Debabrata Biswas: ব্রাত্যজনের রুদ্ধসংগীতই পরে বাঙালির আকাশ ভরা সূর্য তারা...

১৯১১ সালের আজকের দিনে, ২২ অগস্ট তাঁর জন্ম। রাজা ‌পঞ্চম জর্জের দিল্লি আগমনের ঠিক আগে তাঁর জন্ম বলে তাঁর ডাকনাম রাখা হয়েছিল 'জর্জ'! ২৬ বছরের সঙ্গীতজীবন, তারপর 'ব্রাত্য' করে দেওয়া হয়েছিল তাঁকে!

| Aug 22, 2022, 15:43 PM IST

সৌমিত্র সেন: ১৯১১ সালের আজকের দিনে, ২২ অগস্ট তাঁর জন্ম। রাজা ‌পঞ্চম জর্জের দিল্লি আগমনের ঠিক আগে তাঁর জন্ম বলে তাঁর ডাকনাম রাখা হয়েছিল 'জর্জ'! ২৬ বছরের সঙ্গীতজীবন, তারপর 'ব্রাত্য' করে দেওয়া হয়েছিল তাঁকে! ভারতের গণনাট্য আন্দোলনের অন্যতম পুরোধাপুরুষ এবং একজন প্রখ্যাত গণসঙ্গীত গায়কও।

1/7

উপেক্ষা অসম্মান ছোট থেকেই

গানই ছিল তাঁর ব্যক্তিত্ব, তাঁর যাপন। কিন্তু উপেক্ষা অসম্মান জুটেছে ছোট থেকেই। বরিশালে জন্ম দেবব্রতের। বাবা দেবেন্দ্রমোহন বিশ্বাস। মা অবলা দেবী। দেবব্রতের দাদু কালীমোহন বিশ্বাস ব্রাহ্মধর্ম গ্রহণ করলে ইটনা থেকে বিতাড়িত হন। শৈশবে কিশোরগঞ্জ বিদ্যালয়ে দেবব্রতকে তাই 'ম্লেচ্ছ' শব্দটিও শুনতে হয়েছে। 

2/7

মায়ের কাছে ব্রহ্মসংগীত, রবীন্দ্রসংগীত

ছোট বয়স থেকেই দেবব্রত মায়ের কাছে ব্রহ্মসংগীত, রবীন্দ্রসংগীত ইত্যাদির সঙ্গে পরিচিত হন। পরবর্তী কালে গণমাট্যের গান গেয়েছেন। তাঁর আত্মজীবনী থেকে জানা যায়, নজরুল ইসলামের সঙ্গেও তাঁর পরিচয় হয়েছিল। নজরুল তাঁর গলা শুনে তাঁকে নিজের দু'টি গান শিখিয়ে সেগুলি রেকর্ডও করিয়েছিলেন। একটি ছিল 'মোর ভুলিবার সাধনায় কেন সাধো বাদ'। অপর গানটি যদিও দেবব্রত পরবর্তী কালে স্মরণ করতে পারেননি। যদিও এই রেকর্ড দু'টির কোনওটিই দিনের আলো দেখেনি।

3/7

রবীন্দ্রনাথকে দেখা

কিশোরগঞ্জ ছেড়ে, ওপার বাংলা ছেড়ে এসেছেন এপার বাংলায়। কলকাতায় এসে পৌঁছেছেন। পড়াশোনা শুরু করলেন। ১৯২৭ সালে ভর্তি হলেন সিটি কলেজে। দেবব্রতর জীবনের সব চেয়ে বড় ঘটনাটা ঘটল ১৯২৮ সালের ব্রাহ্ম সমাজের ভাদ্রোৎসবে। কেননা সেদিন তিনি কলকাতার সাধারণ ব্রাহ্মসমাজ মন্দিরে রবীন্দ্রনাথকে দেখলেন! সেই প্রথম!

4/7

গায়নের মাধুর্য মাদকতা

এর দশ বছর পরে ১৯৩৮ সালে কনক দাশের সঙ্গে দ্বৈতকণ্ঠে তাঁর প্রথম রবীন্দ্রসঙ্গীত রেকর্ড। কিন্তু বছরখানেক যেতে না যেতেই তাঁর রবীন্দ্রগানের গায়ন, মিউজিক অ্যারেঞ্জমেন্ট ইত্যাদি নিয়ে বিশ্বভারতী মিউজিক বোর্ডের সঙ্গে তাঁর বিরোধেরও শুরু। কিন্তু তাঁর গায়নের মাধুর্য আর মাদকতা ততদিনে বাঙালিকে মুগ্ধ করে ফেলেছে। তিনি যেন রবীন্দ্রগানের অনন্য মুখ হয়ে উঠতে লাগলেন। 

5/7

মতভেদের শুরু

১৯৬৪ সাল থেকেই বিশ্বভারতী সঙ্গীত সমিতির সঙ্গে রবীন্দ্রসঙ্গীতের গায়ন বিষয়ে দেবব্রতের মতভেদের শুরু। বিরক্ত দেবব্রত পরে রবীন্দ্রসঙ্গীত রেকর্ড করাই ছেড়ে দেন। যদিও গান গাওয়া বন্ধ করেন না। ঘরোয়া ভাবে গান গেয়ে যান আপন প্রাণের আনন্দে। তথ্য বলছে, ১৯৭১ সালের পর থেকে তিনি আর রবীন্দ্রসঙ্গীত রেকর্ড করেননি।

6/7

ছায়াছবির রবীন্দ্রসঙ্গীতে মাইলস্টোন

কিন্তু মূলত নন-ফিল্ম জগতের সঙ্গীতব্যক্তিত্ব হলেও ছায়াছবিতে রবীন্দ্রসঙ্গীতের ক্ষেত্রে দেবব্রত মাইলস্টোন হয়ে গেলেন। হলেন ঋত্বিক ঘটকের সূত্রে। ঋত্বিকের 'মেঘে ঢাকা তারা' ছবিতে গীতা ঘটকের সঙ্গে তাঁর 'যে রাতে মোর দুয়ারগুলি' বাঙালির জীবনে একটা অনন্য স্মৃতিসম্পদ হয়ে যায়; এ ছাড়া 'কোমলগান্ধার' ছবিতে 'আকাশভরা সূর্যতারা' এবং 'যুক্তি তর্ক ও গল্প'তে স্বয়ং ঋত্বিকের 'লিপে' শিষ্য সুশীল মল্লিককে সঙ্গে নিয়ে 'কেন চেয়ে আছ গো মা' গানগুলি বিশেষ জনপ্রিয়তা অর্জন করল। এবং শুধু জনপ্রিয়তাই নয়, ক্রমশ কাল্ট হয়ে গেল।

7/7

'আকাশ ভরা সূর্য তারা'

দিনের শেষে দেবব্রত বিশ্বাস বললেই যেন বাঙালি 'আকাশ ভরা সূর্য তারা' গানটি শুনতে পায়। এ গানে দেবব্রত বিশ্বাস শব্দের উচ্চারণে যেন কোন অন্য আলো নামিয়ে আনেন শ্রোতার মনে। এ গানে তাঁর বহু বিতর্কিত 'ভরা' শব্দটিকে 'ভওরা' উচ্চারণ যেন অন্য মাত্রা এনেছিল। আরও ছিল। যখন উচ্চারণ করছেন 'বিস্ময়ে', যখন গাইছেন 'ঘাসে ঘাসে পা ফেলেছি', যখন উচ্চারণ করছেন 'ফুলের গন্ধে চমক লেগে' তখন বাঙালিও যেন বিস্মিত হচ্ছে, তারও যেন চমক লাগছে, সে-ও যেন ঘাসে ঘাসে পা ফেলে চলেছে। এমন অভিজ্ঞতা তো আগে হয়নি তার!