Exclusive: একুশে তৃণমূলের পোক্ত ডিফেন্স ভাঙতে বিজেপির ছক ৪-২-৪
২০২১ সালের লক্ষ্যে পৌঁছতে বিজেপির ছক ৪-২-৪।

অঞ্জন রায়
ভারতীয় ফুটবলের মক্কা কলকাতা। মোহনবাগান-ইস্টবেঙ্গল নিয়ে এখনও বঙ্গ সমাজের আবেগ বিরামহীন। ২০২১ সালে নবান্ন-জয়ে 'সব খেলার সেরা বাঙালির তুমি ফুটবল'-কেই পাথেয় করল বিজেপি। একেবারে ফুটবলের রণনীতিতে তৈরি হয়েছে গেরুয়া শিবিরের সেরা একাদশ। গোল করার পাশাপাশি জোর দেওয়া হয়েছে রক্ষণেও। দল পরিচালনায় কোচ যেমন থাকছেন, তেমন রয়েছে সাপোর্ট স্টাফরা।
কলকাতা ময়দানে 'ডায়মন্ড সিস্টেম' এনে তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন অমল দত্ত। সেটা ছিল ৩-২-৩-২ ছক। বিজেপির ছক ৪-২-৪। নয়ের দশকে ইউরোপে খেলা হত ৪-৪-২ ছকে। তারপর আসে 'ডায়মন্ড সিস্টেম'। বিজেপির রাজনীতির ময়দানে রক্ষণেই বেশি জোর দেওয়া হয়েছে। মিড ফিল্ডে দু'জন। আক্রমণে থাকছেন দিলীপ ঘোষ, মুকুল রায়, স্বপন দাশগুপ্ত ও অনির্বাণ গঙ্গোপাধ্যায়। দিলীপ ঘোষ রাজ্য বিজেপির সভাপতি। তাঁর নেতৃত্বেই পশ্চিমবঙ্গে প্রথমবার লোকসভা ভোটে ১৮টি আসন পেয়েছে মোদী-শাহের দল। লোকসভা ভোটের আগে সৌমিত্র খাঁ, অর্জুন সিং, নিশীথ প্রামাণিকদের দলে টানার কৃতিত্ব মুকুল রায়ের। তার ফলও মিলেছে। স্ট্রাইকিংয়ে ২ জন পাক্কা রাজনীতিকের সঙ্গে ভারসাম্য রাখতে শিক্ষিত ও পরিশীলিত মুখ রাখা হয়েছে। স্বপন দাশগুপ্ত বিজেপির রাজ্যসভার সাংসদ। আর অনির্বাণ গঙ্গোপাধ্যায় শ্যামাপ্রসাদ গবেষণা কেন্দ্রের দায়িত্বে। শহুরে ও শিক্ষিত বাঙালি ভোটারদের নিয়ে বছর দুয়েক কাজ করছেন স্বপন ও অনির্বাণ।
আরও পড়ুন- Exclusive: তথাগতর পর রাজ্যপাল হচ্ছেন আর এক বাঙালি বিজেপি নেতা
মাঝ মাঠে বল পাসিংয়ে রাখা হয়েছে সঙ্ঘের জিষ্ণু বসু ও রন্তিদেব সেনগুপ্তকে। জিষ্ণু বসু রাজ্যে সঙ্ঘের পরিচিত মুখ। আর সাংবাদিক তথা সঙ্ঘের কাছের লোক রন্তিদেববাবু লোকসভা ভোটে বিজেপির টিকিটে দাঁড়িয়েছিলেন হাওড়ায়।
রক্ষণে কোনওরকম ঝুঁকি নিতে নারাজ বিজেপি। সে কারণে অভিজ্ঞতায় জোর দেওয়া হয়েছে। ফুটবল মাঠে যেভাবে দেশি-বিদেশি ফুটবলার মিলিয়ে সাজানো হয় 'প্লেয়িং ইলেভন'। সেভাবেই রক্ষণে বিজেপির জাতীয় সম্পাদক তথা প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি রাহুল সিনহার সঙ্গে থাকছেন কেন্দ্রীয় নেতারা। কৈলাস বিজয়বর্গীয়, শিবপ্রকাশ ও অরবিন্দ মেননরা সামলাবেন রক্ষণ। রাজ্যের সংগঠন সাধারণ সম্পাদক সুব্রত চট্টোপাধ্যায় থাকবেন গোলকিপিংয়ে।
আরও পড়ুন- Exclusive: শোভন তৃণমূলে ফিরলে বিজেপিতে আসতে পারেন স্ত্রী রত্না? জোর জল্পনা
ক্রিকেটে অধিনায়কই শেষ কথা। ফুটবলে ম্যানেজার বা কোচই খেলাকে পরিচালনা করেন। প্রদীপ যোশী ও ভাগাইয়াজি-র উপরে পড়েছে সেই দায়িত্ব। দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে ক্ষেত্রীয় প্রচারক হয়ে পশ্চিমবঙ্গে সংগঠনের কাজকর্ম দেখছেন প্রদীপ যোশী। আর সুরেশ ভাগাইয়াজি যোশী আরএসএসের সাধারণ সম্পাদক।
১১ জনকে সময়ে সময়ে সহযোগিতা করার জন্য 'সাপোর্ট স্টাফ'-এর ভূমিকায় থাকছে আরএসএস, বজরং দল, বিশ্ব হিন্দু পরিষদ, হিন্দু জাগরণ মঞ্চ-সহ রাজ্যে সক্রিয় আরএসএসের ৩৭টি নথিভূক্ত সংগঠন। থাকছে আরও কিছু সংগঠন। রে রে করে বিপক্ষের রক্ষণকে ভেঙে ২০০ (আসন) গোল করাই এখন বিজেপির টার্গেট।
লোকসভা ভোটে হতশ্রী ফলের পর হাত গুটিয়ে নেই তৃণমূলও। মেন্টর হয়ে এসেছেন নির্বাচনী রণনীতিকার প্রশান্ত কিশোর। তৃণমূলের স্ট্রাইকার একজনই - মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনিই সমালোচিত, আবার তিনিই বন্দিত। অনেকেই মনে করছেন, একার দমে বিপক্ষের ডিফেন্ডারদের ধোঁকা দিয়ে গোল করে ফেলার মতো নেতা নেই বিজেপিতে। তবে টিম গেমে ভরসা করছে বিজেপি। তারা বলছে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অতীত গরিমা আর নেই। টিম গেম নাকি একার কৃতিত্ব- কে কাকে গোল দেবে? উত্তর দেবে ২০২১।