গুজরাটে সঙ্কটে বিজেপি, দল ছাড়ার হুঁশিয়ারি উপমুখ্যমন্ত্রী নীতিন পটেলের
মন্ত্রিসভার শপথগ্রহণের পর অশান্তি গুজরাট বিজেপির অন্দরে। বিদ্রোহ করে নরেন্দ্র মোদী ও অমিত শাহকে চিঠি দিলেন উপ-মুখ্যমন্ত্রী নীতিন পটেল।
নিজস্ব প্রতিবেদন: গুজরাটে টেনেটুনে জয়লাভের পর 'ধর্মসঙ্কটে' বিজেপি। দলের বিরুদ্ধে কার্যত বিদ্রোহ ঘোষণা করে দিয়েছেন উপ-মুখ্যমন্ত্রী নিতিন পটেল। উপ-মুখ্যমন্ত্রিত্বের সঙ্গে আরও তিনটি দফতরের দায়িত্ব পেলেও খুশি নন তিনি। আর এনিয়ে নিজের ক্ষোভের কথা নরেন্দ্র মোদী ও অমিত শাহকে চিঠি লিখে জানিয়েছেন নীতিন পটেল। নীতিনের এই ক্ষোভ কাজে লাগাতে আসরে নেমে পড়েছেন হার্দিক পটেল। তাঁকে ১০ জন বিধায়ক ভাঙিয়ে আনলে পদ পাইয়ে দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন পাতিদার আন্দোলনের নেতা। গোদের উপর বিষফোঁড়ার মতো ভাদোদরার বিজেপি বিধায়ক রাজেন্দ্র ত্রিবেদী ১০জন বিধায়ক নিয়ে দল ছাড়ার হুমকি দিয়েছেন।
বিজেপি সূত্রে খবর, চিঠিতে নীতিন লিখেছেন, কম গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রক দেওয়ায় অপমানিত বোধ করছেন তিনি। আগের মতোই অর্থ ও নগরোন্নয়ন দফতর ফেরত চান। দু-তিনদিনের মধ্যেই সিদ্ধান্ত না-নিলে পদত্যাগের হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন নীতিন পটেল।
আরও পড়ুন- তাত্ক্ষণিক তিন তালাকের পর বহু বিবাহ বন্ধের দাবি মুসলিম আন্দোলনকারীদের
তবে এই চিঠির বিষয়টি উড়িয়ে দিয়েছেন নিতিন পটেল। তবে তাঁর ক্ষোভ যে রয়েছে, তা স্পষ্ট করেছেন। জি মিডিয়ার সংবাদপত্র ডিএনএ-কে নীতিন পটেল বলেছেন, ''আগের দফতরগুলি ফিরে পেতে চাওয়ার মধ্যে কোনও ভুল নেই। আমার আত্মসম্মানবোধ আছে। গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রকই যদি হাতে না থাকে, তাহলে উপ-মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার কি মানে। এব্যাপারে সঠিক সময়েই অবস্থান স্পষ্ট করব।''
আরও পড়ুন- ঠেলার নাম বাবাজি! তিন তালাক দেওয়া স্ত্রীকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ফের বিয়ের সিদ্ধান্ত স্বামীর
সূত্রের খবর, প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী আনন্দিবেন পটেলের সঙ্গে গোপন বৈঠক করেছেন নীতিন পটেল। এই পরিস্থিতিতে যা তাত্পর্যপূর্ণ বলে মত রাজনৈতিক মহলের। পাতিদার আন্দোলনের পর আনন্দিবেনকে সরিয়ে বিজয় রূপানিকে মুখ্যমন্ত্রী করেছিলেন মোদী-শাহ। সে নিয়ে ঘনিষ্ঠমহলে ক্ষোভপ্রকাশও করেছিলেন আনন্দিবেন। রাজনৈতিক মহলের মতে, নীতিন পটেলকে নিয়ে এবার পাল্টা অমিতকে বিঁধতে ঘুঁটি সাজাচ্ছেন আনন্দিবেন।
মওকা বুঝে গুজরাট দখলের ছক কষতে শুরু করে দিয়েছে কংগ্রেস। তারা নামিয়ে দিয়েছে হার্দিক পটেলকে। তিনি প্রকাশ্যে নিতিন পটেলকে 'অফার' দিয়েছেন। হার্দিক জানান, ''উপ-মুখ্যমন্ত্রী নীতিন পটেল ১০ জন বিধায়ককে নিয়ে বিজেপি ছাড়লে কংগ্রেসের সঙ্গে কথা বলে তাঁদের ভাল পদ পাইয়ে দেব। বিজেপি ওনাকে সম্মান না দিলে দল ছাড়া উচিত।''
আরও পড়ুন- নাম বদলের শর্তে ছাড়পত্র পেল 'পদ্মাবতী'
If Gujarat Deputy CM #NitinPatel along with 10 MLAs is ready to leave BJP, then will talk to Congress to get him a good position. If BJP does not respect him, he should leave the party: Hardik Patel in Gujarat's Sarangpur pic.twitter.com/cFlORE7Yqu
— ANI (@ANI) December 30, 2017
নীতিন যে এমন বিদ্রোহ করতে পারেন, তার আঁচ অনেকদিন আগেই মিলেছিল। অনেকেই বলছেন, মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার স্বপ্ন দেখছিলেন নীতিন পটেল। সেই স্বপ্ন ভঙ্গ হয়েছে। তার উপরে পেট্রোলিয়াম, অর্থের মতো দফতর হাতছাড়া হয়েছে। পাতিদার ভোট ফিরে পেতে নীতিনকে দরকার বিজেপির। সুযোগ বুঝে কোপ মেরেছেন নীতিন পটেল। তাঁর অনুগামী বিধায়করা ডিগবাজি খেলে গুজরাটে সংখ্যালঘু হয়ে পড়বে বিজেপি সরকার।
আরও পড়ুন- বাবার ঐতিহাসিক ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে তিন তালাক বিতর্কে গরহাজির রাহুল
শুধু নীতিন পটেলই নন, দক্ষিণ গুজরাটের বহু বিজেপি নেতা বিদ্রোহ করেছেন। তাঁদের দাবি, ওই অঞ্চল থেকে মন্ত্রিসভায় কাউকে গুরুত্বপূর্ণ দফতর দেওয়া হয়নি। এর পাশাপাশি ১০ জন বিধায়ক নিয়ে দল ছাড়ার হুমকি দিয়েছেন ভাদোদরার বিজেপি বিধায়ক রাজেন্দ্র ত্রিবেদী। রাজনৈতিক মহলের মতে, সংখ্যাগরিষ্ঠতা থেকে সামান্য আসন পাওয়ার পর বেকায়দায় বিজেপি। এই সুযোগেই অমিত শাহ-নরেন্দ্র মোদীকে সবক শেখাতে মাঠে নেমে পড়েছেন বিক্ষুব্ধরা। নিজের রাজ্যে ভোটে জেতার পরও হাতছাড়া হলে মুখ দেখানোর রাস্তা থাকবে না মোদী-শাহ জুটির। কীভাবে এই চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি করেন, সেটাই দেখার।