Mahashivratri: শিবরাত্রি ইতিহাস? মহাদেবের তাণ্ডবনৃত্যের সঙ্গে শিবরাত্রির যোগাযোগ জানলে অবাক হবেন...
Mahashivratri: সকল ভক্তদের কাছে মহাশিবরাত্রির গুরুত্ব অনেকখানি। এইদিন ভক্তরা উপবাসের মাধ্যমে নিষ্ঠাভরে...

জি ২৪ ঘণ্টা ডিজিটাল ব্যুরো : ||ওম নমঃ শিবায়, ওম নমঃ শিবায় / হর হর বোলে নমঃ শিবায় / রামেশ্বর শিব রামেশ্বরয়ে / হর হর বোলে নমঃ শিবায়||
মহাশিবরাত্রি (Maha Shivratri) একটি অত্যন্ত পবিত্র হিন্দু উৎসব। প্রতি মাসের কৃষ্ণপক্ষের চতুর্দশী তিথিতে মাসিক শিবরাত্রির উপবাস ও পুজো করা হলেও ফাল্গুন মাসের চতুর্দশী তিথিতে মহাশিবরাত্রি পালিত হয়।
মহাচতুর্থীর শুভ তিথি উপলক্ষ্যে লক্ষ লক্ষ ভক্ত মেতে ওঠেন শিবের আরাধনায়। এইদিন তাঁরা প্রার্থনা, উপবাসের মধ্য দিয়ে নিষ্ঠাভরে শিবের পুজার্চনা করে থাকেন। বছরের পর বছর ধরে, মহাশিবরাত্রির দিন সকল সম্প্রদায়ের ভক্তরা এক হয়ে করেছেন মহাদেবের আরাধনা। এই উৎসবের উদযাপন যদিও অঞ্চলভেদে ভিন্ন হয়ে থাকে। বিশ্বব্যাপী সকল ভক্তরা এই উৎসবে অংশগ্রহণ করেন, তাই মহাশিবরাত্রিকে সার্বজনীন উৎসবও বলা চলে।
মহাশিবরাত্রি ইতিহাস-
কোটি কোটি দেবদেবীদের মধ্যে শিবকে অন্যতম এবং প্রধান দেবতা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। আমরা আমাদের ধর্মে ত্রিদেবের কথা পাই। হিন্দুধর্ম অনুযায়ী ব্রহ্মাকে স্রষ্টা, বিষ্ণুকে রক্ষাকর্তা এবং শিবকে মহাজাগতিক শক্তির উৎস বলা হয়। শিব নামেই মনের মধ্যে যে চিত্রটা আসে, জটা ধরা চুল, কপালে তৃতীয় নেত্র, মাথায় অর্ধচন্দ্র এবং গলায় পেঁচানো সাপ, হাতে ত্রীশূল।
আরও পড়ুন: Shivratri 2025: এবার শিবরাত্রিতে বিরল শুভ যোগ, খুলবে ভাগ্য, ধনসম্পত্তির বর্ষা হবে ৪ রাশির উপরে
মহাশিবরাত্রির উৎপত্তির গল্প ১-
হিন্দু পুরাণ অনুসারে, এই শুভ দিনে শিব (Shiv) ও মা পার্বতীর (Parbati) বিবাহ হয়। অনেকে বিশ্বাস করেন এইদিনে শিবরাত্রির দিন শিব তাণ্ডবের সঙ্গে সঙ্গে মহাজাগতিক নৃত্য করেন। এই নৃত্য সৃষ্টি, সংরক্ষণ এবং ধ্বংসের প্রতীক। সংস্কৃত ভাষায় 'মহাশিবরাত্রি' শব্দের অর্থ 'শিবের বড় রাত'।
মহাশিবরাত্রির উৎপত্তির গল্প ২-
আরেকটি মহাশিবরাত্রি গল্প থেকে জানা যায়, মহাশিবরাত্রি সেই রাত্রি যখন শিব নিজেকে লিঙ্গের আকারে সারা বিশ্বের সামনে প্রকাশ করেছিলেন।
বিশ্বজুড়ে উদযাপন-
মহাশিবরাত্রি বিশ্বজুড়ে অত্যন্ত উৎসাহ ও উদ্দীপনার সঙ্গে পালিত হয়। যদিও এর শিকড় প্রাচীন ভারতীয় ঐতিহ্যের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। ভারতে, মহাশিবরাত্রির উদযাপন আঞ্চলিকভেদে পরিবর্তিত হয়, বিভিন্ন রাজ্যে বিভিন্ন রীতিনীতি এবং আচার পালিত হয়। মন্দিরে শোভাযাত্রা, পবিত্র নদীতে পবিত্র স্নান থেকে শুরু করে রাতব্যাপী জাগরণের মধ্য দিয়ে এই বিশেষ দিন পালন করেন ভক্তরা।
ভারতের বাইরে মহাশিবরাত্রি-
ভারতের বাইরে, নেপাল, মরিশাস, ইন্দোনেশিয়া এবং মালয়েশিয়া সহ বেশ কিছু জায়গায় মহাশিবরাত্রি উদযাপিত হয়। পশ্চিমা দেশগুলিতেও মহাশিবরাত্রির উদযাপন হয় বিশেষভাবে। ভক্তরা ধ্যান, জপ এবং আধ্যাত্মিক আচার উপাচারের মাধ্যমে এইদিনটি বিষেষ উপলক্ষটি উদযাপন করতে একত্রিত হন।
মহাশিবরাত্রি উদযাপনের বিবর্তন-
শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে, মহাশিবরাত্রি উদযাপন পরিবর্তিত হতে হতে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপটের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিয়েছে এবং এর মূল আধ্যাত্মিক ভাব ধরে রেখেছে। যদিও উপবাস, শিবের কাছে প্রার্থনা এবং অভিষেক (লিঙ্গ স্নানের রীতি) করার মতো ঐতিহ্যবাহী আচার-অনুষ্ঠানগুলি মহাশিবরাত্রির কেন্দ্রবিন্দুতেই রয়ে গেছে।
প্রযুক্তির উন্নয়নের সময় মহাশিবরাত্রি উদযাপন-
প্রযুক্তির আবির্ভাবের ফলে ভক্তরা ভার্চুয়ালভাবে মহাশিবরাত্রি উদযাপনে অংশগ্রহণ করেছেন। সরাসরি সম্প্রচারিত অনুষ্ঠান ও ভার্চুয়াল দর্শনের মাধ্যমে বর্তমানে মহাশিবরাত্রি উদযাপন করছেন ভক্তরা। মহাশিবরাত্রির শুভ দিনে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ভক্তরা মেতে ওঠেন আনন্দে এবং সকলে একসঙ্গে শিবের কাছে প্রার্থনা করেন।
Zee ২৪ ঘণ্টার সব খবরের আপডেটে চোখ রাখুন। ফলো করুন Google News
মহাশিবরাত্রি কেন পালিত হয়?
পুরাণেও আমরা মহাশিবরাত্রি কথা পাই। এর প্রধান একটি কারণ দেবী পার্বতীর সঙ্গে শিবের বিবাহ উদযাপন করা। হিন্দু পৌরাণিক কাহিনী অনুসারে, শিব এবং পার্বতীর মিলন অর্থাৎ শিবশক্তির মিলন। মহাশিবরাত্রি উদযাপনের আরেকটি কারণ অশুভের বিনাশ ঘটিয়ে শুভকে প্রতিষ্ঠা করা। ভক্তরা বিশ্বাস করেন যে ভক্তি ও তপস্যার সঙ্গে মহাশিবরাত্রি পালন করলে সকল বাধা অতিক্রম করা যায়, মনকে অশুচিতা থেকে পরিষ্কার করা যায় এবং আধ্যাত্মিক উন্নতি লাভ করা যায়।
ভারতে, মহাশিবরাত্রি অত্যন্ত উৎসাহভরে পালিত হয়। মহাশিবরাত্রির সবচেয়ে সাধারণ রীতিগুলির মধ্যে একটি হল দিন ও রাত জুড়ে উপবাস এবং ব্রত পালন করা। ভক্তরা বিশ্বাস করেন যে মহাশিবরাত্রিতে উপবাসের মাধ্যমে শরীর ও মনকে পবিত্র করা যায়, যা তাদের সঙ্গে ঈশ্বরের আরও গভীরভাবে সংযোগ স্থাপন করা যায়। ভারতে মহাশিবরাত্রি উদযাপনের আরেকটি উল্লেখযোগ্য দিক হল অভিষেক, দুধ, মধু, জল এবং অন্যান্য পবিত্র পদার্থ দিয়ে শিব লিঙ্গকে স্নান করানো। ভক্তরা ভগবানের উদ্দেশ্যে নিবেদিত করেন এবং তাঁর থেকে আশীর্বাদ কামনা করেন।
উত্তর প্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ এবং মহারাষ্ট্রের মতো রাজ্যগুলিতে, মহাশিবরাত্রি জাঁকজমকের সঙ্গে উদযাপিত হয়। বারাণসী, হরিদ্বার এবং নাসিকের মতো শহরগুলিতে অত্যন্ত ধুমধাম করে পালন করা হয় মহাশিবরাত্রির রাত। এছাড়াও অনেক জায়গায় এই শিবরাত্রি উপলক্ষ্যে মেলা হয় এবং নানান সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও হয়ে থাকে। কিছু কিছু জায়গায় এই দিনে শিব-পার্বতীর নামসংকীর্তন করা হয়।
আরও পড়ুন: Maha Shivratri 2025: কবে শিবরাত্রি? কখন পড়ছে চতুর্দশী? জেনে নিন কী কী দ্রব্যে কী ভাবে শিবের আরাধনা করবেন...
মহাশিবরাত্রির আধ্যাত্মিক তাৎপর্য -
মহাশিবরাত্রির অন্যতম প্রধান আধ্যাত্মিক তাৎপর্য হল আত্ম-উপলব্ধি এবং পরমত্মার সঙ্গে এর সম্পর্ক স্থাপন। মহাশিবরাত্রি ভক্তদের মন ও হৃদয়কে পবিত্র করে। এই ধ্যান নেতিবাচক প্রবণতাকে দূর করে এবং অহংকারপূর্ণ আকাঙ্ক্ষাগুলিকে ত্যাগ করতে সাহায্য করে। মহাশিবরাত্রির উপবাস কেবল একটি শারীরিক কসরত নয়, এরফলে আত্মনিয়ন্ত্রণও দৃঢ় হয়ে ওঠে। অনেকে মনে করেন মহাশিবরাত্রি পালনের ফলে পুনর্জন্ম হয় না। এই মহাশিবরাত্রিতে নটরাজরূপে শিব নৃত্যকরেন যাকে শিবের তাণ্ডবও বলা হয়।
মহাশিবরাত্রি কীভাবে পালিত হয়?
মাঘ বা ফাল্গুন মাসের (সাধারণত ফেব্রুয়ারি বা মার্চ নাগাদ) কৃষ্ণপক্ষের ১৪তম দিনে মহাশিবরাত্রি পালিত হয়। এই রাতে ভক্তরা আশীর্বাদ এবং শুদ্ধি অর্জনের জন্য উপবাস, ধ্যান এবং বিভিন্ন আচার-অনুষ্ঠান করে থাকেন। শিবলিঙ্গে বিশেষ প্রার্থনা এবং অভিষেকের (ধর্মীয় স্নান) মাধ্যমে মহাশিবরাত্রি পালন করা হয়। ভক্তরা শিব লিঙ্গে বেলপাতা, দুধ, মধু এবং জল নিবেদন করেন সকল ভক্তরা। মহাশিবরাত্রির সময় পঞ্চাক্ষর মন্ত্র "ওঁ নমঃ শিবায়" জপ করার তাৎপর্য অপরিসীম। বিশ্বাস করা হয় যে এই মন্ত্রটি উচ্চারনের মাধ্যমে পুন্যার্জন করা যায়।
'হর হর মহাদেব'
(দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির টাটকা খবর, আপডেট এবং ভিডিয়ো পেতে ডাউনলোড-লাইক-ফলো-সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের App, Facebook, Whatsapp Channel, X (Twitter), Youtube, Instagram পেজ-চ্যানেল)