বুথ দখল কেন্দ্র করে সংঘর্ষ, মণিপুরে নিহত ৫
ভোট-হিংসার ঐতিহ্য অব্যাহত রইল মণিপুর! শনিবার চান্দেল জেলার টিপাইমুখ বিধানসভা কেন্দ্রে বুথ দখলের ঘটনাকে কেন্দ্র করে রক্তাক্ত হল নির্বাচনপর্ব। বুথ দখল রুখতে গিয়ে দুষ্কৃতীদের গুলির শিকার হয়েছেন এক সিআরপিএফ কর্মী। ১ মহিলার পাশাপাশি এই ঘটনায় নিহত হয়েছেন ৩ ভোটকর্মীও।
ভোট-হিংসার ঐতিহ্য অব্যাহত রইল মণিপুর! শনিবার চান্দেল জেলার টিপাইমুখ বিধানসভা কেন্দ্রে বুথ দখলের ঘটনাকে কেন্দ্র করে রক্তাক্ত হল নির্বাচনপর্ব। বুথ দখল রুখতে গিয়ে দুষ্কৃতীদের গুলির শিকার হয়েছেন এক সিআরপিএফ কর্মী। ১ মহিলার পাশাপাশি এই ঘটনায় নিহত হয়েছেন ৩ ভোটকর্মীও। এই ঘটনার পিছনে নাগা জঙ্গিদের হাত রয়েছে বলে দাবি রাজ্য পুলিসের।
একদিকে সন্ত্রাসবাদী হামলার আশঙ্কা। অন্যদিকে গণতন্ত্রের ময়দানে অর্থ এবং বাহুবলের যথেচ্ছ ব্যবহার। এই ত্র্যহস্পর্শ সামলে মণিপুরে শান্তিপূর্ণ ভাবে ভোট সম্পন্ন করানোটাই ছিল আজ নির্বাচন কমিশনের কাছে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। প্রাথমিক রাউন্ডের ফলাফল বলছে, সেই গুরুদায়িত্ব পালনে পুরোপুরি সফল হয়নি কমিশন।
দেশের ছোট রাজ্যগুলির মধ্যে একটি মণিপুর। কিন্তু হলে কী হবে, ভোট করাতে নাভিশ্বাস উঠেছে নির্বাচন কমিশনের। বিধানসভার ৬০টি আসনের জন্য শনিবার এক পর্বে এখানে ভোট হচ্ছে উত্তর-পূর্ব ভারতের এই রাজ্যে। কিন্তু তার প্রস্তুতি যে কোনও বড় রাজ্যের চেয়ে কোনও অংশে কম নয়। নিরাপত্তার জন্য সাড়ে ৩০০ কোম্পানি অতিরিক্ত বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। নির্বাচনের দিন আইনশৃঙ্খলা রক্ষার কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে প্রায় ৪২,০০০ নিরাপত্তারক্ষী। অন্যান্য সময়ে এমনিতেই এখানে সেনাবাহিনী থাকে, থাকে কড়া নজরদারিও। কিন্তু যে ভাবে শহরে প্রায় প্রতিদিনই বিস্ফোরণ ঘটে চলেছে, তাতে এখন কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে নির্বাচন কমিশনের।
মণিপুরের জনসংখ্যা ২৭ লক্ষ। কিন্তু ভোটারের সংখ্যা মোট জনসংখ্যার ৬২ শতাংশ অর্থাত্ ১,৭৪,২০,০০ হাজার। তাত্পর্যপূর্ণ ভাবে ভোটারদের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশই (প্রায় ৮,৯০,০০০) মহিলা। রাজ্যের ৬০টি বিধানসভা কেন্দ্রের মধ্যে ৪০টি ইম্ফল উপত্যকা এবং ২০টি পার্বত্য এলাকায় অবস্থিত। মূল লড়াই গত এক দশকের ক্ষমতাসীন কংগ্রেস এবং মণিপুর পিপলস পার্টি, জনতা দল (ইউনাইটেড), এনসিপি ও সিপিআইএম'কে নিয়ে গঠিত জোট পিপলস ডেমোক্র্যাটিক ফ্রন্ট (পিডিএফ)-এর মধ্যে। ভোটের ময়দানে রয়েছে, তৃণমূল কংগ্রেস, বিজেপি, ন্যাশনাল পিপলস পার্টি, আরজেডি'র মতো দলগুলিও। কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ক্ষমতাসীন সেকুলার প্রোগ্রেসিভ ফ্রন্ট-এর শরিক সিপিআই এবার একক শক্তিতে ভোটে লড়ছে।
রাজ্যে মোট বুথের সংখ্যা ২৩৫৭, যার মধ্যে ৭০ শতাংশই অতি সংবেদনশীল। নিরুপদ্রব, স্বাভাবিক বুথের সংখ্যা মাত্রই ১৬০। কিন্তু নিরাপত্তার স্বার্থে বাছবিচার না করে, সব বুথেই ক্যামেরা বসানোর সিদ্ধান্ত নেয় কমিশন।
এ বারের ভোটে মণিপুরের পাহাড়ি এলাকায় ছড়িয়ে থাকা সন্ত্রাসবাদী সংগঠনগুলি ভাবনায় রেখেছে কমিশনকে। ওই ধরনের সংগঠনগুলির প্রভাব যে সমতলে নেই, এমনটা অবশ্য নয়। নির্বাচনী প্রচারের সময় এমন দিন খুব কমই গিয়েছে, রাজধানী ইম্ফলের মানুষ যেদিন রক্তপাত বা বিস্ফোরণ চাক্ষুষ করেননি। সমস্যা হচ্ছে, নাশকতার পাশাপাশি ওই জঙ্গি সংগঠনগুলির অর্থও খাটছে এই নির্বাচনে। তাদের মাধ্যমে নিজেদের প্রভাব প্রতিপত্তি খাটাতে কসুর করছেন না প্রার্থীরাও। এই সমস্ত কারণে পাহাড়ি এলাকায় নজরদারির জন্য এ বার হেলিকপ্টার ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন।
কিন্তু ভোটগ্রহণ শুরুর কয়েক ঘণ্টার মধ্যে বজ্র আঁটুনি অনেকটাই ফস্কা গেরোতে পরিণত হল। বুথে বুথে ভোটারদের ঢল আর বেলা ১২টা পর্যন্ত ৩৯ শতাংশ ভোটদানের পরিসংখ্যানের পাশে জায়গা করে নিল বুথদখল-সংঘর্ষ-রক্তপাতের ঘটনা।