ঘটনার ঘনঘটায় চক্কর আ গয়ি
ছবির নাম- ঘনচক্কর রেটিং- ***
শর্মিলা মাইতি
ছবির নাম- ঘনচক্কর
রেটিং- ***
দুষ্মন্ত থেকে উত্তমকুমার, অমিতাভ, ধর্মেন্দর থেকে আমির খান.. সবাইকে ইয়ারদাঁশ খুইতে দেখেছি। আবার টাইমলি ওয়াপস আসতেও দেখেছি। তবে সেসব ছিল টাইমকলের মতো নিয়মমাফিক। ঠিক সময়ে সব মনে পড়ে যাওয়ায় সব এলোমেলো গিঁট্টু খুলে যেত, সব সমস্যার সমাধান হয়ে দিনের আলো ফটফট করত। দর্শক একচোখে জল আরেক চোখে হাসি নিয়ে হল থেকে বের হত।
ঘনচক্কর লিখতে গিয়ে রাজকুমার গুপ্তা একশোটা টুইস্ট এনেছেন কাহিনিতে। এমনিতেই স্মৃতিভ্রংশ ব্যাপারটা যে কোনও ধরনের সিনেমায় বেশ অনেকগুলো অপশন খুলে দেয়, গল্পকে ছিপে ধরে বেশ তুর্কিনাচন নাচিয়ে খেলানো যায়। হারানো সুর থেকে মেমেন্টো থেকে গজিনি, যে-কোনও দেশের যে-কোনও চিত্রনাট্যে বেশ লোমহর্ষক ও আনপ্রেডিক্টেবল মোড় এসেছে মেমরি ফেল মেরেছে বলেই না! পরিচালক এই গল্পেও বেশ কী-হয়-কী-হয় গুড়গুড়ানির রাশটা টেনে রাখতে পেরেছেন। ঘনচক্করের নায়ক স্মৃতি হারিয়েছেন। এবং সেটি এক মোক্ষম সময়ে। ব্যাঙ্ক লুঠ করে ৩৫ কোটি টাকা সযত্নে গচ্ছিত রাখার পর অ্যাক্সিডেন্টে তাঁর মাথা গিয়েছে। তার দুই সঙ্গী রাজেশ শর্মা ও নমিত দাশ পড়েছেন ফাঁপরে। সাত দিনের কাউন্টডাউন স্মৃতি না ফিরলে ব্যাটাকে এ পৃথিবী থেকে সরিয়ে দিতে হবে।
ইমরান-বিদ্যা বালান জুটিকে এখানে বেশ অন্যরকমভাবে পাওয়া গেল ডার্টি পিকচারের পর। বিয়ের পর বিদ্যা বালানের প্রথম রিলিজ, তাও সেই প্রোডাকশন হাউজ থেকে যেখানকার কর্ণধার স্বয়ং তাঁর পতিদেব! এমতাবস্থায়, যে-কোনও অভিনেত্রীর কাছে বড়সড় চ্যালেঞ্জ। কহানি-তে বিদ্যাকে যেমন দেখেছিলেন, তার থেকে নিজের ইমেজ একেবারে বদলে ফেলে উত্পটাং ফ্যাশন-ম্যানিয়াক পঞ্জাবি গৃহবধূর চরিত্র একেবারে গায়ে সাঁটিয়ে ফেলেছেন। মনেই হচ্ছে না যে ইনিই এক সময়ে বিদ্যা বাগচি আর সিল্ক ছিলেন। ম্যাজিকের মতো বদলে ফেলেছেন তাঁর অ্যাকসেন্টও। শুধু একটাই আফশোস, গল্পই তাঁকে ছাড়িয়ে ফিনিশ লাইন ছুঁয়ে ফেলেছে। সবার শেষে অভিনেত্রী বিদ্যাকে মনে ধরে নিয়ে যাওয়া গেল না যে! পরের ছবির অপেক্ষায় থাকতেই হবে।
ইমরান হাশমি বরাবরই কাজে করে দেখান। বলিউড তাঁকে নিয়ে মাথায় তুলে নাচল কি না নাচল, তাতে তাঁর কিছুই যায় আসে না। পরের পর ছবিতে যে তিনি নিঃশব্দ-নিভৃতে এক নায়ককে লালন-পালন করে বড় করে তুলছেন, সেটা এই ছবিতেও অনুভূত হয়। চুমু খাওয়া ছাড়াও যে অন্যান্য স্কিলস আছে তাঁর এটা জানার আর বোঝার সময় এসে গিয়েছে।
রাজকমার গুপ্তা ছবির শুরুতেই নায়কের মাথার পেছন থেকে শট নিয়েছেন। সত্যজিত্ রায়ের নায়ক ছবিকে মনে পড়ায়, ব্যস ওইটুকুই, তার পর থেকে আপন গতিতে গল্প এগোয়। ইন্টারভ্যালের দাঁড়িটাও বেশ মোক্ষম সময়ে। প্রত্যাশার মইটা মগডালে তুলে। সেতুর ক্যামেরা এখানে অপশন কমই পেয়েছে। গজিনির রেফারেন্স টানা হয়েছে মজাদার সিকোয়েন্সে। নমিত দাশ ও রাজেশ শর্মাকে আলাদা-আলাদাভাবে ভাল লাগলেও, জুটি হিসেবে তেমন উচ্চাঙ্গের মনে হয়নি। ভাঁড়ামির প্রবণতাই বেশি। দ্বিতীয়ার্ধেও ঘনচক্কর চলতে থাকে। এমন জট পাকায় যে দর্শক চক্কর খেয়ে পড়েও যেতে পারেন।
শেষটা বলে দেওয়া নিয়ম নয়। গুরুজনের কথা শুনে চলতে বিদ্যাসাগর মশাই বহুদিন আগেই লিখে গিয়েছেন শিশুপাঠ্য বইতে। সেখানেই ক্লু পেয়ে যাবেন।