পুজোয় নতুন জামা নিয়ে বিবাদের জেরে ১২ বছরের ছেলেকে খুনের চেষ্টা মায়ের

সেকথা জানতে পেরে উগ্রচণ্ডী রূপ ধারণ করেন পাপিয়াদেবী। অভিযোগ, আয়নার কাচ ভেঙে ছেলে সুশোভনকে খুন করার চেষ্টা করেন তিনি। প্রাণ বাঁচাতে মায়ের হাত চেপে ধরে তারস্বরে চেঁচাতে থাকে সুশোভন। চিৎকার শুনে ছুটে আসেন প্রতিবেশীরা। সেই সুযোগে এক ছুটে থানায় চলে যায় সে। 

Updated By: Oct 10, 2019, 12:33 PM IST
পুজোয় নতুন জামা নিয়ে বিবাদের জেরে ১২ বছরের ছেলেকে খুনের চেষ্টা মায়ের

নিজস্ব প্রতিবেদন: গলা কেটে ১২ বছরের ছেলেকে খুন করতে চেয়েছিলেন মা। প্রাণ বাঁচাতে থানায় গিয়ে আছড়ে পড়ল ছেলে। প্রাথমিক চিকিৎসার পর নাবালকের সম্বিত ফিরলে পুলিস কাকুদের সব কথা খুলে বলে সে। তাতেই হতবাক মারিশদা থানার পুলিসকর্মীরা। সুশোভন সামন্ত নামে ওই নাবালককে আপাতত সরকারি হোমে পাঠিয়েছে পুলিস। 

 

ঘটনা সূত্রপাত পুজোর আগে। পূর্ব মেদিনীপুরের মারিশদা থানা এলাকার রানিয়া গ্রামের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র সুশোভন সামন্তর বাবা কেরলে রাজমিস্ত্রীর কাজ করেন। পুজোয় বাড়ি ফিরতে পারেননি তিনি। তবে নতুন পোশাক কেনার জন্য কিছু টাকা পাঠিয়েছিলেন। সুশোভনের মা পাপিয়া সামন্ত পেশায় বিড়ি শ্রমিক। সংসার খরচ চালাতে কিছু টাকা ধার হয়েছিল তাঁর। স্বামীর পাঠানো টাকায় সেই ধার শোধ করেন তিনি। বাকি টাকা দিয়ে ছেলেকে পুজোর পোশাক কিনে দেন। কিন্তু সেই পোশাক পছন্দ হয়নি সুশোভনের। ভাল পোশাক কিনে দেওয়ার বায়না ধরে সে। 

মায়ের কাছে আবদার করে কাজ না হওয়ায় গোপনে ফোনে মামার সঙ্গে যোগাযোগ করে সুশোভন। অনলাইনে জামা কিনতে চেয়ে মামার কাছ থেকে ডেবিট কার্ডের তথ্য নেয় সে। একথা জানতে পেরে বেজায় রেগে যান পাপিয়াদেবী। গোটা পুজো ছেলেকে বাড়িতে আটকে রাখেন তিনি। এমনকী সুশোভনকে তিনি কিছু খেতে দেননি বলেও অভিযোগ। ঘরের কোনে থাকা মুড়ি খেয়ে গোটা পুজো কাটায় ওই নাবালক। বিজয়া দশমীর দিন ক্ষিদে সহ্য করতে না পেরে পাশে পিসির বাড়িতে ভাত খেতে যায় সুশোভন। সেকথা জানতে পেরে উগ্রচণ্ডী রূপ ধারণ করেন পাপিয়াদেবী। অভিযোগ, আয়নার কাচ ভেঙে ছেলে সুশোভনকে খুন করার চেষ্টা করেন তিনি। প্রাণ বাঁচাতে মায়ের হাত চেপে ধরে তারস্বরে চেঁচাতে থাকে সুশোভন। চিৎকার শুনে ছুটে আসেন প্রতিবেশীরা। সেই সুযোগে এক ছুটে থানায় চলে যায় সে। 

থানায় ঢুকে কোনও কিছু বলার আগেই সংজ্ঞা হারিয়ে মাটিতে আছড়ে পড়ে সুশোভন। গলায় ও শরীরের একাধিক জায়গায় গভীর ক্ষত থেকে তখনও চলছে রক্তক্ষরণ। চোখে মুখে জল দিয়ে তাঁর জ্ঞান ফিরিয়ে গোটা ঘটনা জানতে পারেন পুলিসকর্মীরা। কাঁদতে কাঁদতে মায়ের নির্যাতনের কথা পুলিসকাকুদের জানায় সুশোভন। 

গোটা ঘটনা জেনে ফোনে সুশোভনের বাবাকে তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরতে বলেছে পুলিস। ওদিকে মায়ের কাছে ফিরতে না-চাওয়ায় সপ্তম শ্রেণির ওই ছাত্রকে সরকারি হোমে পাঠানো হয়েছে। ঘটনায় পাপিয়াদেবীর বিরুদ্ধে খুনের চেষ্টার অভিযোগ দায়ের করেছেন তাঁর ননদ। থানায় এসে পুলিসকে মৌখিক অভিযোগ জানিয়েছেন প্রতিবেশীরাও। 

ঘটনার তদন্তে নেমে পুলিস একাধিক দিক খতিয়ে দেখছে। পাপিয়া দেবীর মানসিক ভারসাম্যহীনতার শিকার হতে পারেন বলে অনুমান তাঁদের। এমনকী স্বামীর অনুপস্থিতিতে পরকীয়া থেকে ছেলেকে খুনের পরিকল্পনা কি না তাও খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা। 

.