সব জল্পনা উড়িয়ে বহাল তবিয়তে পৃথিবী

একুশ বারো দুহাজার বারো। সব জল্পনাকে মিথ্যে প্রমাণ করে অবসান হল উতকণ্ঠার প্রহর গোণার। কোনও মহাপ্রলয় নয়। কোনও ধ্বংসলীলাও নয়। পৃথিবী চলছে তার নিজস্ব গতিতেই। ভারতীয় সময় বিকেল ৪টে ৪১ মিনিটেধ্বংস হয়ে যাবে পৃথিবী। দীর্ঘদিন ধরে চর্চিত এই বিষয়ে আপাত ইতি পড়ল।

Updated By: Dec 21, 2012, 09:23 PM IST

একুশ বারো দুহাজার বারো। সব জল্পনাকে মিথ্যে প্রমাণ করে অবসান হল উতকণ্ঠার প্রহর গোণার। কোনও মহাপ্রলয় নয়। কোনও ধ্বংসলীলাও নয়। পৃথিবী চলছে তার নিজস্ব গতিতেই। ভারতীয় সময় বিকেল ৪টে ৪১ মিনিটেধ্বংস হয়ে যাবে পৃথিবী। দীর্ঘদিন ধরে চর্চিত এই বিষয়ে আপাত ইতি পড়ল।
কিন্তু চরম উত্তেজনার সেই মুহূর্তের আগে সারা বিশ্বের পাশপাশি এদেশেও ছড়িয়েছিল আতঙ্ক, আশঙ্কা। ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা পেতে সন্ত্রস্ত মানুষ ভিড় জমিয়েছিলেন তীর্থস্থানে। অভয়বাণী দিয়েছিলেন বিজ্ঞানীরা। যুক্তি দিয়ে খন্ডন করেছিলেন পৃথিবী ধ্বংসের তত্ত্ব। একুশে ডিসেম্বরকে দক্ষিণায়নের শেষদিন ছাড়া আর কোনও গুরুত্ব দিতে নারাজ ছিলেন বিজ্ঞানীরা।
কিন্তু মায়া ক্যালেন্ডার নিয়ে কেন এই আতঙ্ক। কোথা থেকে এল পৃথিবী ধ্বংসের তত্ত্ব। দীর্ঘায়িত মায়া ক্যালেন্ডার অনুসারে ২১ ডিসেম্বর ২০১২ শেষ হল ত্রয়োদশ বাকতুন।  কী এই বাকতুন? প্রচলিত রেগোরিয়ান ক্যালেন্ডার অনুসারে ৩৬৫ দিনে একবছর। কিন্তু মায়া ক্যালেন্ডার অনুযায়ী তিনশো ষাটকে কুড়ি দিয়ে গুণ করে যে সংখ্যাটি পাওয়া যায় তা হল ৭২০০ দিন। ওই ৭২০০ দিনে এক কাতুন ধরা হয়। কুড়ি কাতুনে এক বাকতুন। অর্থাত্ সাত হাজার দুশোকে কুড়ি দিয়ে গুণ করলে আসে ১ লক্ষ ৪৪ হাজার দিন। বা ৩৯৪ বছরের কিছু বেশি। এই ৩৯৪ বছরেই এক বাকতুন।
একুশে ডিসেম্বর ত্রয়োদশ বাকতুন শেষে নতুন ক্যালেন্ডারের সূচনা হয়নি মায়া সভ্যতায়। এবং মায়া বংশোদ্ভূতদের বক্তব্য অনুযায়ী ৫২০০ বছরের কাছাকাছি ত্রয়োদশ বাকতুন সম্পূর্ণ হলেই ধ্বংস হয়ে যাবে পৃথিবী। তাঁদের মতে মায়া ক্যালেন্ডার অনুসারে এভাবেই পাঁচবার পৃথিবী ধ্বংস এবং পুনরায় সৃষ্টির তত্ত্ব রয়েছে। এর পিছনে যদিও যুক্তিগ্রাহ্য কোনও কারণ নেই।
অন্য মতে যদিও মায়া ক্যালেন্ডার অনুসারে ত্রয়োদশ বাকতুনের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। কিন্তু ২০ বাকতুনে যেহেতু এক পিকতুন। তাই ধ্বংসের কোনও কারণ নেই। কী হবে ২১/১২/১২-এ? তুঙ্গে উঠেছিল জল্পনা। কী হবে এই ভাবনায় দিনরাত এক হয়েছিল অনেকেরই। বিজ্ঞানের আশ্বাসবাণী যদিও ছিল। তবু প্রবল পরাক্রমে মহাপ্রলয় যদি সত্যিই আসে। চলছিল তারই প্রহরগোণা। সময়টা এল। পেরিয়েও গেল। পৃথিবী কিম্বা তার আকাশ বাতাসে কোনও ছাপই পড়ল না। তবে সত্যিই কি কোনও প্রভাব পড়েনি জনমানসে? স
একবিংশ শতাব্দীর এক দশকের বেশি কেটে গেছে। বিজ্ঞানের উন্নতি অনেক যুগান্তকারী সাফল্য এনে দিয়েছে। তবু জল্পনা কিম্বা গুজবের জেরে  আজও বহু অসম্ভবের সম্ভব হয়ে ওঠার কথা বিশ্বাস করেন বিশ্ববাসী। সেকথাই প্রমাণিত হল একুশে ডিসেম্বর। পৃথিবী সত্যিই ধ্বংস হবে কিনা, এই আশঙ্কায় অনেক জায়গাতেই দুরু দুরু বুকে প্রার্থনা চলল। তবে এই আশঙ্কাকে নেহাত তুড়ি মেরে উড়িয়ে নতুন যুগকে স্বাগত জানানোর দৃষ্টান্তও মিলল দিনভর। তা-ও খোদ মায়া বংশোদ্ভূতদের মধ্যে।
ধ্বংসের হাত থেকে বাঁচতে  পেরুর রাজধানী লিমায় প্রার্থনা শুরু হয়। চিরাচরিত পোশকে প্রার্থনা যোগ দেন অনেককেই। যদি কোনওভাবে ধ্বংসকে এড়ানো যায় এই আশায়। ধরিত্রী মাতার কাছে তাঁদের প্রার্থনা,  পৃথিবীর কোনও ক্ষতি যেন না হয়। 
মায়া ক্যালেন্ডার অনুসারে একুশে ডিসেম্বরই  শেষ হয়ে যাওযার কথা ছিল পৃথিবীর। অধিকাংশ মায়া বংশোদ্ভূতরা যেখানে বসবাস করেন সেই গুয়াতেমালা শহরে কিন্তু ধ্বংস নয়, নতুন যুগ, নতুন সূর্যকে বরণ করে নেওয়ার আয়োজন ছিল দিনভর। 
অনেকেই মনে করেন যে পৃথিবী ধ্বংসের তত্ত্বের সঙ্গে মায়া সংস্কৃতির ঐতিহ্যের বিশেষ কোনও সম্পর্ক নেই। তবুও নিরাপত্তার খাতিরে প্রাচীন মায়া ঐতিহ্যমণ্ডিত স্থানগুলিতে পুলিসি প্রহরা মোতায়েন করা হয়।
মায়া বংশোধূতদের পবিত্র স্থান তিকাল। একুশে ডিসেম্বর সকাল থেকে তিকালের বাইরে প্ল্যাকার্ড হাতে বিক্ষোভে সামিল হলেন মায়া বংশোদ্ভূতরা। বৈষম্যের বিরুদ্ধে, দারিদ্রের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ। মায়া বংশোদ্ভূতদের সংরক্ষিত জায়গায় তৈলখনি চালু করার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ। শিক্ষার দাবিতে প্রতিবাদ দেখান। মায়া বংশোদ্ভূতদের পবিত্র মন্দিরে প্রবেশের দাবিতেও বিক্ষোভ দেখান তাঁরা।
পুজো আর্চায় সামিল হন হন্ডুরাসের মানুষ। প্রকৃতির রোষ থেকে বাঁচতে মায়া বংশোদ্ভূতদের প্রাচীন ঐতিহ্যমণ্ডিত স্থান কোপানে শুরু হয় প্রার্থনা।
কিছু মানুষের বিশ্বাস, পৃথিবী ধ্বংস হলেও বেঁচে যাবে হাতে গোণা কয়েকটি জায়গা। যেমন তুরস্কের সিরিনস। সিরিনসে প্রবেশে জন্য তাই হুড়োহুড়ি পড়ে যায়। ফ্রান্সের ব্র্যাগার্কও রক্ষা পাবে ধ্বংসলীলা থেকে। এমনই জল্পনা ছিল। ব্র্যাগার্কে যদিও আগে থেকেই মোতায়েন করা হয়েছিল পুলিস।
পিছিয়ে ছিল না এদেশও। বারণসীর বিভিন্ন মন্দিরে সকাল থেকেই উপচে পড়েছিলেন দর্শনার্থীরা।
সবমিলিয়ে একদিকে ধ্বংস থেকে রক্ষা, অন্যদিকে নতুনকে বরণের জন্য প্রার্থনা, আতঙ্ক আর আশায় কাটল দুহাজার বারো সালের একুশে ডিসেম্বর।
 

.