Santosh Trophy Final 2022: প্রতিশোধ অধরা, হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের পরেও টাইব্রেকারে ৪-৫ ব্যবধানে কেরলের কাছে হেরে গেল বাংলা
১২ নম্বর জার্সিধারী সজল বাগ তাঁর জীবনের সবচেয়ে মোক্ষম টাইব্রেকার মিস করলেন।
নিজস্ব প্রতিবেদন: মেগা ফাইনালে কেরল যে ফেভারিট, সেটা প্রমাণ হয়ে গেল। টাইব্রেকারে ৪-৫ ব্যবধানে বাংলাকে হারিয়ে এই নিয়ে সপ্তমবার সন্তোষ ট্রফি জিতে নিল বিনো জর্জের দল।
গত কয়েকটা বছর ভাল কাটেনি। ২০১৭-১৮ মরশুমে এই কেরলের বিরুদ্ধে যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে টাইব্রেকারে (৪-২) হেরে গিয়েছিল বাংলা। এ বার গরুপ পর্বেও ০-২ ব্যবধানে হার। ফাইনালেও সেই একই পরিণতি। চাপের কাছে মাথানত করে ফের একবার কেরলের কাছেই হারতে হল বাংলাকে।
১২ নম্বর জার্সিধারী সজল বাগ তাঁর জীবনের সবচেয়ে মোক্ষম টাইব্রেকার মিস করলেন। ৯০ মিনিট গোলশূন্য থাকার পর, খেলা গড়িয়েছিল এক্সট্রা টাইমে। সেখানেও একরাশ নাটক। ৯৬ মিনিটে বাংলা এগিয়ে গেলেও, ১১৭ মিনিটে গোল করে সমতা ফেরায় কেরল। এরপর খেলা টাইব্রেকারে গড়ালে দ্বিতীয় শটই পোস্টের বাইরে মেরে দেন সজল। আর সেখানেই সব আশা শেষ। ৩৩বার সন্তোষ জিতে ইতিহাস গড়া হল না। গ্রুপ পর্বে হারের প্রতিশোধও অধরাই রয়ে গেল।
মেগা ফাইনালের পরতে পড়তে এত উত্তেজনা থাকবে সেটা হয়তো ভারতীয় ফুটবলের অতি বড় সমর্থকও ভাবতে পারেননি। সোমবার কানায় কানায় ভরে ওঠা মাঞ্জেরি স্টেডিয়ামে ফেভারিট কেরলকে ১-০ গোলে হারিয়ে সন্তোষ ট্রফি জিতে নিল বাংলা। তাও পুরো ৯০ মিনিট সেয়ানে সেয়ানে টক্কর দেওয়ার পর, এক্সট্রা টাইমেও ফলাফল ছিল ১-১। কিন্তু শেষ পর্যন্ত শেষ হাসি হাসলেন ফারদিন আলি মোল্লা, সুজিত সিংরা। সৌজন্যে এক্সট্রা টাইমে দিলীপ ওরাওয়ের সেই লাখ টাকার গোল।
এক্সট্রা টাইমের সেই সোনালি মুহূর্তের অপেক্ষায় ছিল গোটা বাংলা। ৯৬ মিনিটের খেলা চলছে। মাঠের ডান প্রান্ত থেকে সুপ্রিয় মান্ডির ঠিকানা লেখা ভলি চলে যায় বক্সের দিকে ধেয়ে আসা দিলীপ ওরাওয়ের দিকে। ভুল করেননি এই বঙ্গ স্ট্রাইকার। শরীরকে একেবারে সামনের দিকে ভাসিয়ে মাথায় বল ছোঁয়ালেন। বল জালের ডান দিকে জড়িয়ে যেতেই রঞ্জন ভট্টাচার্যের ছেলের পাগলের মতো মাঠে ছুটতে শুরু করে দিয়েছেন। কোচ আকাশের দিকে দুই হাত তুলে নমস্কার করে ঈশ্বরকে ধন্যবাদ জানাচ্ছেন।
আর অন্যদিকে মাঞ্জেরি স্টেডিয়াম যেন শ্মশান। একটা পিন ফেলেলেও, আওয়াজ কানে ভেসে আসবে। ‘হোম টিম’, যারা আবার ফেভারিট, তারা গোল হজম করতেই একেবারে চুপ মাঞ্জেরির গ্যালারি। কিন্তু কিছুক্ষণ পরেই বদলে গেল ছবি। কারণ এক্সট্রা টাইমের ১১৭ মিনিটের মাথায় বিবিয়ান অজয়ন কেরলের হয়ে গোল শোধ করতেই মাঞ্জেরির গ্যালারিকে যেন আটকে রাখা যাচ্ছিল না! গগনভেদী চিৎকারে তখন কান পাতা দায়।
কেরলের ঐতিহ্যবাহী মাঞ্জেরি স্টেডিয়ামের কানায় কানায় ভরা গ্যালারি, টিকিট না পেয়ে মাঠের বাইরে থাকা সেই অগণিত মুখগুলো বুঝিয়ে দিচ্ছিল এ বারের সন্তোষ ট্রফির ফাইনালে অনেক মশলা লুকিয়ে রয়েছে। ৯০ মিনিটের পর এক্সট্রা টাইমের ৩০ মিনিটের টানটান যুদ্ধে সেটা বারবার ধরা পড়ল। প্রথমার্ধ থেকে দ্বিতীয়ার্ধের শেষ পর্যন্ত দুটি দলই গোল করার একাধিক সুযোগ পেয়েছিল। কিন্তু গোল মুখ খোলেনি।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত অবশ্য বেশি আক্রমণ চালিয়ে গেল ‘হোম টিম’। কিন্তু গোলের নীচে অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছিলেন প্রিয়ন্ত সিং। অবশ্য মনোতোষ চাকলাদার, তুহিন দাসেরও প্রশংসা করতে হবে। যে ভাবে নিজেদের প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে ফাইনাল ট্যাকেল করলেন, সেটা অনেক বছর মনে থাকবে।
কিন্তু এই মনে রাখায় কি আর লাভ! ২০১৭-১৮ মরশুমে যুবভারতীর মেগা ফাইনালে হারের পর এ বার ফের তীরে এসে তরী ডুবল। খালি হাতেই ফিরছে বঙ্গব্রিগেড।