Russia Ukraine War: রুমকি-ঝুমকি থেকে স্বাগতা, দেবার্ঘ্য থেকে শাহরুখ, ইউক্রেনে আটকে বাংলার বহু ডাক্তারি পড়ুয়া
দুশ্চিন্তায় অঝোরে কেঁদে চলেছেন মা। জল নেই, আলো নেই, শীতপোশাক নেই। এটিএম বন্ধ, হাতের টাকাপয়সাও শেষ।
নিজস্ব প্রতিবেদন : রুশ হামলায় যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেন (Russia Ukraine War)। বৃহস্পতিবার সকালে রাশিয়ার রাষ্ট্রপতি পুতিন ইউক্রেনে সামরিক অভিযান ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গেই শুরু হয়ে যায় যুদ্ধ। রাজধানী কিয়েভ সহ ইউক্রেনের একাধিক শহরে আছড়ে পড়ে রুশ মিসাইল। মিসাইল হানায় গুঁড়িয়ে গিয়েছে ইউক্রেনের এয়ারবেস। যুদ্ধ শুরুর সঙ্গে সঙ্গেই বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে ইউক্রেনের আকাশসীমা। যারফলে ইউক্রেনে আটকে পড়া ভারতীয় নাগরিক থেকে পড়ুয়াদের উদ্ধারে দেখা দিয়েছে সমস্যা। কারণ এয়ারস্পেস বন্ধ থাকায় বিমান ওঠা-নামা বন্ধ। বিকল্প উপায়ে কীভাবে ভারতীয়দের দেশে ফেরানো যায়, তা নিয়ে ভাবনাচিন্তা শুরু করেছে বিদেশমন্ত্রক। উল্লেখ্য, আটকে পড়া ডাক্তারি পড়ুয়াদের (Medical Student) মধ্যে বাংলারও বহু মেডিকেল ছাত্রছাত্রী রয়েছে। প্রবল উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা, দুশ্চিন্তায় রয়েছে তাঁদের পরিবার। আতঙ্কের প্রহর গুনছে যেন! সন্তানদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পেরেছেন হয়তো, কিন্তু আতঙ্ক-উদ্বেগে ঘুম উড়েছে মা-বাবার। সন্তানের সুন্দর ভবিষ্যতের আকাঙ্খাতেই বিদেশ বিঁভুইয়ে পড়তে পাঠিয়েছিলেন। কিন্তু কে জানত, হঠাৎ করে এমন যুদ্ধ শুরু হয়ে যাবে!
দুর্গাপুরের যমজ বোন রুমকি ও ঝুমকি
মা স্বাস্থ্যকর্মী। বাবা একটি রাস্তায়ত্ত্ব তেল-গ্যাস সংস্থার অস্থায়ী কর্মী। ছোটবেলা থেকে ২ যমজ বোন রুমকি ও ঝুমকির স্বপ্ন ছিল চিকিৎসক হওয়া। দুর্গাপুর টু ইউক্রেন। স্বপ্নপূরণের লক্ষ্যেই দুর্গাপুরের (Durgapur) কোকওভেন থানার অন্তর্গত রাতুড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা ঝুমকি ও রুমকি গাঙ্গুলি ইউক্রেনের খারকিভ ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে পড়াশোনা করতে গিয়েছিল গত ডিসেম্বরে। কিন্তু যুদ্ধ (Russia Ukraine War) শুরু হতেই গতকাল থেকে ইউনিভার্সিটির নিজস্ব বেসমেন্টে ঠাঁই নিয়েছে। অহরহ ভারী বুটের শব্দ আর মুর্হুমুর্হু বোমা-গুলির আওয়াজ। জল নেই, আলো নেই, শীতপোশাক নেই, হাতের টাকাপয়সাও শেষ। এদিকে মাত্র কিছুক্ষণের জন্য মেয়েদের গলা শুনতে পেয়েছিলেন সুনন্দা ও ধীরেন গাঙ্গুলি। কীভাবে ২ মেয়ে ফিরবে, তা ভেবে কূলকিনারা করে উঠতে পারছেন না রুমকি-ঝুমকির বাবা ধীরেন গাঙ্গুলি। মেয়েদের দুশ্চিন্তায় অঝোরে কেঁদে চলেছেন মা সুনন্দা গাঙ্গুলি। চাইছেন সরকার ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করুক দুই মেয়েকে।
আরামবাগের দেবার্ঘ্য
ডাক্তারি পড়তে গিয়ে যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেনে আটকে পড়েছে আরামবাগের (Arambag) ছেলে দেবার্ঘ্য পোড়ে। ভয়ঙ্কর দুশ্চিন্তায় দিন কাটাচ্ছেন তাঁর পরিবারের লোকেরা। কীভাবে কবে কখন ঘরের ছেলে ঘরে ফিরবে, সেই আশায় তাকিয়ে আছেন সরকারের দিকে। আরামবাগ পুরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের বৃন্দাবনপুরে বাড়ি দেবার্ঘ্যের। ২০১৯-এর ২১ নভেম্বর ইউক্রেনের লভিভ শহরে ডাক্তারি পড়তে যায় দেবার্ঘ্য। বাড়ি ফেরার কথা ছিল কয়েকদিন পর ৩ মার্চ। কিন্তু তার আগেই শুরু হয়ে গিয়েছে যুদ্ধ (Russia Ukraine War)। শুক্রবার ভোরে একবার ছেলের সাথে কথা হয়েছে। বাবা আশিস পোড়ে ও মা কৃষ্ণা পোড়ে জানিয়েছেন, আপাতত সুস্থ আছে। জল ও খাওয়ার সমস্যা রয়েছে। ভারতীয় দূতাবাস থেকে যোগাযোগ করেছিল। যতক্ষণ না ছেলে বাড়ি ফিরছে, ততক্ষণ উৎকণ্ঠাতেই কাটবে।
সবংয়ের সুশোভন বেরা
কয়েকমাস আগে ইউক্রেনে ডাক্তারি পড়তে গিয়েছে পশ্চিম মেদিনীপুরের সবংয়ের (Sabang) বাসিন্দা সুশোভন বেরা। সুশোভন ইউক্রেনের কিয়েভ মেডিকেল ইউনিভার্সিটির তৃতীয় বর্ষের ছাত্র। ২০২১-এর জুলাইতে একবার বাড়ি এসেছিল। তারপর সেপ্টেম্বর মাসে ফের ফিরে যায় ইউক্রেন। এখন যুদ্ধ (Russia Ukraine War) শুরু হওয়ার পর থেকে একটি বহুতলের আন্ডারগ্রাউন্ডে আশ্রয় নিয়েছেন ডাক্তারি পড়ুয়া সুশোভন। শুধু হোয়াটসঅ্যাপ কলই ভরসা। তবে মোবাইলের চার্জও প্রায় শেষের পথে। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশে ছেলে কেমন আছে, কীভাবে ফিরবে, দুশ্চিন্তায় নাওয়া-খাওয়া ভুলেছে বাবা নারায়ণ চন্দ্র বেরা ও মা নিভা রানি বেরা।
রায়দিঘির অর্ঘ্য ও অর্কপ্রভ
ইউক্রেনের সঙ্গে রাশিয়া যুদ্ধ শুরু হতেই ঘুম উড়েছে রায়দিঘির (Raidighi) খাড়ি গ্রামপঞ্চায়েতের মন্ডলপাড়ার বাসিন্দা বিশাখা মাঝি ও শিবশঙ্কর মাঝির। একমাত্র ছেলে অর্ঘ্য মাঝি ডাক্তারি পড়তে ২০২১-এর অক্টোবরে ইউক্রেনে যায়। যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেন (Russia Ukraine War) থেকে ফোনে অর্ঘ্য জানিয়েছে, চারিদিকে শুধুই বোমাগুলির শব্দ শোনা যাচ্ছে। বাড়ি ফিরতে চায় সে। কিন্তু তার কাছে বিমান ভাড়া নেই। বিমান পরিষেবাও বন্ধ। বাবা শিবশঙ্কর মাঝি স্থানীয় একটি ওষুধের দোকানে কাজ করেন। মা বিশাখা মাঝি জানান, অনেক কষ্ট করে ছেলেকে বিদেশে ডাক্তারি পড়তে পাঠিয়েছিলেন। ছেলে বাড়ি ফিরতে চাইলেও তাঁরা নিরুপায়। অর্ঘ্যর পাশাপাশি রায়দিঘির কাশিনগরের বাসিন্দা অর্কপ্রভ বৈদ্যও ডাক্তারি পড়তে গিয়ে আটকে পড়েছে যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেনে।
গোবরডাঙার স্বাগতা
ইউক্রেনে আটকে উত্তর ২৪ পরগনার গোবরডাঙার (Gobordanga) স্বাগতা সাধুখাঁ। গোবরডাঙার বেড়গুম ১ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের লক্ষ্মীপুর গ্রামের বাসিন্দা দেবাশিষ সাধুখাঁর মেয়ে স্বাগতা। ৩ বছর আগে ডাক্তারি পড়তে ইউক্রেনে যায় স্বাগতা। যুদ্ধ (Russia Ukraine War) শুরু হতেই উৎকণ্ঠায় পরিবার। মেয়ে কীভাবে কবে ঘরে ফিরবে? আতঙ্কের মধ্যে কাটছে সময়। নাতনি অন্ত প্রাণ স্বাগতার ৯০ বছরের ঠাকুমা যমুনা বালা সাধুখাঁ। তাঁর কাছে আড়াল করা হয়েছে এই যুদ্ধের খবর।
অশোকনগরের তারিকুল
অশোকনগরের (Ashoknagar) ভাটশালা এলাকার বাসিন্দা বছর ২৩-এর তারিকুল রহমান মন্ডল। ২০২০-র ১১ এপ্রিল মেডিকেল পড়তে ইউক্রেন যায় তারিকুল। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে বাড়ি ফেরার টিকিটও কেটেছিল সে। আগামী ১৫ মার্চ বাড়ি ফেরার কথা ছিল। কিন্তু তার আগেই ছন্দপতন। শুরু হয়ে গিয়েছে যুদ্ধ (Russia Ukraine War)। কান্নায় ভেঙে পড়েছে তারিকুলের মা। পরিবারের সদস্যদের কাতর আবেদন, ছেলেকে নিরাপদে বাড়ি ফিরিয়ে নিয়ে আসুক সরকার।
ইসলামপুরের পাভেল
উত্তর দিনাজপুরের ইসলামপুরের (Islampur) রামকৃষ্ণ পল্লির বাসিন্দা রথীন দাসের ভাইপো পাভেল দাস ৩ বছর আগে ডাক্তারি পড়তে ইউক্রেনে যায়। রাশিয়া ইউক্রেন আক্রমণ (Russia Ukraine War) করতেই উদ্বেগের মধ্যে রয়েছে গোটা দাস পরিবার। সর্বক্ষণ টিভির পর্দায় চোখ রেখে চলেছেন পাভেলের মা অনুপমা দাস। ইউক্রেন থেকে পাভেল জানিয়েছে, ঘরবন্দি তারা। ৭ তারিখ দেশে ফেরার টিকিট কেটেছিল আগেই। কিন্তু ফিরতে পারবেন কিনা, এখন তা অনিশ্চিত। ছেলের সঙ্গে মোবাইলে কথার ফাঁকেই, দুশ্চিন্তা আর উদ্বেগে চোখের জল বাঁধ মানছে না মায়ের। ছেলে তাড়াতাড়ি ইউক্রেন থেকে দেশে ফিরে আসুক। এটাই শুধু চান তিনি।
সিউড়ির শাহরুখ
ইউক্রেনের সঙ্গে রাশিয়ার যুদ্ধ (Russia Ukraine War) শুরু হতেই রাতের ঘুম উড়েছে বীরভূমের সিউড়ির (Suri) ডাক্তারি পড়ুয়া শাহরুখ সুলতান আহমেদের পরিবারের। ২৪ বছর বয়সী শাহরুখ ২০১৬ থেকে কিয়েভ মেডিকেল ইউনিভার্সিটিতে পড়াশোনা করছেন। বৃহস্পতিবার ভোর রাতে রাশিয়া হামলা করার পরই তারা বন্ধুরা একত্রিত হয়ে একটি জায়গায় রয়েছে। পরিকল্পনা চলছে একটি রুটম্যাপ তৈরি করে ইউক্রেন থেকে অন্য দেশ হয়ে ভারতে ফিরে আসার। কিন্তু সুযোগ পাওয়া যাচ্ছে না। কারণ এই মুহূর্তে ইউক্রেনের রাস্তায় গাড়ির চাকা ঘুরছে না। সবাই চাইছেন একসঙ্গে দেশ ছাড়ার। স্বাভাবিকভাবেই গোটা দেশজুড়ে দেখা দিয়েছে যানজট। এর পাশাপাশি খাওয়া-দাওয়া, টাকাপয়সা নিয়েও চিন্তা রয়েছে। কারণ এটিএম পরিসেবা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন, Ukraine-এ আটকে মেডিকেল পড়ুয়া পুষ্পক, আতঙ্কে সোনারপুরের পরিবার