রাইসিনার রেসে নামতে নর্থ ব্লককে বিদায় প্রণবের
দেশের এক নম্বর নাগরিক হওয়ার দৌড়ে সামিল হতে দলীয় রাজনীতির বৃত্তের বাইরে এলেন তিনি। বিদায় জানালেন, ৪ দশকের বর্ণময় রাজনৈতিক জীবনকে। মঙ্গলবার বিকেলে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনের উদ্দেশ্যে রওনা হওয়ার আগে নর্থ ব্লকের বাইরে অপেক্ষারত সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিদের প্রণব মুখোপাধ্যায় ঘোষণা করলেন, নতুন পথে যাত্রা শুরু করতে তিনি প্রস্তুত।
দেশের এক নম্বর নাগরিক হওয়ার দৌড়ে সামিল হতে দলীয় রাজনীতির বৃত্তের বাইরে এলেন তিনি। বিদায় জানালেন, ৪ দশকের বর্ণময় রাজনৈতিক জীবনকে। মঙ্গলবার বিকেলে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনের উদ্দেশ্যে রওনা হওয়ার আগে নর্থ ব্লকের বাইরে অপেক্ষারত সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিদের প্রণব মুখোপাধ্যায় ঘোষণা করলেন, নতুন পথে যাত্রা শুরু করতে তিনি প্রস্তুত। পাশাপাশি 'ভারাক্রান্ত হৃদয়ে' সবিনয়ে জানালেন, ইউপিএ জোটের তরফে রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী হিসেবে মনোনীত করায় তিনি অত্যন্ত সম্মনিত বোধ করছেন।
ইন্দিরা গান্ধী ও মনমোহন সিং - দুই প্রধানমন্ত্রীর আমলেই কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রকের গুরুদায়িত্ব সামলেছেন প্রণব মুখোপাধ্যায়। কংগ্রেসের বিভিন্ন রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের নেপথ্যেও ছিল তাঁর ক্ষুরধার মস্তিষ্ক। প্রণববাবু রাইসিনা হিলসে চলে গেলে দলের ক্রাইসিস ম্যানেজারকে ছাড়াই ২০১৪-র লোকসভা নির্বাচনে লড়তে হবে কংগ্রেসকে।
ইন্দিরা গান্ধী প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন ১৯৮২ থেকে ১৯৮৫ কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রকের দায়িত্ব সামলেছেন প্রণব মুখোপাধ্যায়। মনমোহন সিংয়ের প্রধানমন্ত্রিত্বে ২০০৯-এ অর্থমন্ত্রকের দায়িত্ব নেন তিনি। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী হিসাবে নিজের দুটি ইনিংসেই বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন প্রণববাবু। ইন্দিরা গান্ধীর আমলে ডাকঘরে মেয়াদি আমানতে সুদ বাড়িয়েছিলেন তিনি। বয়স ১৫ বছর পেরোলেই পাবলিক প্রভিডেন্ড ফান্ডে টাকা জমা রাখার অনুমতি দিয়েছিলেন। ব্যবসায়ে বার্ষিক লেনদেন ২০ লাখের বেশি হলে অডিট বাধ্যতামূলক করেছিলেন প্রণব মুখোপাধ্যায়। পি ভি নরসীমা রাওয়ের প্রধানমন্ত্রিত্বকালে প্রথমে যোজনা কমিশনের ডেপুটি চেয়ারম্যান ও পরে কেন্দ্রীয় বাণিজ্যমন্ত্রী থাকাকালীন অর্থমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে আর্থিক উদারীকরণের কর্মসূচি রূপায়ণ করেছিলেন তিনি।
মনমোহন সিংয়ের মন্ত্রিসভার আর্থমন্ত্রী হিসেবে প্রণববাবু মন্দাক্রান্ত অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে বণিকমহলের জন্য স্টিমুলাস প্যাকেজ ঘোষণা করেন। আয়কর ছাড়ের উর্ধ্বসীমা বাড়ান। পরিষেবা করের ক্ষেত্র সম্প্রসারণ করেন। রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার বিলগ্নিকরণ ও ভর্তুকির পরিমাণ কমাতেও সচেষ্ট হন প্রণববাবু। প্রণব মুখোপাধ্যায় কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী থাকাকালীন বেড়েছে মুদ্রাস্ফীতি। কমেছে আর্থিক বিকাশের গতি। ফলে, গত কয়েক বছরে সমালোচনাও শুনতে হয়েছে তাঁকে।
২০০৯ থেকে ২০১২, পরপর ৪ বছর কেন্দ্রীয় বাজেট পেশ করেছেন তিনি। এই ৪ বছরে তাঁর বাজেট পেশের দিন কী অবস্থা ছিল দেশের অর্থনীতির? শেষ ৪টি কেন্দ্রীয় বাজেট পেশের সময় আর্থিক বিকাশের হার ছিল যথাক্রমে ৭.৪, ৯.৪, ৯.২ ও ৫.৩ শতাংশ। জিডিপির নিরিখে রাজস্ব ঘাটতির পরিমাণ ছিল যথাক্রমে ৬, ৬.৫, ৪.৯ ও ৫.৯ শতাংশ। মুদ্রাস্ফীতির হার ছিল যথাক্রমে মাইনাস ০.৩১, ৯.৬৫, ৯.৫৪ ও ৭.৬৯ শতাংশ।
অর্থমন্ত্রক ছাড়াও প্রথম ও দ্বিতীয় ইউপিএ সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তের রূপকার প্রণব মুখোপাধ্যায়। রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী হিসাবে তাঁর নাম ঘোষণার সময় ২৭টি মন্ত্রিগোষ্ঠীর মধ্যে ১৩টির সদস্য প্রণববাবু। ১২টি বিশেষ দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রিগোষ্ঠীর সব ক'টিতেই তাঁর নাম। ১০টি ক্যাবিনেট কমিটির মধ্যে ৮টির সদস্য তিনি। পরিসংখ্যানই বলে দিচ্ছে, ইউপিএ সরকারের চাণক্য রাইসিনা হিলসে চলে গেলে প্রতি মুহূর্তে তাঁর অভাব বোধ করবে ১০ জনপথ আর ৭ রেসকোর্স রোড।