Exclusive, Mohsin Khan: 'অখ্যাত' মহসিনের কাছে নাকি শামির থেকে বেশি রসদ আছে! চাঞ্চল্যকর দাবি করলেন ছোটবেলার কোচ

এভাবেই ফিরে আসা যায়। কয়েক মাস আগের কথা। কাঁধে রক্ত জমাট বেঁধে যাওয়ার জন্য হাসপাতালে ভর্তি থাকতে হয়েছিল। অস্ত্রোপচার করাতে হয়। গত বছরের ২২ অক্টোবর হাসপাতালে বিছানা ছিল তাঁর ঠিকানা। তবে ২০২৩ সালের ১৬ মে ছবিটা একেবারে বদলে গেল। এক সময় চোটে জর্জরিত থাকা মহসিন খান এক বুক সাহস নিয়ে মুম্বই ইন্ডিয়ান্সকে রুখে দিলেন। 

Reported By: সব্যসাচী বাগচী | Edited By: সব্যসাচী বাগচী | Updated By: May 17, 2023, 02:20 PM IST
Exclusive, Mohsin Khan: 'অখ্যাত' মহসিনের কাছে নাকি শামির থেকে বেশি রসদ আছে! চাঞ্চল্যকর দাবি করলেন ছোটবেলার কোচ
শেষ ওভারে মুম্বই ইন্ডিয়ান্সকে রুখে দিয়ে মহসিন খানের হুঙ্কার। ছবি: টুইটার

সব্যসাচী বাগচী 

টেলিভিশন থেকে সোশ্যাল মিডিয়া, গত আইপিএল (IPL 2022) জুড়ে একটাই নাম সবার মুখে ঘুরে বেড়াচ্ছিল। তিনি উমরান মালিক (Umran Malik)। তবে শুধু উমরান নন। আরও একজন অখ্যাত জোরে বোলার ইতিমধ্যেই তাঁর পেস ও সুইংয়ের সৌজন্যে নজরে এসেছিলেন। তিনি উত্তরপ্রদেশের মোরাদাবাদ থেকে উঠে আসা মহসিন খান (Mohsin Khan)। কিন্তু তাঁর ক্রিকেট যাত্রা এত সহজ ছিল না। কয়েক মাস আগের কথা। কাঁধে রক্ত জমাট বেঁধে যাওয়ার জন্য হাসপাতালে ভর্তি থাকতে হয়েছিল। অস্ত্রোপচার করাতে হয়। গত বছরের ২২ অক্টোবর হাসপাতালে বিছানা ছিল তাঁর ঠিকানা। তবে ২০২৩ সালের ১৬ মে ছবিটা একেবারে বদলে গেল। এক সময় চোটে জর্জরিত থাকা মহসিন এবারের আইপিএল-এ (IPL 2023) খেলতে নেমে মুম্বই ইন্ডিয়ান্সকে (Mumbai Indians) রুখে দিলেন। 

প্রথমে ব্যাট করে ৩ উইকেটে ১৭৭ রান তুলেছিল লখনউ। জবাবে রান চেজ করতে নেমে প্রায় জয়ের কাছে চলে এসেছিল মুম্বই। শেষ ওভারে দরকার ছিল ১১ রান। ক্রিজে ছিলেন টিম ডেভিড (Tim David) ও ক্যামেরুন গ্রিন (Cameron Green)। তবে চাপে চুপসে না গিয়ে একটা স্বপ্নের স্পেল করলেন। নিখুঁত ও ঘাতক ইয়র্কারে আটকালেন অস্ট্রেলিয়ার দুই ব্যাটারকে। মাত্র পাঁচ রান খরচ করলেন মহসিন। ফলে পাঁচ রানে ম্যাচ জিতে মাঠ ছাড়ল ক্রুনাল পান্ডিয়ার (Krunal Pandya) দল। 

গত বছর মাত্র ২০ লাখ টাকায় তাঁকে নিলাম টেবিল থেকে কিনে নিয়েছিল লখনউ সুপার জায়ান্ট (Lucknow Super Giants)। দলের ‘মেন্টর’ গৌতম গম্ভীর (Gautam Gambhir) তাঁকে দলের নেওয়ার পর থেকে বাকিটা ছিল ইতিহাস। প্রথমবার এত বড় মঞ্চে নেমেই সাড়া ফেলে দিয়েছিলেন। ৯ ম্যাচে নিয়েছিলেন ১৪টি উইকেট। এরমধ্যে সেরা পারফরম্যান্স ছিল দিল্লি ক্যাপিটালসের বিরুদ্ধে। সেই মহসিন চোটের জন্য প্রায় ক্রিকেট ছাড়তে চেয়েছিলেন! 

এহেন মহসিনের ব্যাপারে খোঁজখবর নিতে গিয়ে আমাদের কলকাতা ময়দানের কানেকশন খুঁজে পাওয়া গেল। মহসিন এখনও পর্যন্ত ময়দানে পা রাখেননি। তবে তাঁর কোচ ও মেন্টরের সঙ্গে গঙ্গাপাড়ের মাঠগুলোর নিবিড় যোগাযোগ। কোচ বদরুদ্দিন আহমেদ (Badruddin Ahamed)। আর ২৪ বছরের ছেলেটার ‘মেন্টর’ এক ও অদ্বিতীয় মহম্মদ শামি (Mohammed Shami)। এই বদরুদ্দিনের হাতধরেই একটা সময় মোরাদাবাদের সহেসপুর গ্রাম থেকে কলকাতা ময়দান হয়ে ভারতীয় ক্রিকেটে পা রেখেছিলেন টিম ইন্ডিয়ার (Team India) পেসার।

এহেন বদরুদ্দিন জি ২৪ ঘণ্টাকে বললেন, "আমার দুই ছাত্র শামি ও মহসিনের মধ্যে অনেক মিল আছে। দুজনেই প্রচণ্ড অলস, বিরিয়ানির পর ঘুমোতে যাওয়ার একটু জায়গা পেলে আর কিছুই চায় না। এবং দুজনেই শুরুতে ব্যাটার হতে চেয়েছিল!"

টেলিফোনে কথাগুলো বলতে গিয়ে নিজের খেয়ালে অতীতে ফিরে গেলেন বদরুদ্দিন। যোগ করলেন, "মহসিনকে ওর দাদা আমার কাছে নিয়ে এসেছিল। ওর তখন মাত্র ১২ বছর বয়স। ঠিক শামি যেমন ওর দাদার হাতধরে আমার কাছে এসেছিল। তবে শামি শুরু থেকেই খুব সিরিয়াস ছিল। মহসিন কিন্তু তেমন ছিল না। আসলে ওর নিজের প্রতিভা সম্পর্কে ধারণাই ছিল না। তাই তো সেই কবে উত্তর প্রদেশের হয়ে অনুর্ধ্ব-১৬ ও  ১৯ খেলে ফেলার পরেও নিজের নামে প্রতি সুবিচার করতে পারেনি। অনুর্ধ্ব-১৯ প্রতিযোগিতার মাত্র তিন ম্যাচে ২৭ উইকেট নেওয়ার পরেও নিজের খেই হারিয়ে ফেলেছিল!”

আরও পড়ুন: Mohsin Khan, IPL 2023: কামব্যাক ম্যাচে দুরন্ত পারফরম্যান্স, বাবাকে উৎসর্গ করলেন মহসিন, কিন্তু কেন?

আরও পড়ুন: Sourav Ganguly: Y নয়, এবার থেকে Z ক্যাটেগরির নিরাপত্তা পাচ্ছেন 'প্রিন্স অফ ক্যালকাটা', কিন্তু কেন?

কেন খেই হারিয়েছিলেন মহসিন? বদরুদ্দিন বলে গেলেন, "হাড় ভাঙা খাটুনির ভয়ে আমার ক্যাম্পে আসতে চাইত না। সেই সময় আশে-পাশের গ্রামে গিয়ে টেনিস বলে খেপ খেলে বেড়াত। এমন সময় একবার খেপ খেলতে গিয়ে কাঁধে খুব জোর চোট পেয়েছিল। ওর বাবা আব্দুল ওয়াহিদ খান আবার পুলিসে চাকরি করতেন। পরিবারে ওর বাবা-কেই সবচেয়ে বেশি ভয় পেত মহসিন। শেষ পর্যন্ত সেই বাবার বকা খেয়েই পেশাদার ক্রিকেট নিয়ে ফের ভাবনাচিন্তা করতে শুরু করে মহসিন।"

নিজেকে ঘষামাজা করতে গিয়ে ২০২০ সালে মুম্বই ইন্ডিয়ান্সে চলে এসেছিল সুযোগ। কিন্তু রোহিত শর্মার দলের সঙ্গে অনুশীলন করলেও, ম্যাচ খেলার সুযোগ পাননি। মাঠে নামার সুযোগ না পাওয়ার জন্য বদরুদ্দিন ও শামির কাছে মাঝেমধ্যেই আক্ষেপ করতেন। তাঁদের সঙ্গে দেখা হলেই বলতেন , ‘স্যর, মুঝে ইয়ে লোগ খিলা নেহি রহে হ্যায়, মে পরেশান হোগায়া হুঁ (ওরা আমাকে দলে অন্তর্ভুক্ত করছে না, আমি হতাশ হয়ে পড়েছি)।’

পুরনো কথা মনে করে বদরুদ্দিন বলছিলেন, "সেই সময় আমি ওকে বলেছিলাম, বোকার মতো ভেব না। জহির খান এবং লাসিথ মালিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলো। ওঁদের থেকে শেখার চেষ্টা করো। মাথা খেয়ে ফেলে ওদের থেকে শিখে নাও পেস বোলিংয়ের খুঁটিনাটি। দেখবে ভবিষ্যতে আরও ভালো বোলার হয়ে উঠেছো। আমি সেটা বলতে গিয়ে শামির উদাহরণ পর্যন্ত দিয়েছিলাম। কলকাতা নাইট রাইডার্সে থাকার সময় শামি একটাও ম্যাচ খেলার সুযোগ পায়নি। কিন্তু তাই বলে ও হাত গুটিয়ে বসে ছিল না। ওয়াসিম আক্রমের কাছে থেকে অনেক কিছু শিখে নিয়েছিল। মহসিনকেও সেই নীতি ধরেই এগিয়ে যেতে বলেছিলাম।"   

কোচের কথা বেদবাক্যের মতো শুনে মহসিন এগিয়ে যাওয়ার চেস্টা করছিলেন। ঠিক এমন সময় দেশে বাড়তে থাকে কোভিড হানা। এবং সেই প্রেক্ষিতে দেশজুড়ে শুরু হয়ে যায় লকডাউন। এই লকডাউন মহসিনের কাছে যেন 'শাপে বর' হিসেবে ধরা দিল। কারণ শামির সঙ্গে অনুশীলন করার সুযোগ পেয়ে গিয়েছিলেন এই তরুণ। তাঁদের সঙ্গে যোগ দিতেন বদরুদ্দিন। তীব্র গরম উপেক্ষা করে চলতো বোলিং পাঠ।

বদরুদ্দিন ফের বলছেন, "শামির সঙ্গে এই সময় কাটানোই মহসিনকে বদলে দেয়। কারণ ও রিভার্স সুইং এবং সিমে বল ডেলিভারি করার শিল্প শামির থেকেই শিখেছিল। বদলে যাওয়া মহসিনকে দেখে খুব ভালো লেগেছিল শামির। একদিন আমাকে শামি বলে, 'স্যর এই ছেলেটা তো আমার থেকেও ভালো!' সেটা মহসিনকে বলার পর থেকে ক্রিকেটের প্রতি ওর মানসিকতাই একেবারে বদলে গিয়েছে!"   

তবে গত আইপিএল-এ সাফল্য পেলেও মহসিনকে বাধা পেতে হয়েছিল। তাঁর ক্রিকেট কেরিয়ার শেষ হয়ে যেতে পারত। এমনকি চিকিৎসা শুরু করতে আর কিছু দিন দেরি হলে কেটে ফেলতে হতো তাঁর বাঁ হাত। রুদ্ধশ্বাস ম্যাচে মুম্বই ইন্ডিয়ান্সকে হারানোর পর জীবনের এমনই কঠিন সময়ের গল্প শুনিয়েছেন মহসিন। পুরো সুস্থ হতে না পারায় এবারের আইপিএল-এর প্রথম দিকে লখনউয়ের হয়ে খেলতে পারেননি। কারণ খেলতে গিয়েই যে গুরুতর চোট পেয়েছিলেন। তাঁর বাঁ কাঁধে রক্ত জমাট বেঁধে গিয়েছিল। সুস্থ হওয়ার জন্য অস্ত্রোপচার করাতে হয়। এদিকে আবার ক্রোড়পতি লিগে ফিরলেও, পরিবারের অবস্থা ভালো ছিল না। কারণ ১০ দিন আগে তাঁর বাবা আব্দুল ওয়াহিদ খান হাসপাতালের ICU-তে ভর্তি ছিলেন। আর তাই এহেন পারফরম্যান্স অসুস্থ বাবাকে উৎসর্গ করেন মহসিন। 

১২ বছর বয়সে প্রথমবার দেখা মহসিনের সঙ্গে আইপিএল জগতে দাপিয়ে বেড়ানো ছাত্রকে মেলাতে পারেন না। টেলিভিশনের পর্দায় মহসিনকে ওই সাদা বল হাতে নিয়ে রান আপ নিতে দেখলেই, বদরুদ্দিন বলে ওঠেন, 'যেন আমার শামি ছুটে আসছে!' সত্যি দুই ছাত্রের অনেক মিল। তফাৎ শুধু এক ছাত্র শামি ইতমধ্যেই ক্রিকেট বিশ্বে নাম লিখিয়ে ফেলেছেন। মাথা ঠিক রাখতে পারলে মহসিন সেই ব্রম্ভান্ডে নাম লেখাতে পারেন। সেই অপেক্ষায় রয়েছে মোরাদাবাদ গ্রাম ও তাঁর ছোটবেলার কোচ।

(Zee 24 Ghanta App দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির লেটেস্ট খবর পড়তে ডাউনলোড করুন Zee 24 Ghanta App)  

.