বসু পরিবার ফিল্ম রিভিউ: ক্ষতকে বুকে লুকিয়ে আভিজাত্যের ছবি আঁকল 'বসু পরিবার'
রণিতা গোস্বামী
রণিতা গোস্বামী
সময়ের সঙ্গে বদলে যায় অনেক কিছুই। যৌথ পরিবারগুলি ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে যায়। তবুও কোনও এক ফাঁকতালে টুকরো টুকরো পরিবারগুলি কাছাকাছি এলে ভেসে ওঠে অনেক স্মৃতি। অতীতের গৌরব, বৈভব, আভিজাত্য, প্রাচুর্যে হারিয়ে যেতে ভালো লাগে। যদিও সেই বৈভবেই কোথায় যেন আলগোছে লেগে থাকা জমাট বাঁধা দুঃখে কখনও কখনও হোঁচট খেতে হয়। পরিচালক সুমন ঘোষের 'বসু পরিবার' তেমনই এক অভিজাত পরিবারের ক্ষয়িষ্ণু বৈভবের গল্প।
জেমস জয়েসের লেখা 'ডাবলিনার্স' বইয়ের 'দ্যা ডেথ' গল্পটির অনুপ্রেরণায় 'বসু পরিবার' বানিয়েছেন পরিচালক সুমন ঘোষ। যদিও ছবিটির সঙ্গে মূল গল্পের বিশেষ মিল নেই। গল্পটি নিজের মতো করে বাংলার পটভূমিতে সাজিয়ে গুছিয়ে নিয়েছেন পরিচালক তথা গল্পকার, চিত্রনাট্যকার সুমন ঘোষ। এখানে কোথাও আইরিশ ছোঁয়া নেই। রয়েছে অতিনাটকীয়তা বিহীন বাঙালির পরিচিত ফ্যামিলি ড্রামা। হলফ করে বলতে পারি যে ছবিটি দেখতে দেখতে আপনিও প্রণবেন্দু, মঞ্জরী, রাজা, টুবলু,তনু, পোকা, রশনির সঙ্গে হারিয়ে যাবেন বসু পরিবারের প্রাচুর্যে ভরা অতীতে। আবার বসু পরিবারের 'নতুন বৌমা' রশনির সঙ্গে পায়ে পায়ে হেঁটে প্রা ধামাচাপা পড়ে থাকা সেসব অতীতের কোনও এক গভীর ক্ষত-য় ধাক্কা খেতে হবে।
আরও পড়ুন-'কণ্ঠ'র পোস্টারে ডাকছেন ভূতের রাজা
আরও পড়ুন-উজবেকিস্তানে মুক্তি পেল দেবের হৈচৈ আনলিমিটেড
ছবির গল্পে দেখা যায়, প্রণবেন্দু-মঞ্জরীর (সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়-অপর্ণা সেন) ৫০ বছরের বিবাহবার্ষিকী উপলক্ষে বহুদিন বাদে এক ছাদের তলায় বসু পরিবারের সদস্যরা। এসে হাজির হয়েছেন প্রণবেন্দু-মঞ্জরীর আদরের মেয়ে মামণি (ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত) ছেলে রাজা (যীশু সেনগুপ্ত) ও তাঁদের নতুন বৌমা রশনি (শ্রীনন্দা শঙ্কর)। এসেছেন মঞ্জরী বড় জা (লিলি চক্রবর্তী) ভাসুরপো টুবলু (শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়) তনু (কৌশিক সেন), পম্পি (সুদীপ্তা চক্রবর্তী) পরিবারের পুরনো বন্ধু তথা মামণির (ঋতুপর্ণা) আদরের পকা (পরাণ বন্দ্যোপাধ্যায়) সহ আরও অনেকেই। ছবির প্রথমটা বহুবছর বাদে ফের ছেলেবেলার পরিচিত, স্মৃতিবিজরিত ঐতিহ্যবাহী জায়গায় একসঙ্গে হওয়ার এক অদ্ভুত আনন্দ, আবেগ সবই ছিল। তবে কৌতুহল বশত অতীত হাতরাতে হাতরাতে নতুন বৌমা রশনির পুরনো রাজবাড়ির দিকে হেঁটে যাওয়াতে গণ্ডগোলটা বাধলো। যত্ন করে সাজিয়ে রাখা 'রয়্যাল ব্লাড'-এর বৈভবে মধ্যে থেকে বেরিয়ে পড়ল ধামাচাপা দিয়ে রাখা গভীর ক্ষত। যা এক লহমায় টলিয়ে দিল বসু পরিবারের প্রত্যেক সদস্যকেই। তবে রহস্যটা ঠিক কী? সেই আঁধার থেকে বের হতে হলে আপনাকে 'বসু পরিবার' দেখতেই হচ্ছে।
তবে একটা কথা হলফ করে বলতে পারি, ছবিটা দেখলেও একটিও বোর হবেন না, বরং আপনিও 'বসু পরিবার'র আভিজাত্য ও আবেগে ভেসে যাবেন। এ ছবিতে দর্শকদের পাওনা পছন্দের সৌমিত্র-অপর্ণার চিরন্তন জুটি। তাঁদেরks শেষবার একসঙ্গে দেখা গিয়েছিল সেই ১৯ বছর আগে 'পারমিতার একদিন' ছবিতে। ছবিতে রয়েছে লিলি চক্রবর্তী, যীশু সেনগুপ্ত, শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়,কৌশিক সেন, ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত, সুদীপ্তা চক্রবর্তী, পরাণ বন্দোপাধ্যায়, শুভাশিষ মুখোপাধ্য়ায় সহ একঝাঁক অসামান্য অভিনেতাকে। যাঁরা সকলেই অনবদ্য। তবে নজর কাড়ে কৌশিক সেনের চরিত্রটি। যে চরিত্রটি আরপাঁচটা মানুষের মধ্যে থেকেও অন্যরকম। যা আপনারা ছবিটি দেখলেই বুঝতে পারবেন।
ছবির গল্পে মন কাড়বে মনোময় ভট্টাচার্যের গাওয়া শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়ের লিপে ভ্রমণ কইও গিয়া গানটি। মনে ছুঁয়ে যাবে বিক্রম ঘোষের মিউজিক। সব শেষে দাগ কাটবে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের নিজের লেখা কিছু বিবরণ। বিশেষ করে ''পঞ্চাশ বছর সময়টা অনেকটা সময়, আবার অনেকটাও নয়।''
বসু পরিবার ছবিটি যে অল্প সময়ের প্রেক্ষাপটে গুছিয়ে বানানো একটি পরিপূর্ণ ছবি তা বলার অপেক্ষা রাখে না। এই ছবিকে ৫এর মধ্যে ৪ দেওয়ায় যায়।
আরও পড়ুন-মহিষাদল রাজবাড়িতে 'বসু পরিবার' এর শ্যুটিং, প্রকাশ্যে ভিডিয়ো