Virat Kohli | Greg Chappell | IND vs PAK: কোহলির ব্যাটে চ্যাপেল শুনলেন 'ভগবানের গান'! টেনে আনলেন ভগবত গীতার প্রসঙ্গ
মেলবোর্নে বিরাট কোহলির (Virat Kohli) মহাকাব্যিক ইনিংসের ঘোর কাটেনি গ্রেগ চ্যাপেলের (Greg Chappell)। অজি ব্যাটিং মহারথী বলছেন তাঁর জীবনে দেখা সেরা ইনিংস। কোহলির ব্যাটে তিনি শুনতে পেলেন 'ভগবানের গান'। টেনে আনলেন ভগবত গীতার প্রসঙ্গ!
জি ২৪ ঘণ্টা ডিজিটাল ব্যুরো: মহাকাব্যিক বললেও হয়তো কম বলা হবে। গত রবিবার পাকিস্তানের বিরুদ্ধে টি-২০ বিশ্বকাপে (IND vs PAK, ICC T20 World Cup 2022) বিরাট কোহলি (Virat Kohli) যে ম্যাচ জেতানো ইনিংস খেলেছিলেন, তার ঘোর এখনও কাটেনি বাইশ গজে। কোহলি প্রমাণ করে দিয়েছিলেন, যে কেন এই ক্রিকেট গ্রহ ভালোবেসে তাঁকে 'চেজমাস্টার' তকমা উপহার দিয়েছে। পাক বোলারদের বিরুদ্ধে ব্যাট শাসন করে কোহলি বুঝিয়ে দিয়েছিলেন যে, জঙ্গলের 'রাজা' ওরফে 'কিং' একটাই। ৯৮ মিনিট ক্রিজে থেকে ৫৩ বলে ৮২ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেছিলেন কোহলি। তা সোনার ইতিহাসে লেখা থাকবে। কোহলির ব্যাটে সেদিন 'ভগবানের গান' শুনেছিলেন গ্রেগ চ্যাপেল (Greg Chappell)। অজি ব্যাটিং মহারথী ভারতের প্রাক্তন কোচ কোহলির ইনিংসের ব্যাখ্যা দিতে টেনে আনলেন হিন্দুদের ধর্মগ্রন্থ ভগবত গীতার (The Bhagavad Gita) প্রসঙ্গ। দ্য সিডনি মর্নিং হেরাল্ডে কোহলির ভূয়সী প্রশংসা করলেন 'গুরু গ্রেগ'।
আরও পড়ুন: Virat Kohli | IND vs PAK: ফ্যানরা বলছেন Baap Baap! কী লিখলেন সচিন থেকে নীরজ?
আরও পড়ুন: Dilip Vengsarkar On Virat Kohli: আমার দেখা অন্যতম সেরা ইনিংস, বিরাটে মোহিত বেঙ্গসরকার
গ্রেগ লিখেছেন, 'ভগবত গীতা পবিত্র গ্রন্থ যা হিন্দুধর্মের সংশ্লেষণ। আক্ষরিক অর্থে অনুবাদ করলে দাঁড়ায় 'ভগবানের গান'। বিরাট কোহলির ওই ইনিংস এখনও পর্যন্ত টি-২০ ক্রিকেটে খেলা, এমন নক, যা অনেকটা ভগবানের গানের কাছাকাছি থাকবে। যেন বিড়াল নতুন উল নিয়ে খেলছে। এমসিজি-র সবুজ কার্পেটে কোহলি দক্ষতার সঙ্গে অসাধারণ পাকিস্তানি বোলিংয়ের বিরুদ্ধে খেলে নিজেকে উন্মোচন করেছেন। বিগত যুগের কোনও গ্রেট ক্রিকেটারই এমন নৃশংস ভাবে প্রতিপক্ষের বোলারদের ছিন্নভিন্ন করতে পারেননি, গত রবিবার কোহলি যা করেছেন। এর সঙ্গেই উনি ব্যাটিং শিল্পের সঙ্গে কোনও সমঝোতা করেননি। এই ইনিংসে কোহলি যে ব্যাটিং শিল্প দেখিয়েছেন, তা আমি আমার জীবদ্দশায় ক্রিকেটে চাক্ষুস করিনি। কোহলির ইনিংস টি-২০ ক্রিকেটকে এক শৈল্পিক বৈধতা দিয়েছে। বিগত ১৫ বছরে যা আমি দেখিনি। এই ইনিংস আমাকে অপরিমেয় আনন্দ দিয়েছে। আর এমন একজন খেললেন, যিনি বিগত ১৪৫ বছরের টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসের অন্যতম কট্টর সমর্থক ও উদাহরণ। ওই দিনই টি-২০ ক্রিকেট আরও পরিণত হল। ক্রিকেটের দীর্ঘতম ফরম্যাটের দুই অপেক্ষাকৃত তরুণ দেশ একে-অপরের প্রতিদ্বন্দ্বিতা করল। ৯০ হাজার উচ্ছ্বসিত ফ্যানের সামেন খেলা হল। যাঁদের অধিকাংশই নিজেদের জন্মভূমি থেকে হাজার হাজার মাইল দূরে এসে খেলা দেখলেন।'
দীর্ঘ তিন বছর কোহলি সেঞ্চুরির মুখ দেখেননি। চলতি বছর এশিয়া কাপের আগে পর্যন্ত তাঁর পারফরম্যান্স নিয়ে কাটাছেঁড়া কম হয়নি। কপিল দেবের মতো কিংবদন্তিরাও কোহলিকে দল থেকে বাদ দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন। ২০২০ সালের ২৩ নভেম্বর বাংলাদেশের বিরুদ্ধে কলকাতার ইডেন গার্ডেন্সে দিন-রাতের টেস্টে শেষবার শতরান করা কোহলি, এশিয়া কাপে নিয়মরক্ষার ম্যাচে আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে শতরান পান। কেরিয়ারের ৭১ তম সেঞ্চুরি এসেছিল তাঁর ব্যাটে। এর সঙ্গেই আন্তর্জাতিক টি-২০ ফরম্যাটে দেশের জার্সিতে করেছিলেন প্রথম সেঞ্চুরিও। ১০২০ দিন পর তিন অঙ্কের রানের মুখ দেখেছিলেন কোহলি। কোহলির খারাপ ফর্মের প্রসঙ্গে চ্যাপেল টেনে এনেছেন সচিন তেন্ডুলকরের ব্যাট হাতে রানের খরার কথা।
চ্যাপেল তাঁর কলামে লেখেন, 'কোহলি প্রথম প্লেয়ার নন যিনি খারাপ সময়ের মধ্যে দিয়ে গিয়েছেন। যিনিই কোহলির মতো এত দীর্ঘ সময়ে খেলেছেন, তাঁকেই ভুগতে হয়েছে। কিন্তু বিরাটের মতো কারোর ক্ষেত্রে ঘটেনি। সকলেরই নিজস্ব মতামত রয়েছে। অধিকাংশই ওঁর বলের ওপর চোখ বা টেকনিক নিয়ে কথা বলেছেন। কিন্তু ওঁর ক্ষেত্রে বিষয়টি তেমন ছিল না। সচিন তেন্ডুলকরও তাঁর কেরিয়ারের শেষ লগ্নে এসে আমাকে এরকমই প্রশ্ন করেছিলেন। উনি জানতে চেয়েছিলেন, বয়স বাড়ার সঙ্গে ব্যাটিং করা কঠিন হয়ে যায় কেন, সহজ হওয়ার কথা যেখানে! আমি সচিনকে বলেছিলাম, কারণ আমরা বুঝে যাই যে, ভুলভ্রান্তিগুলি ঠিক কোন জায়গায়। জেনে যাই যে, সর্বোচ্চ পর্যায়ে রান করা কত কঠিন। তরুণ বয়সে আমরা রান করার কথাই ভাবি। কিন্তু ভুলভ্রান্তিগুলি নিয়ে অত বেশি ভাবি না বা সেগুলি বুঝতে পারি না। বয়স বাড়ার সঙ্গেই সকলে রক্ষণশীল হয়ে যায়। ক্রীড়াক্ষেত্রেও এমনটাই হয়, যদি না আমরা যত্ন নিই। আমি সচিনকে পরামর্শ দিয়েছিলাম, একজন তরুণ ক্রিকেটারের মতোই তাঁকে ভাবতে হবে, যদি তরুণ বয়সের ব্যাটিংয়ে ফিরে যেতে চান সচিন। আমার মনে হয় কোহলির ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটেছে।' কোহিলর জীবনে ঘটে যাওয়া পরিবর্তনগুলি নিয়েও আলোকপাত করেছেন চ্যাপেল। তিনি লিখেছেন, 'কোহলি যখন ক্রিজে নামেন, তখনও ওঁর মাথায় রান করার কথাই ঘোরে। নিজের ব্যাটিংয়ে ফোকাসড থাকেন। কোহলি ক্যাপ্টেন হয়েছেন, বিয়ে করেছেন। মাঠের বাইরেও ওঁর আগ্রহের অনেক বিষয় জুড়েছে। আমার মনে হয়, ওঁর জীবনে সবচেয়ে বড় পরিবর্তন এসেছে গত বছর জানুয়ারিতে। যখন ওঁর কন্যা ভামিকা জন্ম। প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার সঙ্গেই যখন জীবনযাপনে কিছু দাবি জুড়ে যায়, তখন বিষয়টি একরকম। কিন্তু একজন শিশুর সঙ্গে জীবন গড়ে ওঠে একদম অন্য ভাবে। টেস্ট ক্রিকেটে রান করার চাহিদা প্রচুর। এতে কোনও চমক নেই যে, ক্রিকেটাররা কিছু সময় এসে ক্লান্ত হয়ে পড়েন।'
পাকিস্তানকে রুদ্ধশ্বাস ম্যাচে হারিয়ে টি-২০ বিশ্বকাপের অভিযান শুরু করেছিল টিম ইন্ডিয়া। পাকিস্তানের ১৫৯ রান তাড়া করতে নেমে ভারত ৩১ রানে চার উইকেট হারিয়ে ফেলেছিল। ম্যাচ থেকে কার্যত বেরিয়ে গিয়েছিল টিম ইন্ডিয়া। কিন্তু দলকে খাদের কিনারা থেকে তুলে এনে ম্য়াচ জেতান বিরাট কোহলি ও হার্দিক পাণ্ডিয়া। চতুর্থ উইকেট পার্টনারশিপে বিরাট-হার্দিক ১১৩ রান যোগ করেছিলেন স্কোরবোর্ডে। ৩৭ বলে ৪০ রানের ইনিংস খেলে আউট হন হার্দিক। ৫৩ বলে ৮২ রানে অপরাজিত থাকেন বিরাট। শুধু ব্যাট হাতেই নয়, হার্দিক বল হাতেও কামাল করেছিলেন। নির্ধারিত কোটার চার ওভার বল করে তুলে নিয়েছিলেন তিন উইকেটও।