'কল্পনা'র 'উমা' আর নেই, স্মৃতি হিসাবে রেখে গেলেন অমূল্য সৃষ্টি সেই নৃত্যশৈলী
রেখে গেলেন, হাজারো স্মৃতি, নৃত্যকলা ও শৈলী। রয়ে গেল 'শঙ্কর' পরিবারের নৃত্য ঘরানা।
নিজস্ব প্রতিবেদন : একটা যুগের অবসান। ২০২০ কেড়ে নিয়েছে একাধিক শিল্পী, কিংবদন্তিকে। একের পর এক খারাপ খবরে মন যখন ভারাক্রান্ত, ঠিক তখনই আরও একবার মন খারাপ করে দিয়ে শুক্রবার সকাল। এল আরও এক কিংবদন্তির প্রয়াণের খবর। নৃত্যশিল্পী অমলা শঙ্কর আর নেই। গত ২৭ জুনই ১০১ বছর পূর্ণ করেছিলেন বর্ষীয়ান শিল্পী। জন্মদিনের এক মাস পূর্ণ হওয়ার আগেই বিদায় জানালেন পৃথিবীকে। রেখে গেলেন, হাজারো স্মৃতি, নৃত্যকলা ও শৈলী। রয়ে গেল 'শঙ্কর' পরিবারের নৃত্য ঘরানা।
১৯১৯-এর ২৭ জুন অবিভক্ত বাংলার যশোরে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তাঁর প্রতিভার বিচ্ছুরণ ঘটে কৈশোরেই। একবার এক সাক্ষাৎকারে অমলাশঙ্করই জানিয়েছিলেন, উদয় শঙ্করের সঙ্গে যখন তাঁর আলাপ হয়েছিল তখন তিনি ফ্রক পরেন। বয়স মাত্র ১১। প্যারিসের এক অনুষ্ঠানে যোগ দিতে গিয়ে আরও এক কিংবদন্তি উদয় শঙ্করের সঙ্গে আলাপ হয়েছিল তাঁর। সেসময় উদয় শঙ্কর প্যারিসেই থাকতেন। তখন থেকেই উদয় শঙ্করই হয়ে উঠেছিলেন অমলা শঙ্করের নৃত্যের গুরু। তাঁর কাছেই নিয়েছিলেন নৃত্যকলার শিক্ষা। পরবর্তী জীবনে তিনিই আবার হয়ে ওঠেন অমলা শঙ্করের জীবনসঙ্গী।
উদয় শঙ্করের সঙ্গে যখন তাঁর বিয়ে হয়, তখন অমলা শঙ্করের বয়স মাত্র ১৯। সালটা ১৯৪২। সেবছরই আবার জন্ম হয় অমলা শঙ্কর ও উদয় শঙ্করের প্রথম সন্তান আনন্দ শঙ্করের। ১৯৫৫তে জন্ম হয় মমতা শঙ্করের। পরবর্তীকালে দেশে ফিরে আসেন উদয়-অমলা জুটি। যে জুটি পরবর্তীকালে নাচের জগতে বেশ জনপ্রিয়ও হয়ে উঠেছিল।
১৯৪৮ সালে মুক্তি পেয়েছিল উদয় শঙ্করের তৈরি চলচ্চিত্র 'কল্পনা'। যেখানে 'উমা'র চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন অমলা শঙ্কর। সেই ছবিতেই ঠাকুমা অমলা শঙ্করের নাচের একটি অংশ এদিন সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করেছেন নাতনী শ্রীনন্দা শঙ্কর। ভিডিয়োটি শেয়ার করার পর শ্রীনন্দা লিখেছেন, এই ছবির জন্য ১৯৫৭ সাল থেকে যে কপি রাইট ছিল, ৬০ বছর পর তা আর নেই। ২০০৯ সালেই এটির কপি রাইটের সময়সীমা শেষ হয়েছে। প্রসঙ্গত, শুক্রবার ২৪ জুলাই ঠাকুমা অমলা শঙ্করের প্রয়াণের খবর জানিয়েছিলেন শ্রীনন্দাই।
'কল্পনা' প্রশংসিত হয়েছিল দেশ-বিদেশে। এমনকি কান চলচ্চিত্র উৎসবেও প্রদর্শিত হয়েছিল এই ছবি। অমলা শঙ্কর সেসময় যখন কান চলচ্চিত্র উৎসবে যোগ দিয়েছিলেন, তখন তাঁর বয়স খুবই কম। পরবর্তীকালেও অবশ্য তিনি কান চলচ্চিত্র উৎসবে যোগ দিয়েছেন। তবে শুধু 'কল্পনা' নয়। উদয় শঙ্করের ছাত্রী থাকাকালীনই তাঁর সঙ্গে ইউরোপের বিভিন্ন প্রান্তে বহু নাচের অনুষ্ঠানেও পারফর্ম করেছেন অমলা শঙ্কর। মাত্র ১৩-১৪ বছর বয়সেই তাঁর ইউরোপ ভ্রমণের অভিজ্ঞতা নিয়ে একটা বইও লিখেছিলেন কিংবদন্তী এই নৃত্যশিল্পী। 'সাত সাগরের পারে' নামেই ওই বইয়ের জন্য প্রশংসা বার্তা লিখেছিলেন খোদ রবীন্দ্রনাথ, অবনীন্দ্রনাথ ও সুভাষচন্দ্র বসু। যেকথা এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছিলেন উদয় ও অমলা শঙ্করের মেয়ে মমতা শঙ্কর।
প্রসঙ্গত, উদয় শঙ্কর-অমলা শঙ্করের ছেলে আনন্দ শঙ্করের মৃত্যু হয় ১৯৯৯এ। বর্তমানে অমলা শঙ্করের পুত্রবধূ তনুশ্রী শঙ্কর ও মেয়ে মমতা শঙ্করই 'শঙ্কর' পরিবারের নৃত্যকলা ও শিল্পকে বাঁচিয়ে রেখেছেন।