর্কিত অন্য কোটগুলি ২০১৪-২০২০ সময়কালের জাতীয় পরিসংখ্যানকে নির্দেশ করে। এখানে কাতারের দেশব্যাপী সমস্ত কাজ-সম্পর্কিত মৃত্যুর (৪১৪) সংখ্যাকে যোগ করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: বালুচিস্তানের কোয়েটায় বোমা বিস্ফোরণ, নিহত ৩ আহত ২৮
২০২১ সালে গার্ডিয়ান একটি গবেষণায় দেখা যায় যে ২০১১ সালে কাতার বিশ্বকাপ আয়োজন করার অধিকার পাওয়ার পরের বছর থেকে ২০২০ সালের মধ্যে ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, বাংলাদেশ এবং শ্রীলঙ্কা পাঁচটি দেশ থেকে ৬,৫০০ এরও বেশি অভিবাসী কর্মীর মৃত্যু হয় কাতারে।
কাতারের সরকার এই পরিসংখ্যান নিয়ে বিতর্ক করেনি। তারা জানিয়েছে যে ‘এই সম্প্রদায়ের মধ্যে মৃত্যুর হার জনসংখ্যার পরিমাণ হিসাব করলে প্রত্যাশিত সীমার মধ্যে রয়ছে’।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের অর্থনৈতিক ও সামাজিক ন্যায়বিচারের প্রধান স্টিভ ককবার্ন বলেছেন, ‘বিশ্বকাপের প্রস্তুতিতে মারা যাওয়া শ্রমিকের সংখ্যাকে ঘিরে অব্যাহত বিতর্ক এই চরম বাস্তবতাকে উন্মোচিত করে যে বহু শোকাহত পরিবার এখনও সত্য এবং ন্যায়বিচারের জন্য অপেক্ষা করছে। গত এক দশকে, হাজার হাজার শ্রমিক কফিনে বাড়ি ফিরেছে, তাদের প্রিয়জনকে কোনও ব্যাখ্যা দেওয়া হয়নি’।